কলেজছাত্রী অপহরণের সময় ৩ জনকে ধরে পিটুনির পর পুলিশে দিলো জনতা

স্টাফ রিপোর্টার: দিন দুপুরে জনবহুল ব্রিজের ওপরে মাইক্রোবাস ভিড়িয়ে কলেজ ছাত্রীকে তুলে নেয়ার সময় চিৎকারে প্রতিরোধ গড়ে তোলে জনতা। হাতেনাতে তিনজনকে ধরে গণপিটুনির পর পুলিশে দেয়া হয়েছে। অল্পের জন্য অপহরণ থেকে রক্ষা পাওয়া কলেজছাত্রী বাদী হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় মামালা দায়ের করেছেন। এ মামলায় গতকালই তিনজনকে আদালতে সোপর্দ করা হলে বিজ্ঞ আদালত জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দিয়েছেন। অপরদিকে অপহরণের সচিত্র খবর সংগ্রহ করতে গেলে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি সাংবাদিকের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণই শুধু করেননি, তিনি ধাক্কা মেরে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন একটি ক্যামেরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছে, তখন ঘড়ির কাঁটায় দুপুর সাড়ে ১২টা। এ সময় চুয়াডাঙ্গা শহরের মাথাভাঙ্গা ব্রিজের ওপর থেকে কালো রঙের মাইক্রোবাস (চট্ট মেট্রো-চ-৫১-০৪৩৪) আসে। চালকসহ ৫ জন ছিলো মাইক্রোবাসে। এক বন্ধুসহ কলেজছাত্রী ৪ বান্ধবীকে নিয়ে ব্রিজের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন। মাইক্রোবাসটি কলেজছাত্রীর পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। মাইক্রো থেকে একজন নামে। কলেজছাত্রীকে ধাক্কা মেরে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়েই দ্রুত শহীদ হাসান চত্বরের দিকে ছুটতে থাকে। মাইক্রোবাসের মধ্যেই কলেজছাত্রী চিৎকার শুরু করে। বিষয়টি দেখে ব্রিজের ওপরে থাকা কয়েকজন পথচারীসহ ভ্যান আরোহী মাইক্রোবাসের পিছু নেয়। চিৎকারের ফলে দোকানিসহ শহীদ হাসান চত্বরের জনতা জড়ো হয়ে মাইক্রোবাসের গতিরোধ করে। অপহরণকারীরা বলে, রোগী হাসপতালে নিয়ে যাচ্ছি। মাইক্রোবাসের কালো গ্লাসের ভেতর দিয়ে আবছা দেখা যায়, যুবতীকে ওরা ধরে রেখেছে। যুবতী মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছেন। দৃশ্য দেখে কাল বিলম্ব না করে শুরু হয় মাইক্রোবাস ভাঙচুর। কলেজছাত্রীকে উদ্ধার করা হয়। মাইক্রোবাস থেকে দ্রুত নেমে চলকসহ দুজন সটকে পড়ে। হাতেনাতে ধরা পড়ে তিন যুবক। তিনজনকেই আমজনতা শুরু করে গণপিটুনি।
হাতেনাতে ধরাপড়া তিন যুবক হলো, আলমডাঙ্গা উপজেলার হাটবোয়ালিয়া গ্রামের আশরাফুল ওরফে আহাদের ছেলে আশিক আহম্মেদ কলিন্স (২১), একই গ্রামের আব্দুস সামাদের ছেলে আরিফ আহম্মেদ বিপ্লব (২৮) ও কেশবপুর গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে মাবুদ ওরফে ফাহিম (২৫)। কলেজছাত্রীর বাড়ি আলমডাঙ্গার আসমানখালীর নিকটবর্তী শালিকা গ্রামে। তিনি চুয়াডাঙ্গা সরকারি আদর্শ মহিলা কালেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। (তার বিস্তারিত পরিচয় গোপন রাখা হলো)।
‌হাতেনাতে ধরাপড়া কলিন্স বলেছেন, ওই কলেজছাত্রীর সাথে আগে তার সম্পার্ক ছিলো। সম্পর্ক না রেখে একের পর এক সে প্রেম করে বেড়ায়। এ কারণেই তাকে তুলে নেয়ার চেষ্টা করি। আরিফ আহম্মেদ বিপ্লব নিজেকে কলিন্সের বন্ধু বলে স্বীকার করে পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছে, আমি মেহেরপুর গাংনীর পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভকেশনাল শাখার শিক্ষক। এলাকার একাধিক সূত্র বলেছে, কলিন্স দীর্ঘদিন ধরেই ওই কলেজ ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করে আসছিলো।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সহকারী পুলিশ সুপার ছুফি উল্লাহ জানান, অপহরণের চেষ্টাটা পূর্ব পরিকল্পিত। কলেজছাত্রী নিজেই বাদী হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ৭/৩০ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। আসামি আশিক আহমেদ কলিন্স, আরিফ আহমেদ বিপ্লব ও মাবুদ ওরফে ফাহিমকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। পলাতক আসামিদের গ্রেফতার করতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে ঘটনার পরপরই সচিত্র তথ্য নিতে গেলে সাংবাদিক আলম আশরাফকে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। এ সময় সাংবাদিকের হাতে থাকা ক্যামেরাটি পড়ে ভেঙে যায়। বিষয়টি সাথে সাথে পুলিশ সুপারকে জানানো হলে তিনি বলেন, বিষয়টি দেখছি। সাংবাদিকের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণের কারণে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।