কান্তপুরের দু বাড়িতে সশস্ত্র যুবকদের ভাঙচুর : লুটপাটের অভিযোগ

আলমডাঙ্গার পূর্বকমলাপুর ব্রিজমোড়সহ আশপাশ এলাকায় চাদাঁবাজচক্র বেপরোয়া : প্রতিবাদ

 

কান্তপুর থেকে ফিরে আলম আশরাফ: আলমডাঙ্গার কান্তপুর গ্রামের বিশিষ্ট গরুব্যবসায়ী আত্তাপ ব্যাপারীর বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়েছে। একদল যুবক শুক্রবার রাতে মোটরসাইকেলযোগে সন্ত্রাসী কায়দায় কান্তপুরে এ তাণ্ডব চালায়। তাণ্ডব চালানো হয়েছে তার ছোটভাই সাহেব আলীর বাড়িতেও। চাঁদাবাজি করার অভিযোগে ওই যুবকরা এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে বলে কেউ কেউ জানিয়েছেন। ভাঙচুরের পাশাপাশি বাড়িতে লুটপাটও করা হয়েছে বলে আত্তাপ ব্যাপারীর স্ত্রী ববিতা খাতুন অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেছে চেয়ারম্যান ফারুকের নেতৃত্বে একদল যুবক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শুক্রবার রাতে এ হামলা চালায়।

জানা গেছে, সম্প্রতি আলমডাঙ্গার বিভিন্ন এলাকায় বেপরোয়াভাবে শুরু হয়েছে চাঁদাবাজি। পুলিশকে জানিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না সাধারণ মানুষের। জেহালা ইউনিয়নের পূর্বকমলাপুর ব্রিজমোড়ে ৮ ব্যবসায়ী, মুন্সিগঞ্জ পশুহাটের কয়েকজন ব্যবসায়ী ও বোয়ালমারী গ্রামের এক শিক্ষকের কাছে মোবাইল ফোনে চাঁদার দাবিতে বিভিন্নভাবে হুমকি অব্যাহত রেখেছে চাঁদাবাজ চক্র। মোবাইলফোনে অকথ্য ভাষায় গালাগালি দিয়ে খুনের হুমকি দিচ্ছে প্রতিনিয়ত তারা। চাঁদাবাজদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী। চরমপন্থি দলের বাবু দা পরিচয় দিয়ে পূর্বকমলাপুর ব্রিজ মোড়ের ব্যবসায়ী নাডু,লাবলু,সাজু,শাফায়েত,মমিন,বুরাহান,কালুও মতির কাছে ৪ লাখ করে টাকা চাদা দাবি করে। গতকাল শনিবার বটিয়াপাড়া গ্রামের রফিকুল, মুন্সিগঞ্জ পশুহাটের সার ডিলার উম্বাদ আলী জোয়ার্দ্দার, সারব্যবসায়ী আলমগীর এবং রাজ্জাকের কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করা হয়েছে। এছাড়া চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের নীলমণিগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক বোয়ালমারী গ্রামের খলিলুর রহমানের কাছে দু লাখ টাকা দাবি করে চাঁদাবাজরা। এরই মধ্যে অভিযোগ ওঠে কান্তপুর গ্রামের প্রবাস ফেরত (দেড় মাস আগে) সাহেব,কলেজছাত্র সিনামুল ও ওয়াকুল এই চাঁদাবাজির হোতা। অভিযোগকারীরা জানায়,দামুড়হুদার কলাবাড়ি গ্রামের তরুন ওরফে জিনা এই চাঁদাবাজ চক্রের লিডার। তিনি কখনো নিজেকে বাবু দা আবার কখনো আজিম কিয়া পারিচয় দিয়ে চাঁদাবাজি করে আসছে। এছাড়া কান্তপুর গ্রামের মৃত বজলুর রহমান ওরফে বলাই মালিথার ছেলে প্রবাস ফেরত সাহেব আলী,আত্তাপ ব্যাপারীর ছেলে কলেজছাত্র সিনামুল ও একই গ্রামের ওয়াকুল চাঁদাবাজির সাথে জড়িত বলে অভিযোগ তুলেছে অনেকেই। এ অভিযোগ তুলে গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে একদল যুবক কান্তপুর গ্রামে হামলা চালায়। তারা ২০-২২টা মোটরসাইকেলযোগে কান্তপুর গ্রামে ঢোকে। প্রত্যক্ষদর্শী গ্রামের লোকজন জানায়, প্রত্যেক মোটরসাইকেলে ৩ জন লোক ছিলো। তাদের হাতে ধারালো অস্ত্রশস্ত্র ও লাঠিসোঁটা ছিলো। সন্ত্রাসীদের কালো হাত ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও বলে তারা স্লোগানও দেয়। তাদের কারণে কান্তপুর গ্রামে এ সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গ্রামবাসী এর কিছুক্ষণ আগে গ্রামে পুলিশ থাকতে দেখলেও পরে আর পুলিশকে পায় না।

গতকাল শনিবার বেলা ২টার দিকে কান্তপুর গ্রামের গরু ব্যবসায়ী আত্তাপ ব্যাপারীর বাড়িতে যান এই প্রতিবেদক। এ সময় তার স্ত্রী ববিতা খাতুন অভিযোগ করে জানান, ‘শুক্রবার দিনগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে চেয়ারম্যান ফারুকের নেতৃত্বে একদল যুবক বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। তারা ঘরের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে ফ্রিজ, টেলিভিশন, ডাইনিং টেবিল, চেয়ার, আলমারিসহ প্রায় ৩ লাখ টাকা মূল্যের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। ঘরে যা ছিলো সব ভেঙে চুরমার করেছে। একবেলা ভাত খাওয়ার মতো একটা থালা-বাটিও অবশিষ্ট রাখেনি তারা। ঘরে রাখা গরু ব্যবসার ৩ লাখ ১৭ হাজার টাকা ও সোনার গয়নাগাটিও লুটপাট করে নিয়ে যায় তারা। গ্রামবাসী এ সময় জেনেও ভয়ে কেউ হামলাকারীদের সামনে আসেনি। এ ঘটনার পরপরই পুলিশ আসে বাড়িতে। কিন্তু তারা দেখেই খালাস। কোনো ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস না দিয়েই তারা চলে যায় বলে‘ অভিযোগ করেন ববিতা। এ ছাড়া গরু ব্যবসায়ী আত্তাপ ব্যাপারী জানান, অভিযুক্ত সাহেব আমার ছোট ভাই হলেও আমি আলাদা স্থানে বসবাস করি। সে আমার সংসার থেকে আলাদা। তাহলে কেন আমার বাড়িতে ভাঙচুর করা হলো? তাছাড়া আমার ছেলে সিনামুল কলেজছাত্র। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ মিথ্যা।

এর আগে একই হামলাকারীরা চাঁদাবাজে অভিযুক্ত সাহেবের বাড়িতেও হামলাকারীরা ভাঙচুর চালায়। এ ছাড়া গ্রামের সাধারণ কৃষক ওয়াকুলকে মারধর ও কোপানো হয়। ইয়াকুব সরদারের ছেলে ওয়াকুলকে রাতেই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গতরাতে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

কান্তপুর গ্রামে হামলা ও ভাঙচুররের ব্যাপারে মোমিনপুর ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক জোয়ার্দ্দারের কাছে মোবাইলফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কান্তপুর গ্রামে হামলার বিষয়ে আমি শুনেছি। সন্ত্রাস চাঁদাবাজিকে জনগণ সমর্থন করে না। সন্ত্রাস চাঁদাবাজ প্রতিহত করতে পুলিশ প্রশাসন ব্যর্থ হলে জনগণ এভাবেই জবাব দেবে।’