কেরুজ চিনিকলে আখের পুর্জি আনতে গিয়ে মেজর পরিচয় দিয়ে গ্যাঁড়াকলে

জীবননগর খয়েরহুদার ভয়া মেজর বুরহান পাকড়াও

 

দর্শনা অফিস: কেরুজ চিনিকলের পুর্জির জন্য নিজেকে মেজর পরিচয় দিয়ে ধরা পড়েছে বুরহান সিদ্দিকী। কেরুজ নিরাপত্তা বিভাগের সদস্যদের তাকে হাতেনাতে আটক করেন। বুরহানকে পুলিশে দেয়া হয়েছে। বুরহানের বিরুদ্ধে প্রতারণা মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।

জানা গেছে, জীবননগর উপজেলার উথলী ইউনিয়নের খয়েরহুদা পূর্বপাড়ার আমিরুল হক আওয়ালের ছেলে বুরহান সিদ্দিকী গত ৩ দিন ধরে কেরুজ চিনিকলের বিভিন্ন বিভাগে যাতায়াত করছিলেন। বুরহান চিনিকলের সকলের কাছেই নিজেকে ডিজিএফআই’র মেজর পরিচয় দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে কর্মরত আছেন, কয়েকদিনের ছুটিতে বাড়িতে এসেছেন বলেও জানায়। পিতা আওয়াল ও নিজের রয়েছে বেশ কয়েক বিঘা আখচাষ। তাই প্রয়োজন আখের পুর্জি। ছুটি থাকাকালীন সময়ের মধ্যে আখ যাতে মিলে সরবরাহ করতে পারে সে জন্য বেশ কয়েকটি পুর্জি প্রয়োজন। বুরহান নিজেকে মেজর বলে পরিচয় দিয়ে ৩ দিন ধরেই সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে পুর্জি দাবি করে আসছেন। পুর্জি ইস্যু হতে সময়ের প্রয়োজন বিধায় কর্মকর্তারা সময় চেয়ে নেন। এরই মধ্যে চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কক্ষে বুরহান কয়েক দফা যান। আবারও গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কক্ষে গিয়ে বুরহানের স্বাক্ষরিত ইংরেজিতে লেখা পুর্জির জন্য আবেদনপত্র দাখিল করেন। এ আবেদনপত্রের বিভিন্ন শব্দে ভুল থাকায় সন্দেহ হয় বুরহানের ওপর। নিজে মেজর পরিচয় দিলেও মেজর বানানের ক্ষেত্রেও ছিলো ভুল। ফলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজিজুর রহমানের সন্দেহ ঘনীভূত হয়। তলব করা হয় মিলের নিরাপত্তা পরিদর্শক গিয়াসউদ্দিন পিনাকে। পিনা সঙ্গীয় সদস্যদের সাথে নিয়ে বুরহানকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। এতেই বুরহানের আসল পরিচয় বেরিয়ে আসে।

নিরাপত্তাকর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদে নিজেকে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বলেও পরিচয় দিয়েছেন বুরহান উদ্দিন। এক পর্যায়ে খবর দেয়া হয় দর্শনা আইসি পুলিশে। আইসি পুলিশের ইনচার্জ এসআই মিজানুর রহমান এবং এএসআই জাকির হোসেন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে গ্রেফতার করেন ভুয়া মেজর বুরহানকে। সেনাবাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ পদের অবমাননা করার অপরাধে এসআই মিজানুর রহমান বাদী হয়ে গতকালই দামুড়হুদা থানায় বুরহানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। দামুড়হুদা থানার অফিসার ইনচার্জ আহসান হাবীব বলেছেন, ভুয়া মেজর বুরহানের সাথে আর কেউ জড়িত রয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখার জন্য তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আজ বুধবার বুরহানকে আদালতে সোপর্দ করা হতে পারে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হতে পারে।

অভিযোগ উঠেছে, কেরুজ চিনিকলের চলতি আখমাড়াই মরসুমের শুরু থেকেই পুর্জি বিক্রির রমরমা ব্যবসা চলছে। এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা এ পুর্জি বাণিজ্যের সাথে জড়িত রয়েছে। ফলে প্রকৃত আখচাষিরা পুর্জি থেকে বঞ্চিত হয়ে আখচাষের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে। এক শ্রেণির দালালচক্র সংশ্লিষ্ট বিভাগের কোনো কোনো কর্মকর্তার সহায়তায় এ পুর্জি আখচাষিদের কাছে মোটা অঙ্কের টাকায় বিক্রি করছে। এ ব্যাপারে চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজিজুর রহমানের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সুবিধা বঞ্চিত আখচাষিরা।