কলেজছাত্র হত্যা : পছন্দের পাত্রী পাওয়ার পথের কাটা সরাতেই বন্ধু হত্যা করেছে বন্ধুকে!

চুয়াডাঙ্গার ছয়ঘরিয়ার মাঠে ভুট্টাক্ষেতের জমি উঁচু দেখে কৌতূহলবশে খুঁড়তেই মিললো লাশ

 

সরোজগঞ্জ/ডিঙ্গেদহ প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছয়ঘরিয়ার শিমুল হোসেনকে তার গ্রামের কয়েক বন্ধু শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। গতপরশু রাতে তাকে ডেকে নিয়ে গ্রাম সংলগ্ন মুচিতলা মাঠে চাঁদর দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যার পর একটি ভুট্টাক্ষেতে লাশ পুঁতে রাখে। শিমুল হোসেন চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়া কচুখালীপাড়ার কৃষক আহম্মেদ আলীর ছেলে।

-111

শিমুল গত পরশু রাতে বাড়ি না ফেরায় তার পিতা-মাতাসহ পরিবারর সদস্যরা যখন খোঁজাখুজিতে ব্যস্ত তখন গ্রামেরই কৃষক তার ভুট্টাক্ষেতের কোপানো মাটি হঠাত উঁচু দেখে কৌতূহলবশে খুঁড়ে লাশ উদ্ধার করেন। পুলিশ খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ পুঁতে রাখা ক্ষেত থেকেই মূল ঘাতক সেকেন্দারকে গ্রেফতার করে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাদের অপর বন্ধু মোসারফ ওরফে মোসাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। সেকেন্দার প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, ‘শিমুল যাকে ভালোবাসে, তাকে আমিও ভালোবাসি। শিমুল থাকলে আমি আমার পছন্দের পাত্রীকে স্ত্রী হিসেবে পাবো না। এ কারণেই আমরা কয়েকজন মিলে তাকে গ্রামের একটি চা দোকান থেকে ডেকে নিয়ে পার্শ্ববর্তী বাগানে বসে আড্ডা দেয়ার পর সুযোগ বুঝে হত্যা করেছি।’ আত্মস্বীকৃত ঘাতক সেকেন্দারকে সকাল থেকেই স্থানীয়রা সন্দেহের দৃষ্টিতে রাখে। স্থানীয়দের সহযোগিতায় দ্রুত তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। সে একই গ্রামের শাহাজান আলীর ছেলে। মোসা একই গ্রামের তোফাজ্জেলের ছেলে। এদের দুজনসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে গতকালই শিমুলের পিতা আহম্মদ আলী বাদী হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় হত্যামামলা দায়ের করেছেন।

পুলিশ আত্মস্বীকৃত ঘাতক সেকেন্দারের বক্তব্যের সত্যতা খতিয়ে দেখছে। কথায় কিছু গরমিল থাকায় পুলিশ পড়েছে ধন্ধে। তবে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে গতকাল কর্মরত ওসি (তদন্ত) ইন্সপেক্টর ফারুক বলেছেন, লাশ উদ্ধারের পরপরই দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে সেকেন্দার অকপটে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। আরো তথ্যের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে। মামলাটির তদন্তভার পেয়েছেন সদর থানার এসআই রবিউল ইসলাম। খবর পেয়ে গতকালই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সালেহ উদ্দীনসহ পুলিশ কর্মকর্তাদের অনেকে।

যেভাবে লাশের খবর পাওয়া গেলো: ছয়ঘরিয়া মসতলার মাঠে বহালগাছি গ্রামের ডা. আবুল হোসেনের ভুট্টাক্ষেতে শ্রমিকরা আগাছা পরিষ্কার করতে গিয়ে কবর আকৃতি মাটি খোঁড়া অবস্থা দেখতে পান। এ সময় মাটি খুঁড়ে শিমুলের লাশ দেখতে পেয়ে তারা শিমুলের পিতার নিকট ও সরোজগঞ্জ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই সেকেন্দার আলীকে খবর দেন। খবর পেয়ে শিমুলের পিতা ও সরোজগঞ্জ ক্যাম্প ইনচার্জ এস আই সেকেন্দার আলী ছুটে আসেন। লাশ উদ্ধারের কিছু সময় পর ঘটনার নেপথ্য উন্মোচন এবং সন্দেহভাজনদের ধরতে অভিযানে নামে পুলিশ। এ সময় একই পাড়ার শাজাহান আলীর ছেলে সেকেন্দারকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করে পুলিশ। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যার দায় স্বীকার করে তার সহযোগীদের নাম বলে এবং কীভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে সেটাও সে স্বীকার করেছে। তারই তথ্যের ভিত্তিতে দুপুরে একই পাড়ার মৃত তোফার ছেলে মোসারেফকে আটক করা হয়েছে।

নিহতের পরিবারের সদস্যরা যা বলেন: নিহতের পিতা আহম্মদ আলী জানান, গত শুক্রবার বিকেলে বাড়ির পাশের বিলে বন্ধুরা মিলে বনভোজন করে বাড়িতে ফেরে শিমুল। রাত ৮টার দিকে বাড়ি থেকে বাইরে গিয়ে আর ফেরেনি সে। পরে আমি তাকে মোবাইল করি। এ সময় একই পাড়ার শাজাহান আলীর ছেলে সেকেন্দার মোবাইলটি রিসিভ করে। আমি আমার ছেলে কোথায় জানতে চাইলে মোবাইল বন্ধ করে দেয় সেকেন্দার। সেই থেকে আর যোগাযোগ করতে না পেয়ে আমরা শিমুলকে খুঁজতে থাকি। গ্রামের একাধিক ব্যক্তি বলেছেন, নিহত শিমুলসহ একই পাড়ার শাজাহান আলীর ছেলে সেকেন্দার, আব্দুল মজিদের ছেলে হাসান ও মৃত তোফার ছেলে মোসারেফ হোসেনকে রাস্তায় হাঁটাহাটি করতে দেখেছে।

নিহতের পারিবারিক পরিচয়: আহম্মদ আলীর ২ মেয়ে ১ ছেলে। বড় মেয়ে রেক্সোনা ও ছোট মেয়ে রেহেনা দুজনেই বিবাহিতা। সকলের ছোট শিমুল।