কালীগঞ্জে বাফার গুদামের দুই ইউনিটে জমাট বাঁধা সার ভাঙা হচ্ছে ইট ভাঙ্গা মেশিন দিয়ে  : অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার অভিযোগ

শিপলু জামান: ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প সংস্থার (বিসিআইসি) বাফার গুদামের দুই ইউনিটে জমাট বাঁধা প্রায় ৪৫ হাজার বস্তা সার ইট ভাঙা মেশিন দিয়ে ভাঙা হচ্ছে। গত কয়েক মাস ধরে এই সার গুদামের মধ্যে মেশিন বসিয়ে গোপনে ভাঙা হচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গতকাল মঙ্গলবার বেলা ২টার দিকে বাফার গোডাউনের ২ নং ইউনিটে ৬ জন লেবার জমাট বাঁধা সার মেশিন দিয়ে ভাঙার কাজ করছে। পুরাতন বস্তা থেকে জমাট বাঁধা সার বের করে ভাঙার পর তা নতুন বস্তায় ভরে ওজন শেষে সেলাই করা হচ্ছে। নতুন বস্তার গায়ে আমদানিকারক দেশের নাম লেখা না থাকলেও বিসিআইসি বাংলাদেশ লেখা আছে।

কর্মরত এক লেবার হাফিজুর রহমান জানান, আমরা বেশ কয়েক মাস ধরে ২টা ইউনিটে জমাট বাঁধা সার ভাঙার কাজ করছি। ১ নং ইউনিটে প্রায় ৪০ হাজার বস্তা জমাট বাঁধা সার ভেঙে তা নতুন বস্তায় ভরেছি। এরপর ২ নং ইউনিটে জমাট বাঁধা সার ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। এই ইউনিটে প্রায় ৫ হাজার বস্তা জমাট বাঁধা সার আছে বলে বাফার কর্মকর্তারা আমাদেরকে জানিয়েছে।

কালীগঞ্জ সার ডিলার সমিতির সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, এই জমাট বাঁধা সার প্রায় ১০-১২ বছর আগের। এসব জমাট বাঁধা সার কৃষক নিতে চায় না। বিভিন্ন সময় ডিলারদের চাপ প্রয়োগ করে এই জমাট বাঁধা সার নিতে বাধ্য করা হয়েছে। সার না নিলে ডিলারদের লাইসেন্স বাতিল করার হুমকিও দেয়া হয়েছে। বাধ্য হয়েই ডিলাররা এই সার উত্তোলন করতো এবং কৃষকরা না নেয়ায় তা গোডাউনে পড়ে থাকে। আমার ঘরেও প্রায় লক্ষাধিক টাকার জমাট বাঁধা সার পড়ে আছে। বিক্রি করতে পারছি না। পরে বাধ্য হয়ে কর্তৃপক্ষ জমাট বাঁধা সার ভাঙার স্বিদ্ধান্ত নেয়। এই সার ভাঙার পর ইটের খোয়া ও পাউডারের মতো হচ্ছে। এই নিম্নমানের সারও কৃষকরা নিতে চাচ্ছে না। এই সারের মেয়াদ ২৫ মাসের বেশি থাকে না কিন্তু কর্তৃপক্ষ ১০-১২ বছরের পড়ে থাকা ইউরিয়া সার এভাবে মাড়াই করে সার গুদামের দরজা বন্ধ করে মাড়াই করে বস্তা ভর্তি করছে।

তিনি আরও জানান, কালীগঞ্জের এই বাফার সার গোডাউনের অধীনে প্রায় ২৩৪ জন ডিলার ছিলো। কিন্তু নিম্নমানের সার ও বিভিন্ন অনিয়মের জন্য কিছুদিন আগে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার প্রায় ১০০ ডিলার এই গোডাউন থেকে সার নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এবং তারা কুষ্টিয়ার মোহিনী গোডাউন থেকে বর্তমানে সার নিচ্ছে। কালীগঞ্জের বাফার গোডাউনের লেবার কন্ট্রাক্টর, পরিবহন কন্ট্রাক্টর, বিসিআইসি কর্মকর্তাদের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে অচিরেই এই গোডাউনটি বন্ধ হতে পারে বলে তিনি আশংকা প্রকাশ করেন।

এছাড়া কালীগঞ্জের বাফার গোডাউনের লেবার কন্ট্রাক্টর, পরিবহন কন্ট্রাক্টররা নিজেদের মালিকাধীন ট্রাকে  বাফার গুদাম থেকে কালীগঞ্জ শহরের ডিলারদের নিকট সার পৌঁছিয়ে দিতে গাড়ি প্রতি ১১ থেকে ১২ হাজার টাকা অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

কালীগঞ্জ বাফার সার গোডাউনের ইনচার্জ মাসুদ রানা প্রতিবেদককে জানান, এই সার ভাঙার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন রয়েছে। প্রায় ২-৩ মাস ধরে ৪৫ হাজার বস্তা জমাট বাঁধা সার ভাঙা হয়েছে। ডিলারদের বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, আমরা কাউকেই হুমকি দিয়ে সার নিতে বাধ্য করি না।