কানে ইয়ারফোন হাতে মোবাইলসেট : ট্রেনে কেটে দ্বিখণ্ড মেধাবী ছাত্র কানন

চুয়াডাঙ্গার গাইদঘাটের সেই আতঙ্কিত স্থানে বেখেয়ালে বসে থাকা কলেজছাত্রের পেছনে এলো মালবাহী ট্রেন

স্টাফ রিপোর্টার: মেধাবী ছাত্র কাননের কানে ইয়ারফোন, হাতে স্মার্ট মোবাইলসেট। রেললাইনের ওপর বসে আনমনে টিপাটিপির সময় পেছনে মালবাহী ট্রেন এসে ১৫৬ হাত দূরে ট্রেনে দেহটা বুক থেকে দ্বিখণ্ড করে চলে গেলো। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল বিকেলে চুয়াডাঙ্গার গাইদঘাটের সেই বিহারী গেটের অদূরে। যেখানে ঘটেছিলো দেশের ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা।
মালবাহী ট্র্রেনে কেটে নিহত ইমরান হোসেন কানন গাইদঘাট দক্ষিণপাড়ার কামাল উদ্দীনের ছেলে। সে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের হিসাব বিজ্ঞান সম্মানের শেষবর্ষের ছাত্র। মাঝে কিছুদিন হাসপাতাল গেটের দুটি প্রতিষ্ঠানে বসে ব্যবসার হিসেব শিখতেন। কানন লেখাপড়ার পাশাপাশি চাকরির জন্য চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছিলো। কয়েকটি নিয়োগ লিখিত পরীক্ষায় টিকলেও মৌখিকে তাকে বাদ পড়তে হয়েছে। এসব নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই একটু অন্যমনষ্ক হয়েই চলাফেরা করতো বলে মন্তব্য তার পরিবারসহ প্রতিবেশীদের অনেকের। গতরাতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই নিজ গ্রামের কবরস্থানে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। ইমরান হোসেন কানন ছিলো তার পিতা-মাতার একমাত্র ছেলে। দু’ভাই-বোনের মধ্যে সে ছিলো বড়। কাননের পিতা কামাল উদ্দীন জীবননগর উপজেলা কৃষি অফিসে চাকরি করেন।
সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা জানান, ইমরান হোসেন কানন গ্রামে একজন মেধাবী ও বিনয়ী ছেলে হিসেবেই পরিচিত ছিলো। মাঝে মাঝে তাকে আনমনা হয়ে পথ চলতে দেখা গেলেও কারো সাথে কখনই অসৌজন্যমূলক আচরণ করতো না। ওর খারাপ কিছু কারোর চোখে পড়েনি। গতকাল দুপুরের খাওয়া-দাওয়া শেষে বাইসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। বিহারী গেট বা স্মৃতি সৌধের মাঠের নিকট রেললাইনের ওপর বসে মোবাইলফোন নাড়াচাড়া করছিলো। কানে ছিলো ইয়ারফোন। বিকেল পৌনে ৪টার দিকে খুলনা থেকে নাটোরের উদ্দেশে ছেড়ে আশা মালবাহী ট্রেন তাকে ধাক্কা দেয়। দেড়শ হাত দূরে ঠেলে নিয়ে তাকে কেটে ট্রেনটি অতিক্রম করে। ঘটনাস্থলে পড়ে থাকে দ্বিখ-িত লাশ। ইমরান হোসেন কাননের অস্বাভাবিক এ মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে গ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন পিতা-মাতাসহ পরিবারের সদস্যরা। স্থানীয়দের অভিমত, কানে মোবাইলফোনের হেডফোন গুজে রাখার কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল সন্ধ্যার পর যখন নিজ গ্রামের কবরস্থানে দাফনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয় তখনই জিআরপি সদস্যরা পৌঁছুয় শোকার্ত বাড়িতে। পরে প্রশাসনের অনুমোদন নিয়েই ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন করা হয়।