ওষুধ সঙ্কটে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সগুলো

বিনামূল্যে ওষুধ না পেয়ে বিপাকে পড়েছে দুস্থ ও দরিদ্র রোগরা

 

ফাইজার চৌধুরী: ভয়াবহ ওষুধ সঙ্কটে পড়েছে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালসহ জেলার ৪টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এক মাস ধরে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। জরুরি ওষুধ সরবরাহ হরতাল-অবরোধের আওতামুক্ত হলেও চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে বলা হচ্ছে, অবরোধ ও হরতালের কারণে সরকারি ওষুধ তৈরি ও সরবরাহ প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগ কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) বগুড়া ডিপো থেকে ওষুধ নিয়ে আসা সম্ভব হচ্ছে না। (এ অঞ্চলের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ইডিসিএলর বগুড়া ডিপো থেকে ওষুধ সরবরাহ করা হয়)

ওষুধ সঙ্কটের সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা দেখা গেছে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। ৫০ শয্যার হাসপাতালটি লোকবল নিয়োগ ছাড়াই কাগজে কলমে ১শ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। সম্প্রতি এটি আবার আড়াইশ শয্যার হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার দেখা গেলো, প্রতিটি ওয়ার্ডের বিছানা, মেঝে থেকে শুরু করে বারান্দায় রোগীর ভিড়। অথচ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে শুরু করে ওয়ার্ডে ভর্তি এসব রোগীদের জন্য বেশ কিছু দিন ধরে প্যারাসিটামল, এন্টি হিস্টাসিন, ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের মতো সাধারণ ওষুধও সরবরাহ করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। আর সেফট্রি অ্যাকজন, ফ্লু-ক্লক্সাসিলিনসহ বিভিন্ন এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন নাকি অনেক দিন ধরেই এ হাসপাতালে সরবরাহ নেই বলে জানালেন আবাসিক চিকিৎসক ডা. মাসুদ রানা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল, ৩টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সবকটিতেই ওষুধের সঙ্কট চলছে। অনেক কেন্দ্রে রোগীদের হাতে শুধু ব্যবস্থাপত্র ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। সদর হাসপাতালের ওয়ার্ড ঘুরে রোগীর আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেলো, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে রোগীর জন্য সব ওষুধই বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। বিনামূল্যে ওষুধ না পেয়ে বিপাকে পড়েছে দুস্থ ও দরিদ্র রোগীরা। চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের আত্মীয়স্বজনের কথার সত্যতা মিলল ওষুধ প্রদান কেন্দ্র বা মেডিসিন স্টোরে এসে। সরকারি মেডিসিন স্টোরে বিনামূল্যে ওষুধ পাওয়ার আশায় যারা ভিড় করছেন সে সব রোগীদের ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে। মেডিসিন স্টোরে দায়িত্বরত কর্মচারীদের সাথে কথা বলে জানা গেল অনেক ধরনের ওষুধই এখন সাপ্লাই নেই। ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করা নার্সরাও জানালেন একই কথা। এসেনসিয়াল ড্রাগ কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) ও সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোর থেকে জেলায় সরকারি হাসপাতাল ও চিৎসাকেন্দ্রগুলোয় ওষুধ সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে সেন্টার মেডিকেল স্টোর বছরে একবার ও ইডিসিএল দুবার ওষুধ সরবরাহ করে।

সিভিল সার্জন ডা. আজিজুল ইসলাম জানালেন, অবরোধ শুরু হওয়ায় নিরাপত্তাজনিত কারণে বগুড়া ডিপো থেকে ওষুধ আনা সম্ভব হয়নি। একই কথা শোনা গেলো আবাসিক চিকিৎসক মাসুদ রানা এবং স্টোর ইনচার্জ হাফিজ বিন ফয়সালের কাছ থেকে। তবে স্টোর ইনচার্জকে দেখা গেলো চাহিদাপত্রের কাগজ তৈরিতে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে গলা মিলিয়ে তিনি জানালেন, দু-এক দিনের মধ্যেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। প্রায় ১৫ লাখ জনসংখ্যার এ জেলায় স্বাস্থ্যসেবার প্রায় সব সুবিধাসম্পন্ন একমাত্র প্রতিষ্ঠান চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে অবিলম্বে আগের মতো বিনামূল্যে ওষুধ মিলবে এমনটাই প্রত্যাশা এখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের।