কোনো চাপের কাছে মাথা নত করবো না

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ়কণ্ঠে বলেছেন, কোনো চাপের কাছে তিনি মাথা নত করেননি এবং ভবিষ্যতেও করবেন না। তৃতীয় বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের পর বঙ্গভবনের সবুজ চত্বরে দাঁড়িয়ে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাই গণতন্ত্রের পথে থাকবেন, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। গণতন্ত্র সুরক্ষায় যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন, আমরা তা করবো। আমরা চাই বাংলাদেশে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক। শেখ হাসিনা বলেন, এ দেশের মালিক জনগণ। জনগণের ভাগ্য উন্নয়নই আমাদের মূল লক্ষ্য। পুনরায় জনগণের সেবা করার সুযোগ পাওয়ায় পরম করুনাময় আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী হওয়া বড় কথা নয়, জনগণের জন্য কাজ করাই হচ্ছে বড় কথা। আমরা উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে চাই। বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। আর ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বিশ্বসভায় বাংলাদেশ মা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের আগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বারবার সংলাপের আহ্বান জানালেও তিনি সাড়া দেননি। উল্টো আল্টিমেটাম দিয়ে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের পথ বেছে নেন। তাদের সন্ত্রাস-নাশকতায় দগ্ধ হয়ে অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। নির্বাচনের পরও তারা সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন করেছে। যা খুবই দুঃখজনক। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও নৈরাজ্যের পরিবর্তে স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকুক, এটাই আমরা চাই। আমরা আশা করি, বিএনপি নাশকতা ও জঙ্গিবাদী পথ পরিহার করে গণতন্ত্রের পথে আসবে। সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার সংখ্যালঘুদের সব ধরনের সহযোগিতা ও নিরাপত্তা প্রদানের আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী।

সদ্য অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সকলেই সমর্থন করবে। আমাদের কূটনৈতিক সাফল্য আছে। নির্বাচন সম্পন্ন করতে যেসব বন্ধু রাষ্ট্র সহযোগিতা করেছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি বিরোধীদলের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে চান। বিরোধীদলের সদস্যরা মন্ত্রিসভায় থাকায় অভিনব ধরনের মন্ত্রিসভা হলো কি-না এমন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঐকমত্যের সরকার ১৯৯৬ সালেও হয়েছিলো। সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারাই সবাইকে নিয়ে চলতে বলেন। আবার সবাইকে নিয়ে চলতে গেলেও প্রশ্ন তোলেন।

আগামী জুনের মধ্যে পদ্মা সেতুর মূল কাজ শুরু হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যা আছে, তাতে পদ্মা সেতুর মূল নির্মাণ কাজ শুরু করা কঠিন হবে না। জুনের মধ্যে কাজ শুরু হবে। জামায়াতের রাজনীতি বাংলাদেশ বন্ধ করার ব্যাপারে সরকার কোনো উদ্যোগ নেবে কি-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে মামলা চলছে। আদালতই সিদ্ধান্ত নেবে। সরকারের সামনে এখন দুই বিরোধীদল। একটি সংসদের ভেতরে এবং আরেকটি সংসদের বাইরে রাজপথে। দুই বিরোধীদলকে কীভাবে মোকাবেলা করবে সরকার, একজন সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিরোধীদলকে মোকাবেলা করতে নয়, তাদের সহযোগিতা চাই। তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী নির্বাচনে না এসে যে ভুল করেছেন তা উনি এখন বুঝতে পারছেন। আমি জানি না উনাদের কে এমন পরামর্শ দেন? তবে উনি (খালেদা জিয়া) নিশ্চয়ই ভুল বুঝতে পেরেছেন। তবে দুঃখের বিষয়, গণতন্ত্রের ভিত্তি মজবুত করতে তাদের যে দায়িত্ব তারা তা পালন করেনি। যদি নির্বাচনে আসতো, তবে গণতন্ত্রের ভিত্তি আরও দৃঢ় হতো।

একজন সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনি বিএনপির সমর্থন চাইবেন কি-না। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকলের সহযোগিতা চাই। তবে জনগণের স্বাভাবিক জীবনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী ধ্বংসাত্মক কাজ বন্ধ করতে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি আবারো বলেন, যেকোনো আলোচনার আগে বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ এবং সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার চলছে। বিচারের রায় হবে এবং তা কার্যকর করা হবে। মন্ত্রিসভা নিয়মিত পুনর্গঠনের আভাস দেন শেখ হাসিনা। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রয়োজনে ছিটমহল ও তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয় নিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর সাথে তিনি কথা বলবেন। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে সমস্যা সমাধানে আমরা সহযোগিতার ভিত্তিতেই এগিয়ে যেতে চাই।