কথিত পীরের কয়েদখানায়স্ত্রী-সন্তান

স্টাফ রিপোর্টার: বাগেরহাট শহরের কথিত এক পীরের ঘরে বছরের পর বছর ধরে বন্দি স্ত্রী ও সন্তানদের উদ্ধার করেছে পুলিশ।নিজেকেপীর দাবিকারী শেখ নূর মোহম্মদ (৭০) শহরের পাশে ষাটগম্বুজ ইউনিয়নের মেহগনিতলাএলাকায় একটি মাদরাসা ও এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করে সেখানে খানকা শরিফ পরিচালনা করতেন।বাগেরহাটমডেল থানার ওসি মো. আলী আজম বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরেশহরের সরুই এলাকায় তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তার দু স্ত্রী, তিন মেয়ে ও একশিশুপুত্রকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। খানকাশরীফের ওই পরিচালকের ছেলে শেখ বাকি বিল্লাহর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ সুপারের নির্দেশেঅভিযান চালিয়ে ওই নারী ও শিশুদের উদ্ধার করা হয়।তবেআগেই পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে নূর মোহম্মদ বাড়ির পেছনের পথ দিয়ে পালিয়ে যান বলেজানান ওসি।উদ্ধারকৃতরাহলেন- শেখ নূর মোহাম্মদের প্রথম স্ত্রী কুলসুম বেগম (৫৮), দ্বিতীয় স্ত্রী পারভীনআক্তার (৩৫), প্রথম স্ত্রীর মেয়ে ফাতেমা আক্তার (৩৫), ছোট স্ত্রীর মেয়ে সালমাআক্তার (১১) ও নুর জাহান (৬) এবং ছেলে মাহাবুব বিল্লাহ (৩)।পরেবিকেলে বাগেরহাট মূখ্য বিচারিক হাকিম আবু তাহেরের আদালতে এক ঘণ্টারও বেশি সময় নিজেদেরওপর দীর্ঘদিনের নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তার দুস্ত্রী ও বড় মেয়ে।প্রথমস্ত্রী কুলসুম বেগম আদালতকে বলেন, পর্দার নামে বিয়ের পর থেকে ৪১ বছর ধরে তিনি ঘরেতালাবদ্ধ হয়ে ছিলেন। ১০ বছর আগে তার বাবা মারা গেলে তাকে লাশ দেখতে যেতে দেয়াহয়নি। দু বছর আগে তার ছেলে বাকি বিল্লাহ তার মেজ মেয়েকে কৌশলে বাড়ি থেকে বের করেখুলনায় লুকিয়ে রেখে বিয়ে দেয়। এতে তার স্বামী বাকি বিল্লার ওপর ক্ষীপ্ত হয়ে লোকদিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা করেন।দ্বিতীয়স্ত্রী পারভীন আক্তার বলেন, বিয়ের পর থেকে বন্দি থেকে অতিষ্ঠ হয়ে তিনি দু বছর আগেএকবার পালিয়ে তার বাবার বাড়ি গিয়েছিলেন। মুরিদদের সহায়তায় নূর মোহাম্মদ তাকে ধরেএনে শেকল দিয়ে বেঁধে রেখেছিলেন।নূরমোহাম্মদের প্রথম স্ত্রীর ছেলে বাকি বিল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, তার রক্ষণশীল বাবানিজেকে পীর দাবি করে মেহগনিতলা এলাকায় নিজ জমিতে মাদরাসা ও এতিমখানা স্থাপন করেন।সেখানে তিনি তার মুরিদ ও ভক্তদের নিয়ে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করেন। শহরে তাদেরবাড়িতে কাউকে ঢুকতে বা বাড়ি থেকে কাউকে বের হতে দিতেন না। তার বাবা বাইরে যাওয়ারসময় বাইরে থেকে জানালাবিহীন ঘরের দরজা তালাবদ্ধ করে রেখে যেতেন।বাকিবিল্লাহ বলেন, তার বাবা মোট চারটি বিয়ে করেছেন। প্রায় ১৫ বছর আগে পারভীন আক্তারকে বিয়েকরেন। তার বাবার অন্য দু স্ত্রী তার মায়ের ওপরে তার বাবার নির্যাতনের ভয়ে পালিয়েগেছেন।উদ্ধারঅভিযানে নেতৃত্ব প্রদানকারী বাগেরহাট মডেল থানার এসআই শেখ শহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদেরজানান, ২৬ জুন নূর মোহাম্মদের ছেলে বাকী বিল্লাহ পুলিশ সুপার বরাবরে একটি লিখিতঅভিযোগ করলে সহকারী পুলিশ সুপার (হেড কোর্য়াটার) সাদিয়া আফরোজ সরেজমিন তদন্ত করেঅভিযোগের সত্যতা পান।ওইঅভিযোগের ভিত্তিতেই বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই বাড়ি থেকে বাকি বিল্লাহর দু মা ও চারভাই বোনকে উদ্ধার করা হয়। তাদের আদালতের মাধ্যমে বাগেরহাটে অবস্থিত খুলনা বিভাগীয়নিরাপদ আবাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়েবাগেরহাট পৌরসভার সংরক্ষিত ২নং ওয়ার্ডের সাবেক মহিলা কাউন্সিলর আলেয়া বেগম বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন জনপ্রতিনিধিত্ব করেছি, সমাজ সেবা করেছি।এরা আমার প্রতিবেশী। কিন্তু আমি কোনোদিন ওই বাড়িতে ঢুকতে পরিনি। এ ধরনের ভয়াবহঘটনার কথা আমার জানাই ছিলো না।’