কুড়ুলগাছির রায়সা বিলাঞ্চল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে অতিথি পাখি

হাসেমরেজা: বিলঝিল নদী-নালা ও পুকুরের মেলায় ভরপুর রায়সা বিলাঞ্চল। শীত এলেই এ অঞ্চল মুখরিত হয়ে উঠতো হাজার হাজার অতিথি পাখির কলগুঞ্জনে। এলাকার চির চেনা দৃশ্যপট বদলে দিত ভিনদেশী ও অতিথি পাখির দল। কিন্তু শীত এলেও এ বছর চলন বিলাঞ্চলে তেমন দেখা যাচ্ছে না শীতের পাখিদের। ঝাক বেঁধে উড়ে যাওয়া অতিথি পাখিদের বিচরণ নেই বললেই চলে। যাও এসেছে অতীতের অন্যান্য বছরে তুলনায় সে সংখ্যা অতি নগণ্য। দামুড়হুদা উপজেলার একমাত্র বড় বিল রায়সা বিলাঞ্চল।
এ অঞ্চলে রয়েছে অসংখ্য নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর। পরবাসী বিহঙ্গকুল প্রবল তুষারপাত ও শৈত্যপ্রবাহ থেকে নিজেদের ও বংশ রক্ষার তাগিদে তুলনামূলক কম শীতের দেশ এবং হাওড়-বাওড়, বিল-ঝিল সমৃদ্ধ এই বাংলাদেশে আসে। পাখিদের কিচির মিচির ডাকে ঘুম ভেঙে যেতো বিল পাড়ের বাসিন্দাদের। ওই সময় পাখিদের উত্ত্যক্ত করার কেউ ছিলো না। কুয়াশাস্নাত সকালে সূর্যস্নান সেরে পাখিদের দল নেমে যেতো বিভিন্ন জলাশয়ে শামুক, ঘাস, শস্যদানা ও পোকা মাকড়ের সন্ধানে। আগত এসব অতিথি পাখির মধ্যে হাঁস প্রজাতির লেনজিং, পিয়ং, সেরিয়া ও চোখাচোখি উল্লেখযোগ্য। অন্যান্য পাখিদের মধ্যে গঙ্গা কতুবর, গাঙচিল, মানিক জোড়, রাত চোরা, সবুজ পাপিট, বিলেতি শালিক দেখা যেত। এসব ভিনদেশী অতিথি পাখিদের সাথে মিলেমিশে থাকতো আমাদের দেশীয় পাখি। এগুলোর মধ্যে কানা বক, পানকৌড়ি, জল কবুতর, শামুকালি, ডাহুক, মাছরাঙা ও ঘুঘুসহ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
পরবাসী বিহঙ্গকুলের সাথে দেশীয় পাখিদের মিলন অভিসার যেন স্বর্গীয় পরিবেশ তৈরি করতো জলাশয় গুলোতে। পাখি প্রকৃতির এক বিশেষ উপহার। এসব পাখি প্রকৃতির টানে ছুটে আসে। আবার প্রকৃতির টানেই চলে যায় অভিষ্ট গন্তব্যে। বিগত ৮০-৯০ দশকের গোড়ার দিকে রায়সা বিলাঞ্চলে হাজার হাজার পাখির উপস্থিতি ছিলো বলে স্থানীয় প্রবীণ ও পাখি বিশেষজ্ঞদের সূত্রে জানা গেছে। তবে এ বছর এর সংখ্যা পূর্বের তুলনায় নিতান্তই কম। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও মাঝে মধ্যে দু-একটি পাখির ঝাঁক চোখে পড়ে। অবাঞ্ছিত শিকারীদের দৌরাত্ম্য, সার প্রয়োগের মাধ্যমে মাছচাষ, ইরি আবাদে কীটনাশক ব্যবহার, নির্বিচারে ঝোঁপঝাড় ও বড় বড় গাছ উজাড় করাসহ বিভিন্ন কারণে অতিথি পাখিদের বিচরণ ক্ষেত্রের অন্তরায় হিসেবে উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে অতিথি পাখিদের আগমন ধারা অব্যাহত রাখতে হলে সরকারি প্রচেষ্টার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট এলাকার জনসাধারণদেরও গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। ঝোঁপঝাড় সৃষ্টির মাধ্যমে পাখি প্রজনন সহায়ক পরিবেশ ও জলাশয় গুলোতে পর্যাপ্ত খাদ্য তৈরিসহ কীটনাশকের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। তবেই অতিথি পাখিদের আগমন পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব।