কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচন শনিবার

 

প্রার্থীদের নয়া কৌশলে ভোটের মাঠ গরম : চলছে দল বদলের পালা

দর্শনা অফিস: কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচনের মাঠ খানেকটা হঠাৎ করেই গরম হয়ে উঠেছে। কয়েকদিনের নিস্তব্ধতা কাটিয়ে তুলে প্রার্থীরা নয়া কৌশলঅবলম্বন করেছেন। ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন ভোটাররা। চলছে দল বদলের পালা। স্মরণকালের রেকর্ড ভাঙলো এবারের নির্বাচনে। সভাপতি প্রার্থী হাফিজুল ইসলাম সদলবলে যোগ দিলেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তৈয়ব আলীর সংগঠনে। দেরিতে হলেও নির্বাচনের শেষের দিকে জমতে শুরু করেছে ভোট। কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচন মানেই টাকার খেলা। যে প্রার্থী যতো টাকা উত্তাপ ছড়াতে পারবে, ওই প্রার্থীর অবস্থান ততোই মজবুত হয়ে থাকে। কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচন বরাবরই আলোচিত হলেও এবার শুরুর দিকে ভোটের মাঠ জমতে দেখা যায়নি। ২-১ দিন আগেও প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে তেমন তোড়জোড় লক্ষ্য করা যায়নি। ঝিমিয়ে ছিলো নির্বাচনের মাঠ। সন্ধ্যায় সংগঠনগুলোর পক্ষে মিছিলের মহড়া ছাড়া সারাদিন কেটেছে নিস্তব্ধতার মধ্যেই। কোনো সংগঠন কার্যালয় এবার সাজানো-গোছানো হয়নি। কেরুজ আঙিনা এবার রঙিন হয়নি ছবি সংবলিত রঙ-বেরঙের ডিজিটাল ব্যানার ও ফেস্টুনে। কেরুজ এলাকা পোস্টারে পোস্টারে মুড়িয়ে দেয়া হয়নি এবারের নির্বাচনে। দিনভর কর্মী-সমর্থক ও বহিরাগতদের ভিড় দেখা যায়নি সংগঠনগুলোতে। প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ যেন খানেকটা স্থবির হয়ে পড়েছিলো। হঠাৎ করেই গতকাল বুধবার সকাল থেকে যেন প্রার্থী, ভোটার ও সমর্থকরা চাঙ্গা দিয়ে উঠেছেন। গতকাল বুধবার বিকেলে অনেকটাই আকস্মিকভাবে শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি, সূর্যসেনা শ্রবজীবী সংগঠনের কর্ণধার, এবারের নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী হাফিজুল ইসলাম সদলবলে যোগ দিয়েছেন বর্তমান সভাপতি এবারের নির্বাচনেও সভাপতি প্রার্থী তৈয়ব আলীর সংগঠনে। ফুলেল শুভেচ্ছাসহ হাফিজ ও তার সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রহণ করেন তৈয়ব আলী। হাফিজুল ইসলামের যোগদানের খবরে কেরুজ আঙিনায় শুরু হয়েছে নানামুখি গুঞ্জন। এতে তৈয়ব আলীর ভিত অনেকটাই মজবুত হলেও কেউ কেউ বলেছেন, আদর্শ নেতা একি আদর্শ দেখিয়ে নিজেকে বিকিয়ে দিলেন। হাফিজুল ইসলাম তার সংগঠনের প্রায় ৮০ জন নেতাকর্মীকে নিয়ে যোগদান করেছেন বলে দাবি করে তৈয়ব আলী নিজের বিজয় অনেকটাই নিশ্চিত বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচন আলোচিত হওয়ার পেছনের রহস্য শুধুই অর্থ। বিগত নির্বাচনগুলোতে প্রচুর অর্থ ব্যয়ে গড়ে তোলা হয়েছে যেন নতুন ইতিহাস। অর্থ জোগানের মূল ভূমিকা থেকেছে চিনিকলের ১৩টি মদ বিক্রয় কেন্দ্রের এজেন্টরা। মূলত নির্বাচনের মাঠ চাঙা রাখতে এজেন্টদের সুনজরের অপেক্ষার প্রহর গুনতে হতো প্রার্থীদের। এবার এজেন্টদের সাড়া মিলেছে কি-না তা নিশ্চিত জানা না গেলেও কেউ কেউ বলেছে, গোপনে চলছে আতাত। এবার কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের ২৫ সদস্যের স্থলে পরিবর্তন করে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ নির্বাচনে দুজন দুজন ৪ জনের স্থলে একজন একজন করে দুজন সহসভাপতি ও সহসাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার বিধান করা হয়েছে। ওয়ার্ডগুলো একত্রিত করে ৭টি করা হয়েছে। ৭টি ওয়ার্ডে ৯ জন সদস্য পদে নির্বাচিত হতে পারবেন। ফলে ১ জন সভাপতি, ১ জন সহসভাপতি, ১ জন সাধারণ সম্পাদক, ১ জন সহসাধারণ সম্পাদক ও ৯ জন সদস্যের সমন্বয়ে নির্বাচিত হবে ১৩ সদস্যের কমিটি। এ নির্বাচনে সভাপতি পদে ৪ জন মাঠে থাকলেও এবার লড়াই করবেন ৩ জন। হাফিজুল ইসলামের যোগদানের পর থেকে ৩ জনের লড়াই শুরু হলো। ফলে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মাঠে রয়েছেন- বর্তমান সভাপতি তৈয়ব আলী, (চাঁদতারা), ফিরোজ আহম্মদ সবুজ (হারিকেন), মোস্তাফিজুর রহমান (মই), সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান (বাইসাইকেল), সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম প্রিন্স (ছাতা) বর্তমান যুগ্মসম্পাদক ইসমাইল হোসেন (চাকা) ও আতাউর রহমান (দেয়ালঘড়ি)। সহসভাপতি পদে বর্তমান সহসভাপতি রেজাউল করিম (তলোয়ার) ফারুক আহম্মেদ (মাছ) ও জুলফিকার হায়দার (মোরগ), সহসাধারণ সম্পাদক পদে খবির উদ্দীন (তালাচাবি), ইদ্রিস আলী (হাতি), একরামুল হক খলিল (টেবিল), বাবুল আক্তার পরিবহন (ফুটবল), বাবুল আক্তার উৎপাদন (খেজুরগাছ) ও মহিদুল ইসলাম শাহীন (কাপ-পিরিচ)। প্রশাসন ও হিসাব বিভাগের সদস্য প্রার্থী আইয়ুব আলীর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বি না থাকায় তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। চোলাই কারখানা সদস্য পদে ইদ্রিস আলী (বেলচা), বাবর আলী (ডাব), গ্যারেজ (পরিবহন) বিভাগে সদস্য পদে ইয়াসির আরাফাত মিলন (আখের আঁটি), আব্দুল কুদ্দুস (ডাব), শফিকুল ইসলাম (হাতুড়ি) ও শরিফুল ইসলাম-১ (টর্চলাইট)। ইক্ষু সংগ্রহ বিভাগে সদস্য পদে ইয়ামিন হক (আখের আঁটি) ও মতিয়ার রহমান (ডাব)। ইক্ষু উন্নয়ন বিভাগে সদস্য পদে এএসএম কবির (আখের আঁটি), সাইফুদ্দীন (ডাব) ও সাহেব আলী শিকদার (বেলচা)। উৎপাদন বিভাগে সদস্য পদে শ্রী গোবিন্দ কুমার হালদার (বালতি), মজিবর রহমান (ডাব), মতিয়ার রহমান (হাতুড়ি) ও হাফিজুর রহমান (বেলচা)। প্রকৌশল বিভাগের সদস্য পদে আমিনুল ইসলাম (হাতুড়ি), আকরাম আলী (কাঁঠাল), আক্তারুল ইসলাম (ডাব) ও মফিজুর রহমান (বেলচা) প্রতীকে নির্বাচন করছেন।