কেরুজ চিনিকলের ২০১৪-১৫ আখ মাড়াই মরসুমের শুরু হচ্ছে ৫ ডিসেম্বর

উদ্বোধন করবেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু : চলছে তোড়জোড়

 

হারুন রাজু/হানিফ মণ্ডল: কেরুজ চিনিকলের ২০১৪-১৫ আখ মাড়াই মরসুমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে আগামী ৫ ডিসেম্বর। এ মরসুমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। চিনিকল কর্তৃপক্ষ নানামুখি কার্যক্রম গ্রহন করেছে। তিন মরসুমের প্রায় ৫০ কোটি টাকার চিনি এখনো অবিক্রিত রয়েছে। এ মরসুমের চিনি রাখার জন্য অতিরিক্ত গোডাউন নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। সেই সাথে চিনির মূল্য কমেছে। শুরু হয়েছে বিক্রি।

DARSANA PIC (2)

কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৃষিবিদ আজিজুর রহমানের জানান, মিল চালুর সকল প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। এরই মধ্যে ধোয়া-মোছা ও রঙ-চুনের কাজ শেষ করা হয়েছে। সেই সাথে গত ২১ নভেম্বর সম্পন্ন করা হয়েছে বয়লারের স্লো-ফায়ারিং। মিলের ওয়াটার ট্রাইল আজ রোববার ও কাল সোমবার করা হবে। মেশিনারিজে কোনো প্রকার ত্রুটি থাকলে তা দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে এ ট্রাইল। এতে কোনো প্রকার ত্রুটি দেখা দিলে তা সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে মিল কর্তৃপক্ষ। ২০১৪-১৫ আখ মাড়াই মরসুমে চিনিকল কর্তৃপক্ষ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সর্বাত্মক চেষ্টা নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছে। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পৌছুতে পারবে কি-না তা দেখার অপেক্ষামাত্র। এ মরসুমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে আগামী ৫ ডিসেম্বর শুক্রবার বিকেলে। গত মরসুমে শাদামাটা পরিবেশে মিলের মাড়াই কাজ শুরু করলেও এবার মিল চালুর ক্ষেত্রে ব্যাপক আয়োজন করেছে কর্তৃপক্ষ।

মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজিজুর রহমান আরো বলেছেন, মাড়াই মরসুমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। বিশেষ অতিথি থাকবেন জাতীয় সংসদের হুইপ চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন, চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগর, অতিরিক্ত সচিব চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান মাহমুদ উল হক ভূঁইয়া। এ মরসুমে কেরুজ চিনিকল কর্তৃপক্ষকে ১ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৯০ কার্য দিবসে ৮ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছে চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। চিনি আহরণের গড় হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। মিল উদ্বোধনকে সামনে রেখে চিনি কারখানায় জোরেশোরে যন্ত্রাংশ মেরামত, ঝালাই, ধোয়া-মোছা ও রঙ-চুনের কাজ শেষ করেছে মিল কর্তৃপক্ষ। মাড়াই মরসুম উদ্বোধন সামনে রেখে মিলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দিন কাটছে মহাব্যস্ততায়।

এদিকে এ মরসুমের উৎপাদিত চিনি রাখা নিয়ে মহাচিন্তায় রয়েছে মিল কর্তৃপক্ষ। গত পরপর ৪ মাড়াই মরসুমের উৎপাদিত চিনির বেশির ভাগই রয়েছে অবিক্রিত। প্রায় ৫০ কোটি টাকার মূল্যের ১৩ হাজার ৯শ মেট্রিকটন চিনি অবিক্রিত অবস্থায় গোডাউনে রয়েছে। তবে চিনির বাজার দাম ৪০ টাকা থেমে নেমে এখন ৩৭ টাকা নির্ধারিত হওয়ায় শুরু হয়েছে বিক্রি কার্যক্রম। মিলের ৫টি গোডউন চিনিতে কানায় কানায় ভর্তি থাকায় বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে শুরু করেছে মিল কর্তৃপক্ষ। এছাড়া অতিরিক্ত একটি গোডাউন নির্মাণের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। মিলের ৫টি গোডাউন ছাড়াও চিনি রাখা হয়েছে- কেরুজ চিনিকলের বন্ধ হয়ে থাকা ওষুধ গোডাউনে, পরিবহন বিভাগের ইঞ্জিন গোডাউনে, সিজিনাল ব্র্যাকের ১৩টি কক্ষে, প্রাইমারি স্কুলের ৭টি কক্ষে, অফিসার্স, সাধারণ ক্লাব ও আবাসিক এলাকার খালি পড়ে থাকা কয়েকটি ভবনে। এজন্য মিল কর্তৃপক্ষকে অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হচ্ছে। যা মিলের জন্য কাটা ঘায়ে নুনের ছিটের মতো অবস্থায় হচ্ছে পরিণত।

জানা গেছে, প্রতি মরসুমে কমপক্ষে ৩০/৩৫ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে চিনি কারখানায়। ৭৬ বছর বয়সী এ মিলটিকে টিকিয়ে রাখতে কৃষকরা বেশি বেশি আখচাষ না করলে আগামীতেও এ লোকসানের বোঝা টানতে হবে। এবার লোকসান কমাতে ও লাভের মুখ দেখতে মিল কর্তৃপক্ষ নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।