কে অভাবে আর কে স্বভাবে হাত পাতছে তা বোঝা কঠিন

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় ভিক্ষুকের সংখ্যা কতো? ঠিক-ঠিক বলা কঠিন। পরিসংখ্যানও নেই। তবে প্রতিবার পবিত্র রমজানে তথা রোজার মধ্যে চুয়াডাঙ্গায় ভিক্ষুকের সংখ্যা যে হারে বেড়ে যায় তা দেখে দেশে দারিদ্র্য বিমোচনে ন্যূনতম এগুচ্ছে বলে বিশ্বাস করা যায় না। অবশ্য অনেকেরই অভিমত রোজার মধ্যে স্থানীয় ভিক্ষুকদের পাশাপাশি বহিরাগত সিজেনাল ফকিরের আনাগোনা বৃদ্ধি পাওয়ায় চিত্রটা চমকানোর মতো হয়ে ওঠে। এবারও দৃশ্যটা অন্যবারের মতোই।

প্রতিবার পবিত্র রমজানে বহিরাগত ভিক্ষুকদের ভিড় জমে। এদের কেউ কেউ স্কুল-কলেজের বারান্দায় ঠাঁই নিলেও অধিকাংশই রাতে অবস্থান নেয় স্টেশনে। জনশ্রুতি আছে, রোজার মধ্যে বহিরাগত যেসব ভিক্ষুককে দেখা যায়, তাদের অধিকাংশেরই পারিবারিক অবস্থা বেশ স্বচ্ছল। সিজেনাল হাতপাতা বাণিজ্যটা তথা রোজার মধ্যে জাকাতের টাকা শাড়ি নেয়া ওদের স্বাভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এবারের রোজায় চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে বহিরাগত ভিক্ষকদের আগমন চিত্র সংগ্রহ করতে গতকাল পথে পথে ঘুরে পাওয়া গেছে রকমারি চিত্র। শাদা চোখে দেখলে মনে হবে আনুমানিক ৭০ বছর বয়সী ব্যক্তির দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক। তাকাচ্ছেন, মিটকি মারছেন। অথচ বললেন, অন্ধ। বাদ জোহর। তাকে দেখা গেল আনুমানিক ৯ বছর বয়সী মেয়েকে সাথে নিয়ে চুয়াডাঙ্গা জান্নাতুল মওলা কবরস্থানের সামনে দাঁড়িয়ে ভিক্ষা করছেন। মসজিদের সামনের নামাজির ভিড় কমলে ভিক্ষুককের সাথে কথা হয়। তিনি প্রথমে তার সাথে থাকা কন্যা শিশুকে নাতি বলে পরিচয় দেন। অবশ্য শিশু সাথে সাথেই বলেন, উনি আমার চাচা হন। বাড়ি কোথায়? গোপালগঞ্জের গোপালপুরে। গোপালগঞ্জ থেকে ভিক্ষা করতে চুয়াডাঙ্গায় এলেন কবে? বৈডাঙ্গায় থাকি। এইতো সেদিন এসেছি। এরপর কথা না বাড়িয়ে হাঁটতে শুরু করেন স্টেশনের দিকে। কৌশলে পিছু নেয়া হলে দেখা যায়, স্টেশন প্লাটফর্মের কংক্রিটের কেদারায় আয়েশ করে শুয়ে থাকা আনুমানিক ৩৫ বছর বয়সী নারীর নিকট গেলেন ওরা। তাদের কথা শুনে বোঝা গেলো আয়েশ করে শুয়ে থাকা নারী ওই ভিক্ষুকের স্ত্রী। ভিক্ষাবৃত্তি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হলে কৌশলে এড়িয়ে যান ওই নারী। পুরুষ নিজেকে মওলানা বলে দাবি করেন। অন্ধ হওয়ার কারণে ভিক্ষা করছি বলেও জানালেন তিনি। এক পর্যায়ে বললেন, আর চুয়াডাঙ্গায় থাকছি না। নওগাঁয় যাচ্ছি। ওখানে দান-জাকাত ভালোই পাওয়া যায়।

ভিক্ষুক তার পরিচয় দিতে গিয়ে নাম বলেছেন মোহাম্মদ আলী খান। স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন। গতকাল চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের প্রায় প্রতিটি সড়কে, প্রতিটি বিপণী বিতানেই অসংখ্য নারী-পুরুষ শিশু কিশোর ভিক্ষুককে ভিক্ষা করতে দেখা গেছে। অথচ দেশে ভিক্ষাবৃত্তি আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এ আইনের খবর এলাকার অভাবী ভিক্ষুক বা স্বভাবী ভিক্ষুকদের ক’জনই রাখে? যদিও সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার পল্লি সাহেবপুরের পেশাদার স্বভাবী ভিক্ষুকদের অনেকেই ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে পরিশ্রমী হয়ে উঠেছেন। ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে সাহেবপুরের সাহেব শূন্যতা কাটানোর স্বপ্ন দেখছেন তারা।