কুষ্টিয়ায় একযোগে ১২ ইউপি সদস্যের পদত্যাগের হুমকি

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে এনে অনাস্থা প্রকাশ করে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন পরিষদের নির্বাচিত ১২ সদস্য (মেম্বার)। দাবি আদায় না হলে একযোগে ১২ ইউপি সদস্য শেষ পর্যন্ত পরিষদ থেকে পদত্যাগ করবেন বলে ঘোষণা দেন। দাবি আদায়ে তারা মানববন্ধন, অনশন এমনকি চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১২ টায় কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের এমএ রাজ্জাক মিলনায়তনে বোয়ালিয়া ইউপির নির্বাচিত ১২ সদস্যের প্রত্যেকেই উপস্থিত থেকে সংবাদ সম্মেলন করে এ সব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে বলা হয় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে গত সোমবার পরিষদের ১২ জন সদস্য স্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ৯ নং ওয়ার্ডের সদস্য নাজিম উদ্দিন বিশ্বাস। লিখিত বক্তব্যে বলা হয় নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন বিশ্বাস একক সিদ্ধান্তে পরিষদের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে দায়িত্ব গ্রহণ করে পরিষদের সকল উন্নয়ন প্রকল্প একক সিদ্ধান্তে বাস্তবায়ন করছেন চেয়ারম্যান। শুধু উন্নয়ন প্রকল্পই নয়, পরিষদের কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সদস্যদের মতামত নেয়া হয় না। সদস্যদের অশ্রাব্য গালি-গালঅজ করেন চেয়ারম্যান।
সদস্যদের অভিযোগ, উপজেলা পরিষদ থেকে ভূমি হস্তান্তর কর বাবদ তিন কিস্তিতে চার লাখ তিন হাজার টাকা বোয়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নামে বরাদ্দ হয়। মোটা অংকের এই টাকা কোন খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তার কোন হিসাব নাই। ইউনিয়ন পরিষদের বয়স্ক ভাতার মোটা অংকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। ওই টাকা নিয়ে চেয়ারম্যান নিজে ব্যবহারের জন্য একটি প্রাইভেট কার কিনেছেন বলে অভিযোগ করেছেন মেম্বাররা। ইউনিয়নে দুইজন গ্রাম পুলিশ নিয়োগ দিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে মহিউদ্দিনের নামে। এছাড়া আরো কয়েকজনের নিকট থেকে টাকা নিয়ে চাকরি দিতে পারেননি বলে জানা গেছে। বর্তমানে সারাদেশে ইউনিয়ন পরিষদে অনলাইনে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের ব্যবস্থা থাকলেও বোয়ালিয়া ইউনিয়নে চলছে এনালগ পদ্ধতিতে। হাতে লেখা সনদ দিয়ে জনগণের কাছ থেকে ইচ্ছেমত অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে। যার কোন হিসাব ইউনিয়ন পরিষদে নাই। নাগরিক ট্রাক্সের জমাকৃত টাকা পরিষদের কোন ফান্ডে জমা হয় না। সকল টাকা চেয়ারম্যান ব্যক্তিগতভাবে নিয়ে চলে যান বলে জানান সদস্যরা।
পরিষদের ১২ জন নির্বাচিত সদস্যের সবাই চেয়ারম্যানের এসকল অপকর্মের বিরোধিতা করলেও কোন সুরাহা হয়নি। দিনদিন আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে চেয়ারম্যান। সংবাদ সম্মেলনে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য কাজল রেখা, রেহেনা খাতুন, উল্মে সুমাইয়া বেলী, ১ নং ওয়ার্ডের সদস্য ফারুক হোসেন, ২ নং ওয়ার্ডের সদস্য রহিদুল ইসলাম, ৩ নং ওয়ার্ডের সদস্য রিন্টু আলী, ৪ নং ওয়ার্ডের সদস্য নাহারুল ইসলাম, ৫ নং ওয়ার্ডের সদস্য রহিদুল ইসলাম (বিশ্বাস), ৬ নং ওয়ার্ডের সদস্য আক্কাস আলী, ৭ নং ওয়ার্ডের সদস্য আবু হানিফ, ৮ নং ওয়ার্ডের সদস্য ইয়ারুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। এদিকে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন বিশ্বাস দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে মেম্বাররা যে অভিযোগ করেছেন তা সত্য না।