কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের দ্বিবার্ষিক নির্বাচন সম্পন্ন : আবারো তৈয়ব সভাপতি ও মাসুদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত

 

 

দর্শনা অফিস: অবশেষে সকল জল্পনা-কল্পনা ও অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের দ্বিবার্ষিক নির্বাচন। কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে আবারো তৈয়ব আলী সভাপতি ও মাসুদুর রহমান সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন। কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের বহুল আলোচিত এ নির্বাচনের আগের রাতে তৈয়ব-মাসুদ প্যানেল ঘোষণা ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। আকস্মিক এ প্যানেল ঘোষণা নিয়ে গোটা এলাকায় ছিলো ব্যাপক আলোচনা। সকল যল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটলো সন্ধ্যার পরপরই। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষণার পরেই উল্লাসে মেতে উঠে তৈয়ব-মাসুদের নেতাকর্মীরা। ফুলেল মালায় মালায় নির্বাচিত দু নেতার গলা ভরিয়ে darsana-picদিলো নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।

প্যানেল ঘোষণার পরও ভোটারদের মধ্যে চাপা গুঞ্জন থাকলেও শেষ পর্যন্ত কোনো গুঞ্জনই টেকেনি। অবশেষে তৈয়ব ও মাসুদ পুনরায় নির্বাচিত হলেন। গতকাল শনিবার সকাল ৯টা থেকে কেরুজ হাই স্কুলের ৭ কক্ষের ১০ বুথে গোপন ব্যালোটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। দীর্ঘদিনের পুরোনে অভ্যাসের ব্যাতিক্রম হয়নি এবারো। সকাল ৯টা থেকে ভোট শুরু হলেও দুপুর ২টা অবধি ভোট কেন্দ্রে গোটা ৫০ ভোট ছাড়া কোনো ভোট পোল হয়নি। স্ব-স্ব সংগঠনে মহ্নভোজ সেরে ২টার পর থেকে প্রতিজ্ঞা করে ভোট কেন্দ্রে ভিড় জমাতে থাকে ভোটাররা। বিকেল ৩টার মধ্যেই ভোট কেন্দ্রের অভ্যান্তরে প্রবেশ করে ভোটাররা। কেন্দ্রে প্রবেশ করলেও ভোট দেয়ার মহড়া শুরু হয় খানেক পরে। বিকেল সাড়ে ৫টার মধ্যে ভোট গ্রহণ শেষ করা হয়েছে। ১ হাজার ১৪০ ভোটের মধ্যে পোল হয়েছে ১ হাজার ১৩৬ ভোট। স্মরণকালে এই প্রথম কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের কোনো নির্বাচনে ৪ ভোট পোল হলো না। এ নির্বাচনে সভাপতি পদে তৈয়ব আলী (চাঁদতারা) প্রতীকে ৫৩১ ভোট পেয়ে আবারো নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ফিরোজ আহম্মেদ সবুজ (হারিকেন) প্রতীকে ৩৫১, মোস্তাফিজুর রহমান (মই) প্রতীকে ২৪৫ ও সাবেক সভাপতি হাফিজুল ইসলাম (আনারস) প্রতীকে পেয়েছেন মাত্র ২ ভোট। এ পদে ৭ ভোট বাতিল হয়েছে। সহসভাপতি ফারুক আহম্মেদ (মাছ) প্রতীকে ৪২৪ ভোট পেয়ে ফের নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ¦ী সাবেক সহসভাপতি রেজাউল করিম (তলোয়ার) ৩৬৯ ও ফুলফিকার হায়দার (মোড়গ) প্রতিকে ৩০৪ ভোট পেয়েছেন। বাতিল হয়েছে ৩৯ ভোট। সাধারণ সম্পাদক পদে মাসুদুর রহমান (বাইসাইকেল প্রতীকে) ৬৬৭ ভোট পেয়ে আবারো ৬ষ্ঠ বারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম প্রিন্স (ছাতা) প্রতীকে ৪১৭, নবাগত প্রার্থী ইসমাইল হোসেন (গাড়িরচাকা) ২৫ ও আতাউর রহমান (দেয়ালঘড়ি) প্রতীকে ৬ ভোট পেয়েছেন। বাতিল হয়েছে ২১ ভোট। যুগ্মসম্পাদক পদে খবির উদ্দিন (তালাচাবি) প্রতীকে ৩৮৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাবুল আক্তার-পরিবহন (ফুটবল) ২৮৪, একরামুল হক খলিল (টেবিল) ১৭৯, বাবুল আক্তার-উৎপাদন (খেজুরগাছ) ১১৫, ইদ্রিস আলী (হাতি) ৭৮ ও মহিদুল ইসলাম শাহীন (কাপ-পিরিচ) প্রতিকে ৫৬ ভোট পেয়েছেন। এ পদে বাতিল ভোটের সংখ্যা ৪০। শুরুতে ৭ ওয়ার্ডের মধ্যে ৬ ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থীদের ভোট গণনা শুরু হয়। ৬ ওয়ার্ডে ৮ জন সদস্য পদের বিপরিতে প্রার্থী ছিলো ১৯ জন। একে একে ৬ ওয়ার্ডের ফলাফল ঘোষণা করেছে নির্বাচন পরিচালনা পর্ষদ। ৭ ওয়ার্ডের ৯ পদে ১ নং ওয়ার্ডের আয়ূব আলী সন্টু বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ২ নং ওয়ার্ডে বাবর আলী (ডাব) প্রতীকে ১০৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার একমাত্র নিকটতম প্রতিদ্বন্দ¦ী ইদ্রিস আলী (বেলচা) প্রতীকে পেয়েছেন ৩৪ ভোট। ৩ নং ওয়ার্ডে শরিফুল ইসলাম (টর্চলাইট) প্রতীকে ১০৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ¦ী আবদুল কুদ্দুস (ডাব) ৩১, শফিকুল ইসলাম (হাতুড়ি) ২৯ ও সাংবাদিক ইয়াছির আরাফাত মিলন (আখেরআটি) প্রতীকে পেয়েছেন ১৫ ভোট। এ ওয়ার্ডে ১ ভোট বাতিল হয়েছে। ৪ নং ওয়ার্ডে ইয়ামিন হক (আখেরআটি) প্রতীকে ৭০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার একমাত্র নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মতিয়ার রহমান (ডাব) প্রতীকে পেয়েছেন ৬৫ ভোট। ৫ নং ওয়ার্ডে এসএম কবির (আখেরআটি) ৪০, সাইফুদ্দিন (ডাব) ৪০ ও সাহেব আলী শিকদার (বেলচা) প্রতীকে পেয়েছেন ৩৩ ভোট। ২ জন প্রার্থী ৪০ করে ভোট পাওয়ায় এ ওয়ার্ডে লটারীর মাধ্যমে সদস্য নির্বাচিত করা হবে। ৬ নং ওয়ার্ডে ২ জন নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচিত হলেন হাফিজুর রহমান (বেলচা) প্রতীকে ১৩০ ভোট ও গোবিন্দু কুমার হালদার (হাতুড়ী) প্রতীকে ১০৫ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ¦ীদের মধ্যে মজিবর রহমান (ডাব) প্রতীকে ৯৩ ও মতিয়ার রহমান (হাতুড়ী) প্রতীকে ৫৯ ভোট পেয়েছেন। এ ওয়ার্ডে ২ ভোট বাতিল হয়েছে। ৭ নং ওয়ার্ডে নির্বাচিত হয়েছেন ২ জন। নির্বাচিত হলেন, আমিনুল ইসলাম (হাতুড়ী) প্রতীকে ১১৫ ভোট ও আকরাম আলী (কাঁঠাল) প্রতীকে ৯৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের নিকটতম darsana-pic-3প্রতিদ্বন্দ¦ীরা হলেন, মফিজুর রহমান (বেলচা) প্রতীকে) ৮৩ ও আক্তারুল ইসলাম (ডাব) প্রতীকে পেয়েছেন ৪০ ভোট। এ ওয়ার্ডে ১ ভোট বাতিল হয়েছে। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির দায়িত্বে ছিলেন, চেয়ারম্যান, চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) মোশারফ হোসেন, সদস্য সচিব, মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আকুল হোসেন, সদস্য আক্রাম হোসেন শিকদার, আব্দুল ফাত্তাহ ও ফিদা হাসান বাদশা। নির্বাচন চলাকালীন ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস, চুয়াডাঙ্গা ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছুফিউল্লাাহ, কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবিএম আরশাদ হোসেন, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রফিকুল ইসলাম, দামুড়হুদা থানার অফিসার ইনচার্জ আবু জিহাদ মো. ফকরুল ইসলাম, ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আ. খালেক, চুয়াডাঙ্গা গোয়েন্দা শাখার ওসি কামরুজ্জামান। সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তরিকুল ইসলাম ও দর্শনা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইন্সপেক্টর শোনিত কুমার গায়েন।