কথিত দালালচক্রের অত্যাচারে অতিষ্ঠ গরু ব্যবসায়ীরা

 

দামুড়হুদার মুন্সিপুর ও ঠাকুরপুর সমান্ত পথে আনা হচ্ছে গরু

 

দর্শনা অফিস:দেশে মাংসের চাহিদা পূরণের জন্য ভারত থেকে আনা হচ্ছে গরু ও মোষ।সীমান্ত পথে ভারত থেকে আনা হলেও দেশে পাচ্ছে বৈধতা। বৈধতার অজুহাতে দালালচক্র হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের অর্থ। গরু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের সিংহ ভাগই যাচ্ছে দালালচক্রের পকেটে। এক জোড়া গরু ও মহিষ প্রতি সরকার ১ হাজার টাকা পেলেও ব্যবসায়ীদের গুনতে হচ্ছে ২ হাজার ৭শ টাকা। বাকি টাকা যাচ্ছে কার কার পেটে? দালালরা প্রসাশনের ভয়ভীতি দেখিয়েই অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে বলেই অভিযোগ গরু ব্যবসায়ীদের।

দামুড়হুদার মুন্সিপুর ও ঠাকুরপুর সীমান্ত পথে গরু ও মোষ ভারত থেকে আনার সুযোগ রয়েছে। ভারত সীমান্তের অভ্যান্তরে তার কাটা বেড়া ছাড়াও কয়েকটি স্থানে প্রবেশ-বাইরের গেট থাকায় গরু ও মোষআনতে সুবিধা হয়। যার কারণে দেশের অন্যান্য সীমান্তের তুলনায় এ সীমান্ত পথ কম ঝুঁকিপূর্ণ। দেশে মাংসের চাহিদা পূরণের কথা ভেবেই সরকার ভারত থেকে আনা গরু ও মোষের বৈধতা দিচ্ছে। ফলে দামুড়হুদা উপজেলার মুন্সিপুর ও ঠাকুরপুর সীমান্ত পথে প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্তই প্রচুর পরিমাণে গরু আনা হচ্ছে দেশে। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে যেন বসতে গরু-মোষ বেচাবিক্রির হাট।

কয়েকজন গরু ও মহিষ ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, সীমান্ত পথে আনা গরুর পরিমাণ একেবারে কম নয়। তারা অভিযোগ করে বলেছে, সীমান্তে দালালচক্রের অত্যাচারের কারণেই দিনদিন এ ব্যবসার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে। একজোড়া গরু ভারত থেকে আনার পর বৈধতার জন্য কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নিচ্ছে ১ হাজার টাকা। কাগজে-কলমে ১ হাজার টাকার ভ্যাট রশিদ দেয়া হলেও দালালচক্র আদায় করছে ১ হাজার ১শ টাকা। চুয়াডাঙ্গা ও দামুড়হুদা থানা পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ, ডিএসবি, বিজিবিসহ বিভিন্ন প্রসাশনের নাম ভাঙিয়ে নিজেদের স্বঘোষিত দালাল পরিচয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে খানেকটা জোরপূর্বক নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে ১ হাজার টাকার স্থলে ২ হাজার ৭শ টাকা আদায় করছে কার্পাসডাঙ্গার বহুল আলোচিত হাকিম, মুন্সিপুরের শুকুর আলী, কালু বিশ্বাস, আফাজ, হাসান, ও বুড়ো।

অভিযোগ উঠেছে, দালালচক্রের সদস্যদের মধ্যে নিজেকে জেলা গোয়েন্দা, ডিএসবি ও দামুড়হুদা থানা পুলিশের নাম ভাঙিয়ে প্রতি জোড়া গরু এবং মোষের জন্য আদায় করে থাকে ৬শ টাকা। শুকুর, কালু, আপাজ, হাসান ও বুড়ো নিজেদের বিজিবির সোর্স ও টোল আদায়কারী পরিচয়ে জোড়া প্রতি আদায় করছে ৭শ টাকা। এছাড়া এ চক্রই উপজেলা পশু চিকিৎসকের নামে আদায় করে থাকে গরু ও মোষ জোড়া প্রতি ৩শ টাকা। যার কারণেই এক জোড়া গরু ও মোষের জন্য ব্যবসায়ীকে গুনতে হচ্ছে ২ হাজার ৭শ টাকা। অথচ এ টাকার মধ্যে সরকারের খাতায় জমা হচ্ছে মাত্র ১ হাজার টাকা। পুলিশ, বিজিবিসহ প্রসাশনের বিভিন্ন বিভাগের নামে টাকা আদায় করে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছে কথিত দালালচক্র।

গরু ব্যবসায়ীরা দাবি তুলে বলেছে, প্রসাশনের নামে ভয়ভীতি দেখিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় বন্ধ করতে পুলিশ ও বিজিবি পদক্ষেপ গ্রহণ করলে একদিকে যেমন হয়রানি থেকে রেহায় পাওয়া যাবে, অন্যদিকে দেশে দামে গরু বিক্রির পাশাপাশি গরু ব্যবসার প্রতি আগ্রহ বাড়বে। সেদিকে নজর দেয়ার জন্য চুয়াডাঙ্গা-৬ বর্ডার গার্ডের অধিনায়ক, উপঅধিনায়ক এবং জেলা পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের অনুরোধ জানিয়েছে ব্যবসায়ী মহল।

এদিকে উপজেলা পশু চিকিৎসকের নামে প্রতি জোড়া গরু ও মোষের জন্য ৩শ টাকা আদায় করার অভিযোগ উঠলেও তা অস্বীকার করেছেন উপজেলা পশু সম্পদ কর্মকর্তা ডা. শামীমুজ্জামান। তিনি বলেছেন, শুনেছি আমার নামে টাকা আদায় করা হচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের অবহিত করলে তা খতিয়ে দেখে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার প্রক্রিয়া চলছে। এ বিষয়ে সচেতনমহল অভিমত ব্যক্ত করে বলেছেন, দেশে মাংসের চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে ভারত থেকে বেশি বেশি গরু ও মোষ আনা জরুরি। তাই দালালচক্রের বিরুদ্ধে এখনই আইনি ব্যবস্থা না নেয়া হলে তারা দিনদিন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবে।