কালীগঞ্জে পিটিয়ে ও পেরেক ঢুকিয়ে অমানুষিক শিশু নির্যাতন

 

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে পারভেজ হোসেন নামের এক শিশু শ্রমিককে পিটিয়ে ও পুরুষাঙ্গে পেরেক ঢুকিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে। নির্যাতনের ক্ষত নিয়ে পারভেজ এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। নির্যাতনের শিকার শিশু পারভেজ হোসেন মাগুরার শালিকা উপজেলার সিমাখালীর পিয়ারপুর গ্রামের শিমুল হোসেনের ছেলে। সে জন্মের পর থেকে কালীগঞ্জ উপজেলার দামোদরপুর গ্রামে তার নানা জিল্লুর রহমানের বাড়িতে থাকতো। এদিকে লোমহর্ষক এই নির্যাতনের বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হলেও সংবাদকর্মীদের তৎপরতায় ১০ দিন পর ফাঁস হয়ে পড়ে।

অভিযোগ উঠেছে, ভয়াবহ এই নির্যাতনের পরও কালীগঞ্জ থানা মামলা রেকর্ড করতে গড়িমসি করছে। এজাহারে প্রভাবশালীদের নাম থাকায় পুলিশ এখনো মামলা রেকর্ড করেনি বলে অভিযোগ করেন নির্যাতিত শিশুর মা পারভিনা বেগম। ২ বার এজাহার কাটাছেঁড়া করে অভিযোগ জমা দেয়া হয়েছে। এদিকে ঘটনার পর হতে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা ও মেয়ের পরিবারের লোকজন মামলা না করার জন্য হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।

পারভেজের মা পারভীনা বেগম জানান, পারভেজ ও তার চাচাতো ভাই গত ২২ জুন বিকেল ৫টার দিকে কালীগঞ্জের দাসবায়সা গ্রামের আজিজুল ইসলামের মেয়ের সাথে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিলো। এ সময় মেয়ের বাবা আজিজুল ও তার লোকজন এসে পারভেজকে মারধর করে ধরে নিয়ে যায়। পারভেজের সাথে থাকা তার চাচাতো ভাই নাজমুল পালিয়ে এসে বাড়িতে এ খবর দেয়। এরপর পরিবারের লোকজন দাসবায়সা গ্রামে যেয়ে পারভেজকে খুঁজে না পেয়ে তারা ফিরে আসে।

পারভেজের মা পারভীনা বেগম আরও বলেন, ওইদিন সারারাত আজিজুল ও তার লোকজন আমার ছেলের ওপর অমানুষিক নির্যাতন করে। পরের দিন ২৩ জুন দুপুর ১২টায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সাগর বিশ্বাস তাদের ফোনে জানায় তোমাদের ছেলেকে পাওয়া গেছে এসে নিয়ে যাও। এরপর পরিবারের লোকজন গিয়ে দেখে পারভেজ অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। নির্যাতনের ফলে আমার ছেলে পারভেজ টয়লেট করে ফেলে। মলমুত্র তার সমস্ত শরীরে মেখে ছিলো। ছেলের অবস্থা খারাপ দেখে ২৩ জুন বেলা ২টার দিকে প্রথমে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করি। পারভেজের অবস্থার অবনতি দেখে ডাক্তাররা তাকে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে। সেখানে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর রাতেই ডাক্তাররা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। বর্তমানে পারভেজ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০০ নং ওয়ার্ডের ইউনিট-২’র বি-৪০ নং বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ৭ দিন পর পারভেজের জ্ঞান ফিরলেও তার শরীর এখনো স্বাভাবিক হয়নি। কয়েক দফা অপারেশন করা হয়েছে।

এ ঘটনায় কোলাবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মিজানুর রহমানের সাথে আলাপ করলে তিনি প্রথমে ঘটনাটি অস্বীকার করেন। পরে তিনি জানান, আমরা ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই ছেলেটিকে চড় থাপ্পড় মেরে স্থানীয় ২-৪ জন নেতা ঘটনাটি মীমাংশা করে ছেড়ে দিয়েছে। পরে তিনি ছেলের অভিভাবকদের ডেকে শিশু পারভেজকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন বলে জানান। তবে পারভেজের পরিবারের দাবি দারোগার উপস্থিতিতেই আহত পারভেজকে অজ্ঞান অবস্থায় ভ্যানে ডেকে তুলে দেয়া হয়। স্থানীয় কোলা ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের মেম্বার জাফর হোসেন জানান, কারা কিভাবে নির্যাতন করেছে এটা আমি বলতে পরবো না। তবে পারভেজের চিকিৎসার জন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে ১২ হাজার টাকা এবং গ্রাম থেকে প্রায় লক্ষাধিক টাকা সংগ্রহ করে দিয়েছি। এদিকে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার খবর পেয়ে তিনি নির্যাতিত শিশু পারভেজকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন বলে তার নানা জিল্লুর রহমান জানান।

কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় তিনি একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। তিনি মামলা রেকর্ড করার বিষয়য়ে বলেন, পারভেজের মা ও নানা বিষয়টি মীমাংশা করার কথা বলেছেন। এ জন্য মামলা রেকর্ড করা হয়নি। তবে নির্যাতিত শিশুটির নানা জিল্লুর রহমান জানান, আমি কোনো মীমাংশার কথা বলিনি। আমি নির্যাতনের সুষ্ঠ বিচার চাই। পারভেজের চাচাতো নানা লিটন চৌধুরী অভিযোগ করেন, আমরা কোনো মীমাংশার মধ্যে নেই। আমরা সুবিচার চাই। যেভাবে পারভেজের পুরুষাঙ্গে পেরেক ঢুকিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে তা নজীর বিহীন বলেও তিনি দাবি করেন।

বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ জানান, বিষয়টি আমার জানা ছিলো না। আমি খোঁজ নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।