কলড্রপ সমাধানে দু মাস সময় দিলেন প্রতিমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার: রিং হলো, কথা শুরু হতে না হতে লাইনটা কেটে গেলো। টাকাটা কেটে নিলো ঠিকই। ওটাই কলড্রপ। এ সমস্যা সমাধানে মোবাইল অপারেটরদের দু মাস সময় বেঁধে দিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। এ সময়ের মধ্যে টেলিযোগাযাগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিকে এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতেও নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। গ্রাহকদের কলড্রপসহ নানা ভোগান্তির প্রেক্ষাপটে গতকাল সোমবার সচিবালয়ে বাংলাদেশের মোবাইলফোন অপারেটরদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের বৈঠকে ডাকেন প্রতিমন্ত্রী।

‌মোবাইলফোন অপারেটরদের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ডেকে নিয়ে কলড্রপসহ গ্রাহক ভোগান্তির বিষয়গুলো ধরে দেখিয়ে এ অবিচার বন্ধের তাগিদ দিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। তিনি বলেছেন, সব অপারেটরের বিরুদ্ধেই গ্রাহকদের অভিযোগ রয়েছে, কিন্তু গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধেই বেশি।

প্রতিমন্ত্রী  বলেন, কলড্রপ, থ্রিজি সার্ভিসের সমস্যা, ইন্টারনেটের দাম বেশি, অযথা টাকা কেটে নেয়া,  আনলিমিটেড প্যাকেজ বলে টাকা কেটে নেয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা এখনও প্রকট রয়েছে। কলড্রপ নিয়ে আগেও আলোচনা করেছি। সে ইস্যু এখনও রয়েছে। এত দিন সময় লাগার তো কথা নয়।

কলড্রপের বিষয়টিতে আইজিডব্লিউ, আইসিএক্স, এনটিটিএন সার্ভিসগুলোও জড়িত রয়েছে বলে প্রতিমন্ত্রীকে বলেন অপারেটরগুলোর কর্মকর্তারা। আইজিডব্লিউ, আইসিএক্স, এনটিটিএন এর সাথে বৈঠক করা হবে জানিয়ে তারানা বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে অপারেটররা কলড্রপ সমস্যার সমাধানে কী উদ্যোগ নিয়েছে, তা জানাতে হবে। কলড্রপের বিষয়ে ডিসেম্বরের মধ্যে একটা সমাধানে আসতে হবে। সম্প্রতি ভারতের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ প্রতিটি কলড্রপের জন্য গ্রাহকদের এ রুপি করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশনা দেয়। কলড্রপের জন্য বাংলাদেশের অপারেটররা গ্রাহকদের কল মিনিট ফেরত দেবে না ক্ষতিপূরণ দেবে- তা জানাতে বলেছেন প্রতিমন্ত্রী। ভারতে সম্প্রতি প্রতি কলড্রপে এক রুপি ক্ষতিপূরণের ঘোষণা এসেছে। আপনারা ক্ষতিপূরণ দেবেন, না এ সমস্যা সমাধান করবেন, তা জানাতে হবে।

প্রতিমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে গ্রামীণফোনের সিইও রাজিব শেঠি, বাংলালিংকের সিইও জিয়াদ সিতারা, রবির সিইও সুপন বীরাসিংহে, সিটিসেলের সিইও মেহবুব চৌধুরী, এয়ারটেলের সিইও পিডি শর্মা, টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গিয়াস উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত বিটিআরসির মহাপরিচালক (সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমদাদ উল বারী বলেন, বিটিআরসির গাইডলাইনে কলড্রপের স্ট্যান্ডার্ড, প্যাকেজের বিষয়গুলো উল্লেখ রয়েছে। তবে সব অপারেটর এখনও পুরোপুরি চালু করতে পারেনি। কলড্রপ সমস্যা সমাধান করতে না পারলে গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিধান বা গ্রাহকদের সে সময় ফেরত দেয়া যায় কি-না, তা খতিয়ে দেখতে বিটিআরসিকে বলেন প্রতিমন্ত্রী। থ্রিজির নামে যেন ২জি ইন্টারনেট গতি দেয়া না হয়, রাত ১২টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত যেন কোনো প্রমোশনাল এসএমএস না দেয়া হয়, অফার দিয়েই টাকা কেটে নেয়া ইত্যাদি বিষয়ে সতর্ক হতেও অপারেটরদের প্রতি আহ্বান জানান তারানা।

টেলিযোগাযোগ সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী বলেন, অনেক সময় দেখা যাচ্ছে অফার দিয়েই টাকা কাটা শুরু হয়, অপারেটররা যে শর্তে প্যাকেজ দেবেন, সেই শর্ত অনুযায়ী সেবা দেবেন এবং টাকা নেবেন, নইলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিটকসহ মোট ছয়টি অপারেটর রয়েছে। বিটিআরসির হিসাবে, গত অগাস্ট শেষ নাগাদ ১৬ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে মানুষের হাতে থাকা মোবাইল সিমের সংখ্যা ১৩ কোটি ছাড়িয়েছে, ইন্টারনেট সেবা নিচ্ছেন সোয়া ৫ কোটি গ্রাহক। বিটিআরসি ভাইস চেয়ারম্যান আহসান হাবীব খান, টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তারাও এ বৈঠকে ছিলেন।

প্রতিমন্ত্রী এ বিষয়ে রাজীব শেঠির বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিটিআরসি সেবার যে মানদণ্ড ঠিক করে দিয়েছে, গ্রামীণফোন সব সময় তা অনুসরণ করছে। থ্রিজি সেবা ও কলড্রপের ক্ষেত্রে অনেকগুলো ব্যারোমিটার বিবেচনায় নিতে হবে। জিরো কলড্রপ- এটা সম্ভব নয়। অপারেটর হিসেবে আমরা সব সময় মানদণ্ড বজায় রেখে চলি, এতে আরও উন্নতির সুযোগ আছে। কলড্রপে ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা বলেও গ্রামীণফোন এখন কেন তা দিচ্ছে না, তা জানতে চান তারানা। জবাবে রাজীব শেঠি বলেন, ভয়েস কল ড্রপ হলে এক মিনিট ক্ষতিপূরণের যে ঘোষণা গতবছর দেয়া হয়েছিলো, তা ছিলো একটি ‘প্রমোশনাল অফার’। গ্রামীণ ফোনের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার মাহমুদ হোসেন জানান, দেশের উত্তরাঞ্চলের ১১টি জেলায় তাদের থ্রিজি তরঙ্গের একটি স্লটে ইন্টারসেকশন সমস্যা (অন্য একটি তরঙ্গের সাথে মিলে যাওয়া) হচ্ছে। এ কারণেও কলড্রপ বেড়েছে।

বাংলালিংকের সিইও জিয়াদ সিতারা বলেন, কলড্রপের সমস্যাটি কেবল অপারেটরদের নয়, এর সাথে আইজিডব্লিউ, আইসিএক্স, এনটিটিএন সার্ভিসগুলোও জড়িত। কিন্তু গ্রাহকরা কেবল অপারেটরদের দুষছেন। এ বিষয়ে সম্মিলিত উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। রবির কোম্পানি সেক্রেটারি মোহাম্মাদ শাহেদুল আলম বলেন, মোবাইলফোন কোম্পানিগুলো তাদের সেবা দেয় মাইক্রোওয়েভের মাধ্যমে। ফলে কুয়াশার কারণেও অনেক সময় সমস্যা দেখা দেয়। মোবাইল অপারেটরদের ফাইবার কানেক্টিভিটি দেয়া হলে এর সমাধান সম্ভব।

কলড্রপ সমস্যার সমাধানে মোবাইল অপারেটরদের দু মাস সময় বেঁধে দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে অপারেটররা কলড্রপ সমস্যার সমাধানে কী উদ্যোগ নিয়েছে তা জানাতে হবে। কলড্রপের বিষয়ে ডিসেম্বরের মধ্যে একটা সমাধানে আসতে হবে। সম্প্রতি ভারতে প্রতি কলড্রপে এক রুপি ক্ষতিপূরণের ঘোষণা আসার কথা জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও সে বিষয়টি বিবেচনা করতে বলেন বিটিআরসিকে।