কঠিন সময় পার করছে বাংলাদেশ :জাতিসংঘ

আরো ছয় লাখ রোহিঙ্গা আসছে দেশ আজ গভীর সংকটে

স্টাফ রিপোর্টার: মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা মুসলিমদের সংখ্যা বছর শেষে ১০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এর শীর্ষ দুই কর্মকর্তা কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির ও সার্বিক পরিস্থিতি স্বচক্ষে দেখে এসে এ আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। তাদের মতে, প্রতিদিন ১০ থেকে ২০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলে বছর শেষে ১০ লাখ রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটবে। তারা বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশ বর্তমানে কঠিন সময় পার করছে। এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী বলেছেন, লাখ লাখ রোহিঙ্গার মানবিক সহায়তা এবং তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন বিষয়ে বাংলাদেশ আজ এক নজিরবিহীন সংকটের মুখোমুখি। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণগুলো তুলে ধরে এর আশু সমাধানে বাংলাদেশের প্রস্তাবসমূহ জাতিসংঘে জোরালোভাবে তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ইউএনএইচসিআর ও আইওএমের দুই শীর্ষ কর্মকর্তা বাংলাদেশ সফরে এসে গত কয়েকদিন ধরে কক্সবাজারের কুতুপালং ও নোয়াপাড়া, উখিয়া, বান্দরবানের নাইক্ষ্যাংছড়ি-সহ পুরো এলাকায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের অবস্থা ও এলাকার সার্বিক চিত্র সরেজমিনে দেখেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ইউএনএইচসিআরের সহকারী হাই কমিশনার (অপারেশন্স) জর্জ ওকোথ ওব্বো ও আইওএমের পরিচালক (অপারেশন্স) মোহাম্মদ আবদিকার মহামুদ ঢাকায় এক যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সংকট ও সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন। তারা বলেন, আতঙ্কিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গত ২৫ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে ঢুকেছে। এই সংখ্যা দশ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় অনেক কিছু করার রয়েছে এবং করতে হবে। বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ মানবিক বিপর্যয় রোধে প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক মহলের সাড়া আশাব্যঞ্জক নয়। জরুরি মানবিক সহায়তা এবং স্বপ্লমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপের কোনো বিকল্প নেই। কারণ এই মানবিক বিপর্যয়ে আমাদের উদ্বেগ বাড়ছে। আইওএম কর্মকর্তা আবদিকার মহামুদ বলেন, যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা সামালে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখনও যথেষ্ট কিছু করছে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও অনেক কিছু করতে হবে।

ইউএনএইচসিআর সহকারী হাই কমিশনার ওকোথ ওব্বো বলেন, আড়াই সপ্তার মধ্যে প্রায় চার লাখ মানুষ আসায় বাংলাদেশ গুরুতর মানবিক পরিস্থিতির মুখে পড়েছে। নির্যাতনের মুখে দেশান্তরী হওয়া রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের প্রশংসা ও স্বীকৃতি দিতে হবে। এটা অনেক বড় সংখ্যা এবং বাংলাদেশের নিজের অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। পরিস্থিতি বেশ জটিল, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমন্বিত পদক্ষেপ জরুরি। তিনি বলেন, এখনও অনেক কিছু করতে হবে। সব ধরনের প্রয়োজনের দিকে নজর দিয়ে আমাদের কার্যক্রম বাড়াতে হবে। রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের সরকারি উদ্যোগকে ইতিবাচক উল্লেখ করে এ কার্যক্রমে সহায়তার প্রস্তাব দেন তিনি। ওব্বো বলেন, এই উদ্যোগ নিয়ে আমরা খুশি। কারণ শরণার্থীদের প্রকৃত সংখ্যা বের করা এবং সংকট মোকাবিলায় যথাযথ সাড়া প্রদানের জন্য তাদের তথ্য লিপিবদ্ধ করা জরুরি।