কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারলে মাদক ব্যবহার কমে যাবে

চুয়াডাঙ্গা জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ বলেছেন, আমরা যদি মানুষকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারি তাহলে মাদক ব্যবহার কমে যাবে। জেলায় ৪৬২ জন মাদক ব্যবসায়ী আত্মসমর্পন করলেও কেউ কেউ মাদক ব্যবসায় ফিরে যাচ্ছে। যা কাম্য নয়। গতকাল রোববার বেলা ১০টায় জেলা আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক কমিটির সভায় জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ এসব মন্তব্য করেছেন।
জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জেলা আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক কমিটির সভায় পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) খন্দকার ফরহাদ আহমদ, এনএসআই উপ-পরিচালক আবু জাফর ইকবাল, সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. শামিম কবির, দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান, জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রফিকুল হাসান, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হোসেন, দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকরাম হোসেন, জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুর রহমান, আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) লুৎফুল কবির, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সহকারি পরিচালক আসলাম হোসেন, ওজোপাডিকো লিমিটেডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবুক্তগীন, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. নুরুল ইসলাম, সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের সভাপতি অ্যাড. রফিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম সনিসহ বিভিন্ন দফতরের সরকারি কর্মকর্তাগণ ও কমিটির সদস্যরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ আরও বলেন, আইন মেনে সঠিকভাবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে। জেহালা রেলগেটে যানবাহন চলাচলে অসুবিধা দূর করতে প্রয়োজনে সড়ক ও রেলবিভাগের সাথে আলাপ আলোচনা করে জমি অধিগ্রহণ করা হবে। চুয়াডাঙ্গা রেলগেটে আ-ারপাশ দিয়ে চলাচলে প্রয়াজনীয় পদক্ষেপ নিতে পৌর মেয়রকে অনুরোধ করা হয়েছে। ইউরিয়া সারসহ যেকোন সার সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কেউ বেশি দামে বিক্রি করতে পারবে না। এধরনের অভিযোগে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। অবৈধ যানবাহন চলাচলে বন্ধে ইজিবাইকের ডাটাবেজ তৈরি করতে পৌরসভাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সিসিটিভি স্কুলগুলোতে লাগানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিশেষ করে বালিকা বিদ্যালয়গুলোতে। ইটভাটায় চাঁদাবাজি বন্ধে সিসিটিভি লাগাতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা শহরে ২৪টি সিসিটিভির মধ্যে ৩-৪টি ভালো রয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে কোনো ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের সামনে সিসিটিভি লাগালে কন্ট্রোলরুমের সাথে ট্যাগ করে নেবেন। বাল্যবিয়ে বন্ধে সাধারণ মানুষ প্রশাসনকে সহযোগিতা করছে। তবে, কাজীদের কাছে অতিরিক্ত ভলিউম উদ্ধারে ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করা হবে। আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে মাইক ব্যবহার বন্ধ করা হয়েছে। দামুড়হুদার কুতুবপুরে চুল ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন ৭০ লাখ টাকার চুল রফতানী করছে এবং একই গ্রামে বাউল মেলায় গত শনিবার রাতে অনুমতি না থাকায় মাইক ব্যবহার বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়া, গোশত বিক্রি ও চিকিৎসাসহ নানা বিষয়ে বিনা অনুমতিতে মাইক ব্যবহার বন্ধ করা হয়েছে। প্রাইভেট কোচিং নিয়ে সেমিনার হয়েছে। কোচিং নিয়ে প্রশাসন হার্ডলাইনে আছে। স্কুলের শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়াবেন না। বড়বাজার শহীদ হাসান চত্বরে সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে। অনেকে স্বেচ্ছায় জায়গা ছেড়ে দিচ্ছেন। কোনো অবৈধ স্থাপনা পিচঢালা স্থানে থাকবে না। হাসপাতাল এলাকায় অবৈধ স্থাপনা সরানো হবে। ফুটপাতে কাউকে বসতে দেয়া হবে না। শহরে বাণিজ্যিক-ব্যক্তিগত ব্যানার-ফেস্টুন সরিয়ে নিতে হবে। অন্যথায় আইন প্রয়োগ করা হবে। বড়বাজারের নীচের বাজারে ফুটপাত দখল করে সবজী ব্যবসায়ীসহ সকলকে নির্ধারিত স্থানে বসতে হবে। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে আইন-শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। রাস্তার ওপর ও বাড়ির ছাদের ওপর দিয়ে বিদ্যুতের ৩৩ হাজার কেভির তার মানুষের কোনো সমস্যার সৃষ্টি না হয় সেদিকে ওজোপাডিকো’র প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যেসকল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার হওয়ার যোগ্যতা নেই তাদের তালিকা প্রশাসন পেলেই সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে। ২৫০ শয্যার মডেল হাসপাতাল পেতে যাচ্ছি। এজন্য একজন রোগীর জন্য ১ জন ভিজিটর থাকতে পারবেন।
পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান বলেন, জেলায় মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার করা হয়েছে। সম্মিলিতভাবে মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার করতে সেদিকে সচেষ্ট হতে হবে। তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীর ৬৮ জনের মধ্যে ইতোমধ্যে দু’জন নারীসহ ২৩ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। ৬৪ ভরি স্বর্ণসহ একজনকে আটক করা হয়েছে। পারিবারিক মামলা মিটিয়ে ফেলতে পুলিশ সুপারের কার্যালয়সহ চার থানায় চারটি সেল রয়েছে। যা মামলার আগে মিমাংসা করা হয়ে থাকে।
সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামিম কবির বলেন, ময়না তদন্ত রিপোর্ট এক সপ্তাহ এবং এমসি রিপোর্ট দুই সপ্তাহের অধিক সময় হাসপাতালে থাকে না। তবে, কোনো কোনো পুলিশ কর্মকর্তা আবেদনে মোবাইল নং এবং এক্সরে রিপোর্ট দেন না। তারা যেনো সেদিকে নজর দেন। জাতীয় সংসদের হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার এমপি মহোদয়ের নেতৃত্বে সদর হাসপাতাল উন্নয়নের কাজ এগিয়ে চলেছে। দালালমুক্ত হাসপাতাল গড়তে কাজ চলছে।