কঠোর নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে জীবননগর উপজেলা যুবলীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন সম্পন্ন

ঈশা উপজেলা সভাপতি শিপলু সম্পাদক: পৌর সভাপতি ছোট বাবু সম্পাদক মজিবর
জীবননগর ব্যুরো: সকল বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলা ও পৌর যুবলীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে নেতাকর্মীদের সমন্বয়ের মধ্যদিয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলন নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিলো। সব অশুভ আশঙ্কা ছাপিয়ে সম্মেলন সম্পন্ন হওয়ায় স্বস্তির বিরাজ করছে নেতাকর্মীদের মাঝে। ছিলো টানটান উত্তেজনা। গতকাল মঙ্গলবার শাপলাকলি আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়মাঠে উপজেলা ও পৌর যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ ২৫ বছর পর নতুন কমিটি হওয়ায় সংগঠনের আরও গতি বাড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন নেতাকর্মীরা।
সম্মেলনের মধ্যদিয়ে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি পদে আব্দুস সালাম ঈশা ও কেডিকে ইউপির নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান খায়রুল বাশার শিপলুকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। অপরদিকে পৌর যুবলীগে শাহ আলম শরিফুল ইসলাম ওরফে ছোট বাবু সভাপতি ও মজিবর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়েছে। এদিকে যুবলীগের এ সমাবেশ প্রতিহত করতে হুইপ গ্রুপ পাল্টা সমাবেশ ডেকে লাপাত্তা হয়ে যায়। ফলে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সম্মেলন সম্পন্ন হয়।
অনুষ্ঠানে যুবলীগকে আরও সুসংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, সামনে সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ আসন্ন। বিভিন্নভাবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বেকায়দায় ফেলার অপচেষ্টা চলছে। সরকারকে হঠাতে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত অব্যাহত। দেশের চলমান উন্নয়নের মহাযজ্ঞে ঈশর্^ান্বিত হয়ে বিরোধীরা তা থামাতে মরিয়া। দলের অভ্যন্তরেও ঘাপটি মেরে থাকা চক্র আজ সক্রিয়। অন্যদিকে হাইব্রিড আওয়ামী লীগের দাপটও লক্ষ্যণীয়। এ অবস্থা থেকে উত্তোরনের জন্য যুবলীগকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। রাজপথের আগামী আন্দোলন মোকাবেলা ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলকে বিজয়ী করায় যুবলীগের চড় চ্যালেঞ্জ। নিষ্ঠা ও সততার মধ্যদিয়ে যুবলীগের নেতাকর্মীরা সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন অনুষ্ঠানের বক্তারা।
এদিকে যুবলীগের এ সম্মেলনলকে কেন্দ্র করে হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগর গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কায় বাসস্ট্যান্ডসহ সম্মেলন এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সদস্যরা পুরো এলাকা নিরাপত্তার চাঁদরে ঢেকে ফেলেন। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কলিমুল্লাহ ও দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক কর্মকর্তাকে সম্মেলন এলাকায় সকাল থেকেই অবস্থান নিতে দেখা যায়। একই স্থানে পাল্টা সমাবেশ ডাকলেও হুইপ গ্রুপের কাউকে অবশ্য সমাবেশ করতে দেখা যায়নি। যে কারণে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণ ও উৎসব মুখর পরিবেশে সম্মেলন সম্পন্ন হয়।
এর আগে গত সোমবার সন্ধ্যায় এ সম্মেলনকে ঘিরে হুই সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন গ্রুপ শহরে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদসভা করে। প্রতিবাদ সমাবেশ হতে উপজেলা যুবলীগের নামে আহ্বানকৃত ওই সম্মেলনকে বিতর্কিত সম্মেলন আখ্যায়িত করে তা বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়। সম্মেলন বন্ধ করা না হলে তা প্রতিহত করতে পাল্টা সমাবেশের ডাক দেয়া হয়।
গতকাল বেলা ১১টায় উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম ঈশার সভাপতিত্বে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আসাদুল হক আসাদ। অতিথিবৃন্দ জাতীয় ও দলীয় পতাকা উড়িয়ে সম্মেলন শুরু করেন। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজাদুল ইসলাম আজাদ। যুবলীগ নেতা মজিবর রহমানের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগর, কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ সামসুল আবেদীন খোকন, জীবননগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মোর্তুজা, পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ অমল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহসম্পাদক হাসেম রেজা, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. কাইছার আহমেদ, সহ-মুক্তিযোদ্ধা বিষয় সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ও মনোহরপুর ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন খান।
সম্মেলন শেষে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি পদে আব্দুস সালাম ঈশা, সাধারণ সম্পাদক পদে কেডিকে ইউপি চেয়ারম্যান খায়রুল বাশার শিপলুর নাম ঘোষণা করে ৮১ সদস্য বিশিষ্ট ও পৌর যুবলীগের সভাপতি পদে শাহ আলম শরিফুল ইসলাম ওরফে ছোট বাবু এবং মজিবর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির নাম ঘোষণা করা হয়।
উল্লেখ্য, দেশ স্বাধীনের পর ১৯৯৩ সালে জীবননগরে যুবলীগের প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। এ কমিটি দীর্ঘ ১৬ বছর বলবৎ থাকলেও নানা কারণে তারা যুবলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে ব্যর্থ হন। পরবর্তীতে ২০১১ সালে হাফিজুর রহমানকে আহ্বায়ক করে যুবলীগের অপর একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু ওই কমিটিও দীর্ঘ ৬ বছর কার্যক্রম পরিচালনা করলেও পূর্ণাঙ্গ কোনো কমিটি গঠন করতে পারেনি। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে আব্দুস সালাম ঈশাকে আহ্বায়ক করে যুবলীগের আবারও একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এ আহ্বায়ক কমিটি নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ৩ বছর পর সম্মেলন করতে সক্ষম হয়।