কূটনৈতিক টানাপড়েনে হুমকিতে রফতানি বাজার

স্টাফ রিপোর্টার: রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিদেশি বিনিয়োগ হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। চলে যাচ্ছে অন্য দেশগুলোতে। দেশি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ তো দূরের কথা, ব্যবসা চালু রাখাও কঠিন হয়ে পড়েছে। কয়েকটি দেশ তাদের দেশের নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণে সাবধানতা অবলম্বনের খবরেও বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশকে নিয়ে নেতিবাচক বার্তা যাচ্ছে। উদ্বেগজনক এ অবস্থায় বিনিয়োগ চলে যাচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকাসহ এশিয়ার অন্য দেশগুলোতে। এটা আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক অগ্রগতির পথকে রুদ্ধ করে দিচ্ছে।

এতো দিন দেশের ভেতরের হরতাল-অবরোধ, সহিংসতা-নাশকতা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন রফতানিকারকরা। সময়মতো তৈরি পণ্য বন্দরে পাঠিয়ে রফতানি করা, আর রফতানি পণ্য তৈরি করতে বন্দর থেকে আমদানি করা কাঁচামাল কারখানায় আনা নিয়ে আতঙ্কে ছিলেন তারা। অভ্যন্তরীণ সহিংসতার কারণে সম্প্রতি হংকঙে অনুষ্ঠিত ক্রেতা সম্মেলনে ইউরোপ ও আমেরিকার কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে পণ্য না কেনার ঘোষণা দিয়েছে।

অন্যরা বলেছে, তারা বাংলাদেশ থেকে পণ্য নেওয়ার কার্যাদেশ ২০ থেকে ২৫ ভাগ কমিয়ে দেবে। এসব দুঃসংবাদকে ছাপিয়ে এখন বড় আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশি পণ্যের প্রধান ক্রেতা-রাষ্ট্রগুলোর সাথে কূটনৈতিক টানাপড়েন। রফতানিকারক ও আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে সহিংস রাজনীতি চলমান থাকলে এবং কূটনৈতিক টানাপড়েন অব্যাহত থাকলে যুক্তরাষ্ট্রে স্থগিত হওয়া জিএসপি পুনরুদ্ধার যেমন সময়মতো হবে না, তেমনি ইউরোপে দোদুল্যমান জিএসপি সুবিধারও নেতিবাচক পুনর্বিবেচনা করতে পারে দেশগুলো।

গত অর্থবছর বাংলাদেশ প্রায় ২৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করেছে। এর মধ্যে ২৩ বিলিয়ন ডলারই এসেছে তৈরি পোশাক রফতানি থেকে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ৬০ ভাগই রফতানি হয় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৭টি দেশে। বাকি ২৫ শতাংশ যায় যুক্তরাষ্ট্রে, ৪ শতাংশ কানাডায়। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এসব দেশের সাথে সরকারের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন সমাবেশে সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিরা প্রকাশ্যে এসব দেশের সমালোচনা করছেন।

অন্যদিকে এসব দেশের সরকারও বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কোনো কোনো দেশ তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে সতর্ক করে দিয়েছে। এর প্রভাব ইতোমধ্যেই পড়তে শুরু করেছে রফতানি খাতের ওপর। আগামী মার্চের পর প্রায় এক হাজার তৈরি পোশাক কারখানার হাতে কোনো রফতানি আদেশ নেই। বিদেশি ক্রেতা প্রতিনিধিরা এখন আর বাংলাদেশে আসছেন না। আগে যারা বাংলাদেশ থেকে পণ্য নিতেন, পণ্যের খোঁজে তারা যাচ্ছেন অন্য দেশের কাছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে এ পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার সম্ভাবনা দেখছেন রফতানিকারকরা। কিন্তু সহিংসতা ও নাশকতা আরো বাড়লে উন্নত গণতন্ত্রের ধারক এসব দেশ বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধাসহ নানা বাণিজ্য সুবিধা পুনর্বিবেচনা করবে- এমন আশঙ্কাও রয়েছে তাদের। অথচ উন্নয়নশীল দেশ পাকিস্তান মাস কয়েক আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নে জিএসপি সুবিধা পেয়েছে। পাশের দেশ ভারতও আগামী বছর ইউরোপে জিএসপি সুবিধা পেতে যাচ্ছে।