কুষ্টিয়ায় ডায়রিয়ার প্রকোপ : শতাধিক রোগী হাসপাতালে

 

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ায় ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত শতাধিক রোগী এ রোগে আক্রান্ত হয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া ডায়রিয়ায় আক্রান্ত অনেকে বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক ও বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালে পর্যাপ্ত স্যালাইন রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তবে কয়েকজন রোগীর স্বজনেরা অভিযোগ করেন, যেসব রোগী খাবার স্যালাইন গ্রহণ করতে পারছেন না, তাদের শরীরে দেয়ার জন্য বাইরে থেকে স্যালাইন কিনতে হচ্ছে।

জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) তাপস কুমার সরকার বলেন, নির্ধারিত শয্যার তুলনায় হাসপাতালে ১০ গুণ বেশি রোগী ভর্তি রয়েছেন। কয়েকজন সেবা নিয়ে চলে গেছেন। গতকাল বিকেল পর্যন্ত ৮৫ জন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই কুষ্টিয়া পৌর এলাকার বাসিন্দা। ধারণা করা হচ্ছে, পৌর এলাকার পানিতে কোনো সমস্যা হয়েছে।

কুষ্টিয়া পৌর মেয়র আনোয়ার আলী বলেন, পৌরসভার সরবরাহ করা পানি পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ আয়ুব আলী বলেন, বর্ষা মরসুমে দূষিত পানি পান করায় সাধারণ মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। তবে শিশু ভর্তির হার স্বাভাবিক রয়েছে। সেই তুলনায় বয়স্ক পুরুষ ও নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি ভালোভাবে ফুটিয়ে পান করলে ডায়রিয়া ছড়ানো কমে আসবে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৩ জুলাই সকাল থেকে গত এক সপ্তাহে এ পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক ডায়রিয়া আক্রন্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৭০ জন রোগী হাসপাতালে আসছেন। অনেকে দু-তিন দিন থাকার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর জন্য শয্যা আছে ১০টি। এর মধ্যে শিশুদের জন্য চারটি। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ২০টি শিশু ভর্তি হয়েছে। হাসপাতালে দেখা যায়, পুরুষ, নারী ও শিশু বিভাগের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে কোনো শয্যা খালি নেই। এসব ওয়ার্ডের মেঝে ও বারান্দাতেও রোগীদের ব্যাপক ভিড়। রোগীর বিছানা ওয়ার্ডগুলোর বারান্দা ছাড়িয়ে গেছে।
হাসপাতালের নিচতলার বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বোয়ালদহ গ্রামের ২ বোন সাবিনা খাতুন (১৮) ও ইতি খাতুন (১০)। তাদের বাবা মেজবার আলী বলেন, তার দুই মেয়ে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসপাতাল থেকে খাওয়ার স্যালাইন দিয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন রোগীর স্বজনেরা বলেন, শরীরে দেয়ার জন্য হাসপাতাল থেকে একটা বা দুটোর বেশি স্যালাইন দেয়া হচ্ছে না। বেশির ভাগ সময় এগুলো বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। ৩ দিন ধরে চিকিৎসা নিচ্ছে ৭ মাস বয়সী তাসরিফ। তার মা সখী খাতুন বলেন, তার ছেলেকে মঙ্গলবার ভর্তি করা হয়েছিলো। বুধবার তারা বাড়ি গিয়েছিলেন। গত পরশু ছেলেকে আবার ভর্তি করেছেন। প্রতিদিন শিশুর শরীরে দামি ইনজেকশন দিতে হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নার্স বলেন, যেসব রোগী খেতে পারেন না, তাদের শরীরে গড়ে ৭ থেকে ৮টা স্যালাইন দিতে হচ্ছে। একজন রোগীকে এর পুরোটা সরবরাহ করা সম্ভব নয়। তবু হাসপাতাল থেকে কিছু সরবরাহ করা হচ্ছে। তুলনামূলক গরিব রোগীদের বেশি কলেরা স্যালাইন দেয়া হচ্ছে।

হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান মীর মাহফুজুল হক চৌধুরী বলেন, অন্যান্য দিনের তুলনায় গত কয়েক দিনে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। ডায়রিয়া থেকে দূরে থাকতে হলে পরিবারের সবাইকে খাবার ও পানি পানে সতর্ক থাকতে হবে। এ সময় খাবার ও পানির মাধ্যমে দেহে ডায়রিয়ার জীবাণু প্রবেশ করে।