কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ ৯ দিন পেরিয়ে গেলেও গ্রেফতার হয়নি অভিযুক্ত শিক্ষক রফিকুল

 

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ায় শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির ৯ দিন পেরিয়ে গেলেও গ্রেফতার হয়নি অভিযুক্ত শিক্ষক রফিকুল। বিশ্ব নারী দিবসের এই মাসে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার মীর মোশাররফ হোসেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইসলাম কর্তৃক একই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এক ছাত্রী শ্লীলতাহানির শিকার হয়। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৬ মার্চ বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ঘটনার দিনই ওই ছাত্রীর পিতা কুমারখালী থানায় ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে একটি এজাহার দায়ের করেন।

দেশের বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেল এবং জাতীয়, স্থানীয় ও অনলাইন পত্রিকায় এ সম্পর্কিত সংবাদ প্রচার ও প্রকাশিত হয়। পুলিশ প্রশাসন, প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির তাৎক্ষণিক ভূমিকা দেখে মনে হয়েছিলো ছাত্রীটি ন্যায় বিচার পাবে। কিন্তু দিন যতোই গড়াচ্ছে মনে হচ্ছে ঘটনাটি ততোই ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ছাত্রীরা শিক্ষক দ্বারা বিভিন্নভাবে লাঞ্ছিত হয়ে থাকে। কিন্তু ভয়ে বা লজ্জায় অনেক ছাত্রীই মুখ খুলতে চায় না। ফলে ঘটনাটি ধামাচাপা পড়ে যায়। ভুক্তভোগী এই ছাত্রীটি মুখ খোলায় অনেকেই সত্য প্রকাশের সাহস পেয়েছিলো। আর দ্রুত এর ন্যায় বিচার হলে হয়তো বা শিক্ষকদের এধরনের অপকর্ম অনেকটাই কমে যেতো।

ওই ছাত্রী এবং অভিযুক্ত শিক্ষক দুজনই লাহিনীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা হওয়ায়, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রাম্য রাজনীতি শুরু হয়েছে। এলাকার সচেতন সমাজ অভিযুক্ত শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করলেও বিপক্ষ একটি গ্রুপ শিক্ষক রফিকুলকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আর এ গ্রুপটির সাথে যুক্ত হয়েছে বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি। তারা ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করার জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি তারা বিভিন্ন অপপ্রচারেও মেতে উঠেছে। স্কুলছাত্রী দিন দিন একাকী হয়ে পড়ছে। স্কুলে গেলে শিক্ষকরা তার সাথে ভালো আচরণ করছে না। শিক্ষকদের ভয়ে তার সহপাঠীরাও তার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। এমনই একটি পরিবেশে মেয়েটি মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছে।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ঘটনার দিনই একটি সভা আহ্বান করে লোক দেখানো একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। আর ঘটনার সময় যারা বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলো না তাদেরকে করা হয়েছে এই তদন্ত কমিটির সদস্য। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট প্রদানের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দিন। যা দেখে মনে হয় পরিচালনা কমিটি ঘটনাটি নিয়ে নাটকীয়তা করছে। পরিচালনা কমিটির এ ভূমিকা দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছে এলাকাবাসী।

আবার ঘটনাটি বেশ কয়েকদিন হলেও আজও গ্রেফতার হয়নি শিক্ষক রফিকুল। এ বিষয়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও বিভিন্ন মহলে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে ওই ছাত্রীর পিতা বলেন, আমার মনে হচ্ছে ঘটনাটি প্রকাশ করা আমাদের ভুল হয়েছে। কারণ সত্য ঘটনা প্রকাশ করে আজ পর্যন্ত কোনো সুবিচার পেলাম না। বরং আমার মেয়ে সামাজিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আর আমাদের পরিবার এলাকার মানুষের কাছে হাস্যকর হয়ে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, সত্যের জয় একদিন হবেই, আমরা ন্যায় বিচার পাবো এ আশা রাখি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুমারখালী থানার এসআই আরিফ জানান, আসামিকে গ্রেফতারে জোর চেষ্টা চলছে। আমরা সব রকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল জলিলের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ঘটনার দিনই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি জরুরি মিটিং করেছে এবং পরবর্তীতে ৮ মার্চ আরেকটি মিটিং করে কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম আলিমানকে আহ্বায়ক এবং শহিদুল আলম খান ও আলমগীর হোসেনকে সদস্য করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে তদন্ত কমিটি এখনো তদন্ত রিপোর্ট প্রদান করেনি। তদন্ত রিপোর্ট পেলে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক আলিমান জানান, আমাকে আহ্বায়ক করা হয়েছে সত্য। কিন্তু আমি ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলাম না। তাই আমার পক্ষে তদন্ত করা সম্ভব নয় বলে আমি মূল কমিটিকে জানিয়ে দিয়েছি। এখন আহ্বায়ক কমিটির আর কোনো কার্যকারিতা নেই।

উল্লেখ্য, গত ৬ মার্চ কুমারখালী উপজেলার মীর মোশাররফ হোসেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইসলাম দশম শ্রেণির ছাত্রীকে বিদ্যালয়ের তৃতীয় তলার সিঁড়ির আড়ালে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। শিক্ষক রফিকুল এলাকার অনেক মেয়েকেই উত্ত্যক্ত করে। তারা লোকলজ্জার ভয়ে মুখ খুলেনি। এলাকাবাসীর এখন একটাই প্রশ্ন লম্পট শিক্ষক রফিকুল আর কতো ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করলে ম্যানেজিং কমিটি এবং পুলিশ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।