কাপ জয়ের স্বপ্নে উদ্বেল আর্জেন্টিনা

এখনো বিস্ময়ের ঘোর কাটেনি ব্রাজিলবাসীর : পুলিশ পাহারায় নেইমার

স্টাফ রিপোর্টার: ব্রাজিলের লজ্জার পরাজয়ের পর তাদের সমর্থকদের অনেকেই মনে মনে আর্জেটিনার পরাজয় প্রত্যাশী হয়ে ওঠে। তৃতীয় স্থান নির্ধারণী খেলায় আর্জেটিনাকে পেলে ব্রাজিল সমর্থকদের তৃপ্তি মিটতো বলেই তাদের অভিমত। বিশেষ করে বাংলাদেশে ওই দু দেশের সমর্থকদের মধ্যে এই মনোভাবটাই ঘুরে ঘুরে ফিরে প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু না, আজের্টিনা ফাইনালে। ব্রাজিল আগামীকাল শনিবার মুখোমুখি হবে নেদারল্যান্ডের সাথে তৃতীয় স্থান নির্ধারনী খেলায়।

বাংলাদেশের ব্রাজিল সমর্থকরা লজ্জার পরাজয়ের যুক্তি খুজে না পেলেও আর্জেন্টিনার সমর্থকরা এখন শিরোপা নেয়ার প্রহর গুণছে। যে জার্মানি ব্রাজিলকে হারিয়েছে ৭-১ গোলে, সেই জার্মানির সাথে রোববার আর্জেন্টিনা। কি হবে কেমন হবে? এসব প্রশ্ন এখন আর্জেন্টিনার মানুষের কাছে তেমন গুরু্ত্ব পাচ্ছে না। তারা এখন আনন্দে ভাসছে। গত বুধবার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালেনেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে ২৪ বছর পর আবার ফাইনালে ওঠায় দেশটির রাজধানীবুয়েন্স আয়ার্সের রাস্তায় নেমে আসে হাজারো সমর্থক। রাতভর বুয়েন্স আয়ার্সেজয় উদযাপন করার সময় নীল-শাদা পোশাকে সজ্জিত সমর্থকদের হাতে ছিলোআর্জেন্টিনার পতাকা। অপরদিকে ব্রাজিল মঙ্গলবারেরম্যাচে তাদের দুঃখজনক পরাজয়ের ফলে জন্ম নেয়া বিস্ময়ের ঘোর কাটেনি এখনো।

পুরোব্রাজিল জুড়ে উঠে আসছে আগে কতোবার ব্রাজিল ফুটবল লজ্জা দিয়েছিলো ফুটবলদুনিয়াকে। কেউ বলছেন ছয়বার। ব্রাজিল ফুটবল ট্র্যাজেডি নিয়ে বই প্রকাশ হয়েছেএবার। ১৯৩০ সালে বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগে ১৯২০ সালে উরুগুয়ে ৬-০ গোলেহারিয়েছিলো ব্রাজিলকে।আধুনিক ফুটবলের যুগে ব্রাজিল ফুটবলের ইতিহাসেএমন ঘটনা ঘটতে পারে তা এখনো কেউ বিশ্বাস করছেন না। সবাই যেন দুঃস্বপ্নেরমধ্যে আছে। ক’দিন আগে ব্রাজিল তারকা রবার্তো কার্লোসের সাথে সাও পাওলোরএরিনা করিন্থান্সের মিডিয়া ক্যাফেটেরিয়ায় বিশ্বকাপ নিয়ে কথা হয়েছিলো। তিনিবলেছেন, আর্জেন্টিনার নো চান্স। ব্রাজিলই চ্যাম্পিয়ন হবে। সেই রবার্তোকার্লোসের সাথে আবার দেখা হলো। জানতে চাইলে তিনি বললেন, আমিও বুঝলাম নাকি হলো। জার্মানির কাছে শোচনীয়ভাবে হেরে আমিও মুখ দেখাতে পারছি না।অনেকেই আমাকে একই প্রশ্ন করছেন উত্তর নেই আমার কাছে, বলে চলে গেলেনকার্লোস।নেইমার আহত হয়ে যতোটা কষ্ট পেয়েছিলেন তার চেয়েও বেশি কষ্ট পেলেন জার্মানিরকাছে ৭-১ গোলের হারে। এমন হাল হবে নেইমারও ভাবেননি। নেইমার ব্রাজিলকেকোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত টেনে নিয়ে এসেছেন। তার ফুটবল যেন পুরো দলকেউজ্জীবিত করে। ব্রাজিলীয়দের মাঠে টানে। তিনি সাও পাওলোর গুয়ারোজা এলাকারবাড়িতে আছেন। বাড়ি আসার পর সেখানে ভীড় অনেক বেড়ে গেছে। ফলে পুলিশ পাহারাবসাতে হয়েছে। সবাইকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। এমনকি সংবাদ মাধ্যমকেও প্রবেশকরতে দেয়া হচ্ছে না বলে জানা গেছে।

ব্রাজিলের সাংবাদিকরা জানান, আমাদের বড়বড় মিডিয়া প্রতিষ্ঠান থেকে যোগাযোগ করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। ব্রাজিলের ক্ষুব্ধরা নেইমারের জার্সিতেও আগুন ধরিয়ে ক্ষোভ মেটানোর চেষ্টা করছে।

অপরদিকে দু যুগ পর ম্যারাডোনার উত্তরসূরীরা ফাইনালেউঠলো। বুধবার ছিলো আর্জেন্টিনার স্বাধীনতা দিবস। দিবসটি উপলক্ষে জাতীয়ছুটির দিন ছিলো। স্বাধীনতা দিবসে এমন একটা জয় পেয়ে গোটা দেশের মানুষ একপতাকার নিচে এসে দাঁড়ায়। খেলা শুরুর পর থেকেই নীল-শাদারা অপেক্ষা করছিলোকখন আসবে মেসির পা ছুঁয়ে কাঙ্ক্ষিত জয়। প্রথমার্ধে বেশ কয়েকটি সুযোগ তৈরিহলেও গোলের দেখা পায়নি মেসির দল। দ্বিতীয়ার্ধেও আর্জেন্টাইনদের অপেক্ষারপ্রহর শেষ হলো না। খেলা গড়ালো অতিরিক্ত সময়ে। এরপরও যখন খেলার ফলাফলনির্ধারিত হলো না তখন টাইব্রেকার ছাড়া উপায় কী। এর আগের খেলায় ডাচরাটাইব্রেকারেই কোস্টারিকাকে হারিয়ে জায়গা করে নিয়েছিলো সেমিতে। তাইটাইব্রেকার নিয়ে বেশ উত্কণ্ঠায় ছিলেন আর্জেন্টাইনরা। গোলরক্ষক রোমেরোনেদারল্যান্ডসের প্রথম গোলটি ঠেকানোর সাথে সাথেই বুয়েন্স আয়ার্স, সানজুয়ান, রেসিটেন্সিয়া, বোরেলোসে, করদোবা, মেনদোজা, সান্তা ফে, রোজারিওসহ অন্যান্য বড় বড় শহরে জায়ান্ট স্ক্রিনে খেলা দেখতে আসা নীল শাদারসমর্থকরা আনন্দে ফেটে পড়লেন। ডাচদের তৃতীয় শটটিও রোমেরো প্রতিহত করলেআর্জেন্টাইনদের জয় তখন সময়ের ব্যাপার। আর আর্জেন্টিনার চতুর্থ শটে মেক্সিরড্রিগেজের বল জালের ঠিকানা খুঁজে পেলে আনন্দে ফেটে পড়ে গোটা দেশ। সারারাতনেচে গেয়ে শহর মাতিয়ে রাখে আর্জেন্টাইন ভক্তরা।

দেশটির আর্থিকসংকটের মধ্যেও আর্জেন্টিনার মানুষজন উত্ফুল্ল। রাজপথে নেমে আসা ফুটবলভক্তরা বলেন, বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার জয়ে দেশের আর্থিক সঙ্কটের গুরুভারআমাদের কাছে অনেকটা হাল্কা হয়ে গেছে। ৫৯ বয়সী নরমা ওন্টিভারোস বলেন, অন্যখেলাগুলোতে আমরা খুব একটা ভালো করতে না পারলেও যোগ্যতার নিরিখেই সেমিতেজয় পেয়েছি। এই জয়ের মাধ্যমেই আমরা দেখাতে চাই আমাদের সব কিছুই মন্দ নয়।আমাদের খুব ভালো একটি দল রয়েছে এবং আমাদের মানুষগুলোও ভালো।
টাইব্রেকারেজয় নিশ্চিত হওয়ার পর ব্রাজিলের মাঠে খেলা দেখতে আসা হাজারো আর্জেন্টাইনদর্শক কেঁদে ফেলেন। আবেগাপ্লুত হয়ে তারা একে অন্যকে আলিঙ্গন করেন এবংআকাশের দিকে হাত তুলে ধরেন। এই জয়ের মধ্যদিয়ে দক্ষিণ আমেরিকার দেশটি দুযুগ পরে ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করলো।
আগামী রোববার ফাইনালে জার্মানিরমুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা। সিলভিও মার্টিনিজ নামের ৩২ বছর বয়সী একআর্জেন্টাইন সমর্থক বলেন, জার্মনির বিপক্ষে ব্রাজিলের পরাজয়ের পরআর্জেন্টিনার জয়টা ব্রাজিলীয়দের কাছে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটার মতো।জার্মানির বিপক্ষে আর্জেন্টিনা জিতলে ব্রাজিলের কফিনে শেষ পেরেকটা ঠোকাহবে। আমাদের পক্ষ থেকে সেটা হবে ব্রাজিলকে শেষ আঘাত।