কুষ্টিয়া ইবির গজনবীপুর চাঁপাইগাছি বিলেরচরে ভুট্টাক্ষেতে অজ্ঞাত ঘাতকচক্রের নৃশংসতা

গলিত লাশ উদ্ধার : হত্যার আড়াল জুয়ার টাকা

জামজামি প্রতিনিধি: কুষ্টিয়া ইবির উজানগ্রাম গজনবীপুরের দারিদ্র ভ্যানচালক বাদশাফুলকে (২৫) হত্যা করা হয়েছে। মোবাইলফোনে ডেকে নেয়ার ৪ দিনের মাথায় গতকাল শনিবার সকালে চাপাইগাছি বিলের নিকটস্থ ভুট্টাক্ষেত থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়। জুয়ার লক্ষাধিক টাকা আত্মসাত নিয়ে সৃষ্টি বিরোধের জের ধরে ভ্যানচালক বাদশাফুলকে প্রাণ দিতে হলো।

পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, গত বুধবার রাত ৮টা ২০ মিনিটে জনৈক ব্যক্তি ০১৯৪৩৫৭১১৩৬ মোবাইলফোনে ডাকে। মোবাইলফোন পেয়ে সে বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর আর বাড়ি ফেরেনি। জুয়ার লক্ষাধিক টাকা নিয়ে সৃষ্ট বিরোধের জের ধরে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

জানা গেছে, কুষ্টিয়া ইবির উজানগ্রাম ইউনিয়নের গজনবীপুর গ্রামের মৃত মনোহর শেখের ছেলে দরিদ্র ভ্যানচালক যুবক বাদশাফুল। তার স্ত্রী ফজিলা খাতুন জানান, গত বুধবার রাত ৮টা ২০ মিনিটে মোবাইলফোনে ডাকে। এ ডাক শুনে সে বাড়ি থেকে বের হয়। দীর্ঘ সময় ধরে সে আর বাড়ি না ফিরলে স্বামীর বড় ভাই তথা ভাসুরদেরকে জানালে খোঁজাখুজি করেও মেলেনি কোনো খোঁজ। ৩টি দিন কাটে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। গতকাল সকল ৯টার দিকে গ্রামের অদূরবর্তী চাঁপাইগাছি বিলের চরে হালিমের ভুট্টাক্ষেতে গামছা দিয়ে হাত বাঁধা ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধারের খবর পাওয়া যায়। বাড়ি থেকে আনুমানিক আধ-কিলোমিটার দূরে চরে ছুটে যায় পরিবারের কেউ কেউ।

কুষ্টিয়া ইবি থানার ওসি মীর শরিফুল হক জানান, গতকাল ভোরে কৃষকেরা ঘাস কাঁটতে বের হয়ে গজনবীপুর গ্রামের চাঁপাইগাছি বিলের চরে ভুট্টাক্ষেতে ক্ষত-বিক্ষত ও পঁচা দুর্গন্ধময় লাশ পড়ে থাকতে দেখে থানা পুলিশে খবর দেয়। সাড়ে ১০টার দিকে তার নেতৃত্বে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায়। শ শ উৎসুক নারী-পুরুষ ভিড় জমাতে থাকে। পুলিশের উপস্থিতিতে মৃতের পরিবারস্বজনেরা দাবি করেন, এ লাশ গজনবীপুরের ভ্যানচালক বাদশাফুলের। পরনে লুঙ্গি গায়ে চেক হাফ শার্ট দু হাতের ক  বুকের ওপরে টেনে এক সাথে গামছায় গিটবাধা। মুখমণ্ডলসহ শরীরের অধিকাংশই রোদে পুড়ে তামাটে বিকট দুর্গন্ধময়ও ফুলে ফেপে বিকৃত এ লাশ। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি শেষে লাশ উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালমর্গে প্রেরণ করে সংশ্লিষ্ট ইবি থানা পুলিশ। বিকেলে লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সন্ধ্যায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হরা হয় বলে পরিবারসূত্র জানিয়েছে।

স্ত্রী ফজিলা দাবি করে বলেছে, তার স্বামী ছিলো অত্যন্ত ভালো মানুষ। প্রতিবেশী উম্বাদ সর্দারের ছেলে বাবলু (৩০) ও সহোদর ভাই রাহাত ও মৃত ইসারত মণ্ডলের ছেলে আইয়ুব ও অন্যরা মিলে তাকে ডেকে নিয়ে ঘটিয়েছে এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। আর নেপথ্য হিসেবে রয়েছে জুয়ার কোটে বাজিমাত স্বামীর কাছে গচ্ছিত লক্ষাধিক টাকা। যা দু মাস আগে কৌশলে ধার নেয়া বলে প্রতিবেশী ঘাতক বাবলু তার স্ত্রী ফিরোজা মারফত বাদশাফুলের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়। এ টাকা চাওয়া নিয়েই রোষানলের শিকার হয়ে পড়ে বাদশাফুল। অতঃপর গা-ঢাকা দিয়েছে  ঘাতকসহ পরিবারের সকলে। এর নেপথ্যে নারীঘটিত ঘটনা ও জুয়ারকোটের সহযোগী বাবলুর স্ত্রী ফিরোজার গোপন অন্তঃরঙ্গ জড়িত রয়েছে কি-না তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

স্ত্রী ফজিলা বলেন, মেহেরপুর গাংনী উপজেলার প্রাগপুর গ্রামের আবুল মণ্ডলের মেয়ে সে। ৭/৮ বছরের বিবাহিতা জীবনে তাদের ঘরে কোনো সন্তানাদী হয়নি। ভাইদের সবার ছোটো ছিলো বাদশাফুল।