কেরুজ চিনিকলের বয়লার সমস্যা সমাধানের পথে : ফের স্লো-ফায়ারিং

দর্শনা অফিস: কেরুজ চিনিকলের বয়লার সমস্যা অনেকটাই সমাধানের দ্বারপ্রান্তে। টানা ৬ দিনের প্রাণপণ চেষ্টার পর এখন অনেকটাই এগুচ্ছে সমাধানের দিকে। একই মাড়াই মরসুমে আবারো বয়লার স্লো-ফায়ারিং করা হলো। আজ শুরু হতে পারে আখমাড়াই। বয়লারের ৭ দিনের সমস্যার কারণে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে অনেক পিছিয়ে পড়তে হলো মিলটিকে। বড় ধরনের এ যান্ত্রিক ত্রুটিতে চলতি মরসুমে লোকসানের বোঝা বাড়তে পারে। বড় ধরনের এ লোকসান পুশিয়ে নিতে কর্তৃপক্ষ নতুন পথে এগুতে পারে। ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত কেরুজ চিনিকল আজ নানা সমস্যায় জর্জরিত। ৭৬ বছর বয়সী মিলিটির যেন সারা গায়ে ঘায়ে পরিণত। ফি বছর এ মিল থেকে সরকার কোটি কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করলেও যন্ত্রাংশ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ছিলো উদাসীন। কেরুজ চিনিকলটি আধুনিকায়ন করণে মিলের শ্রমিক-কর্মচারী ও এলাকাবাসীর কাঙ্ক্ষিত দাবি বারবার হয়েছে উপেক্ষিত। চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগর নিয়েছেন মহতী উদ্যোগ। গত বছরে মিলটিকে আধুনিকায়নের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রালয় থেকে সাড়ে ৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দের ব্যবস্থা করেছেন। আগামী মাড়াই মরসুমে মিলের আধুনিকায়নের কার্যক্রম শুরু করতে পারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

এদিকে বয়সের ভারে নুয়ে পড়া মিলটি প্রতি বছরেই পুরোনো যন্ত্রাংশ জোড়াতালি ও ঝালাই-মেরামত করে আখমাড়াই কার্যক্রম শুরু করে। শুরু থেকেই নানা রকম সমস্যার মোকাবেলার মধ্যদিয়ে টেনেহেঁচড়ে মাড়াই মরসুম শেষ করতে হয়। ফলে লোকসান গুনতে হয় কোটি কোটি টাকা। খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলা মিলটির ২০১৩-১৪ আখমাড়াই মরসুমের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় গত বছরের ৬ ডিসেম্বর। মাড়াই শুরু পর থেকেই সেই পুরোনো অবস্থায় পরিণত হয়েছে। টানা ৩২ দিনে ছোটখাটো সমস্যার সম্মুখিন হতে হয় কর্তৃপক্ষকে। খুব সহজে ছোটখাটো সমস্যা সমাধান দিতে পারলেও মহাবিপাকে পড়তে হয় গত ৭ জানুয়ারি মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে মিলের ৪ নং বয়লারের ঝুলন্ত ছাদ ভেঙে পড়ে। এতে বন্ধ হয়ে যায় মাড়াই কার্যক্রম। বড় ধরনের দুর্ঘটনার হাত থেকে রেহাই পেতে মিলের সবকটি বয়লারের আগুন নিভিয়ে দেয়া হয়। সমস্যার পর থেকে ৩৪ ঘণ্টা বহু চেষ্টায় বয়লার মেরামত সম্পন্ন করে গত বুধবার বিকেল ৪টার দিকে আখমাড়াই শুরু করা হলেও তা টেকেনি। মাত্র আধঘণ্টার মাথায় ফের আগের দশায় পরিণত হয়। এরপর সমস্যা আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করে। সমস্যা সমাধানে হিমশিম খায় মিল কর্তৃপক্ষ। শুরু করে চেষ্টা তদবির। হয়নি কোনো সুরাহা। উপায়ন্তর না পেয়ে বুধবার রাতে বয়লারের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম তৈরি করতে দেয়া হয় রেইন উইকে। গত বৃহস্পতিবার রাতে রেইন উইক কর্তৃপক্ষ কেরুজ বয়লারের হ্যাঙ্গারসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ সরবরাহ করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা পারেনি। পরদিন শুক্রবার রাত ৮টার দিকে রেইন উইক কর্তৃপক্ষ সরঞ্জাম সরবরাহ করে। সে থেকে শুরু হয় ঘষামাজা ও সেটিং ফিটিঙের কাজ। রোববার রাত ১২টা নাগাদ কাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করছে মিল কর্তৃপক্ষ। মিলের মহাব্যবস্থাপক (কারখানা) ইউসুফ আলী শিকদার জানিয়েছেন, রাত ১২টার পর মিলের ৪টি বয়লারের এক যোগে ফের স্লো-ফায়ারিং করা হবে। বয়লার থেকে স্টিম তুলতে সময় লাগবে ৮/১০ ঘণ্টা। সে হিসাব মতে আজ সোমবার সকাল ১০টার দিকে আখমাড়াই কার্যক্রম চালু হতে পারে। সুষ্ঠুভাবে সমস্যা সমাধান হলে আগে মিল আঙিনায় পড়ে থাকা আখমাড়াই করা হবে। এ ব্যাপারে চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৃষিবিদ আজিজুর রহমান বলেছেন, শ্রমিক-কর্মচারী, কর্র্মকর্তা ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দের নিরলস পরিশ্রম ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় বড় ধরনের ত্রুটি সহজেই সমাধান করতে পেরেছি। আশা করছি আজ থেকে ফের আখমাড়াই শুরু করতে পারবো। সেজন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে। পাশাপাশি এলাকার সম্মানিত আখচাষিদের ধৈর্যধারণের জন্য তিনি আহ্বান জানিয়েছেন। বয়লার সমস্যাজনিত কারণে হাজার হাজার মেট্রিক টন আখ মিল চাষিদের কাছ থেকে ওজন করে মিল আঙিনায় ফেলে রাখতে বাধ্য হয়েছে মিল কর্তৃপক্ষ।