কিছুক্ষণের মধ্যেই অকালে পিতা-পুত্র হলো লাশ

 

 

সম্পত্তি নিয়ে দু ছেলের ঝগড়া : মাঝে পড়ে পিতার হৃদরোগ : ছোট ছেলের গলায় ফাঁস!

 

ঘটনাস্থল থেকে ফিরে সাইদুর রহমান: আলমডাঙ্গার পল্লি চিৎলা হুদাপাড়ার একটি পরিবার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। ফজলুল হক জোয়ার্দ্দার (৭০) ও তার ছোট ছেলে ফারুক হোসেন জোয়ার্দ্দারের (২৭) একই চৌকিতে পাশাপাশি দেখে স্থানীয়রা এ মন্তব্য করে বলেছেন, সিঙ্গাপুরে পাঠিয়েও বড় ছেলে খাইরুল তার পিতার সম্পদ সম্পত্তির লোভ ছাড়তে না পারায় পিতা-পুত্রের অপমূত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় পিতা-পুত্র পৃথকভাবে প্রাণ হারিয়ে লাশ হয়।

স্থানীয়রা বলেছেন, মাস দেড়েক আড়ে সিঙ্গাপুর থেকে বাড়ি ফিরেছেন ফজলুল হক জোয়ার্দ্দারের বড় ছেলে খাইরুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার। পিতার সম্পত্তি নিয়ে তিনি তার ছোট ভাই ফারুক হোসেন জোয়ার্দ্দারের সাথে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। ধস্তাধস্তিও হয়। দু ছেলের মারামারি ঠেকাতে গিয়ে পিতা ফজলুল হক জোয়ার্দ্দার অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। লাশ নিয়ে নিকটজনেরা বাড়ি ফিরেই দেখতে পান তার ছোট ছেলে ফারুক হোসেন জোয়ার্দ্দার ঘরের মধ্যে বৈদ্যুতিক পাখার সাথে চাঁদর দিয়ে গলায় ফাঁস লাগনো অবস্থায় ঝুলছে। তাকেও উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। কতর্বব্যরত চিকিৎসক ফারুককেও মৃত বলে ঘোষণা করেন। পিতা-পুত্রের লাশ বাড়ির উঠোনে একই চৌকিতে রাখা হলে গ্রামের সাধারণ মানুষ দেখতে ভিড় জমায়। গ্রামজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। গ্রামের অনেকেই পুলিশকে না জানিয়েই দাফনের প্রস্তুতি নিতে থাকে। অবশ্য পরে আসমানখালী মিনি থানা পুলিশ খবর পেয়ে আইনাগত ব্যবস্থা নেয়। গতরাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পিতা-পুত্রের মৃতদেহ তাদের বাড়িতেই রাখা ছিলো।

পরিবারের সদস্যদের কয়েকজন বলেছেন, ফজলুল হক জোয়ার্দ্দার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেছেন। পিতার খবর সহ্য করতে না পেরে ছোট ছেলে ফারুক ঘরের মধ্যে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। অবশ্য গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করা স্থান দেখে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছে, সিলিং ফ্যানটি খাটের ওপর। তাতে চাঁদর বা রশি বেধে ফাঁস লাগালে খাটে পা বেধে যাওয়ার কথা। পা বেধে গেলে কেউ কি মরে? এ প্রশ্নের জবাব অবশ্য তাৎক্ষণিকভাবে মেলেনি। পুলিশ প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার নবগঠিত চিৎলা ইউনিয়নের চিৎলা হুদাপাড়ার ফজলুল হক জোয়ার্দ্দার সচ্ছল কৃষক। মাঠে অনেক আবাদি জমি রয়েছে। তার দু ছেলে দু মেয়ের মধ্যে সকলেই বিবাহিত। বড় ছেলে খাইরুল ইসলামকে কয়েক বছর আগে সিঙ্গাপুরে পাঠান পিতা। তাকে সিঙ্গাপুর পাঠাতে বাড়তি খরচের কারণেই পিতা দু সন্তানের প্রতি ন্যায় বিচারের দৃষ্টিতে দেখে ছোট ছেলেকে একটু বেশি করে জমি দেয়ার কথা ভাবতে থাকেন। মাস দেড়েক আগে খাইরুল দেশে ফেরেন। বিষয়টি জানার পর মাঝে মাঝেই ঝগড়া করেন। গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকেই ফজলুল হকের দু ছেলে খাইরুল ও ফারুক ঝগড়া শুরু করে। সন্ধ্যায় ঝগড়া মারামারিতে রূপ নেয়। দৃশ্য দেখে পিতা ঠেকাতে এগিয়ে যান। এসময়ই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ধাক্কায় নাকি উত্তেজনার বসে হৃদরোগে অক্রান্ত হন তা অবশ্য নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেননি। ফজলুল হককে হাসপাতালে নেয়া হয়। বাড়িতে থাকেন ছোট ছেলে ফারুক। তিনি বাড়িতে বসেই পিতার মৃত্যুর খবর পেয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করা হলেও অনেকে তা মানতে নারাজ। আত্মহত্যার স্থানটিই সন্দেহের মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।