ঐশীকে আজ কারাগারে আনা হচ্ছে

 

স্টাফ রিপোর্টার: পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানকে হত্যায় তাদের একমাত্র মেয়ে ঐশীকে উৎসাহিত করেছিলো তার বন্ধু জনি। তদন্ত সংস্থার কাছে রিমান্ডে জনির নাম ওঠে আসা এবং সর্বশেষ আদালতের কাছে দেয়া জবানবন্দিতে ঐশী রহমান বন্ধু জনিকে দায়ী করেছে। বলেছে জনির উৎসাহে বাবা-মাকে সে খুন করেছে। গোয়েন্দা পুলিশ জনিকে গ্রেফতারে প্রযুক্তিগতভাবে অভিযান চালানোর কথা বললেও খুনের পনেরো দিনেও তাকে কোথাও খুঁজে পায়নি। তদন্ত সংস্থার একজন কর্মকর্তা অবশ্য বলেছেন, জনি মাস্তান টাইপের যুবক। আবার বাড্ডা এলাকার স্থানীয় একটি সূত্র বলেছে, জনির হাতও লম্বা। প্রশ্ন ওঠেছে- জনি কি খুবই ক্ষমতাধর যুবক? তবে ঐশীকে রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করার দিন বিকালে ফলোআপ ব্রিফিঙে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মো. মনিরুল ইসলাম বলেছিলেন, মাহফুজ-স্বপ্না খুনের ঘটনাও অন্য খুনের ঘটনার মতোই তদন্ত চলছে। এখানে কে প্রভাবশালী কে গরিব সেটা মুখ্য বিষয় নয়।

2nd2

এদিকে ঐশী প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় আদালতের নির্দেশে তাকে গাজীপুরের কোনাবাড়ির কিশোরী উন্নয়ন (সংশোধন) কেন্দ্র থেকে গত বৃহস্পতিবার কারাগারে পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বলেছে, তাদের হাতে এখনও আদালতের আদেশের কপি আসেনি। আসামাত্র তারা যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। সূত্র জানায়, ঐশীকে আজ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হবে, সেখান থেকে কাশিমপুর কারাগারে নেয়ার কথা। কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেলসুপার মো. আলতাফ হোসেন বলেছেন, ঐশীকে স্থানান্তর করা হবে বলে শুনেছি। আমরা প্রস্তুতও রয়েছি।

ঐশীর স্বীকারোক্তিতে বন্ধু আসাদুজ্জামান জনির নাম উঠে এলেও গোয়েন্দা পুলিশ তাকে এখনও গ্রেফতার করেনি। এক কর্মকর্তা বলেছেন. ঐশীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী তারা জনিকে গ্রেফতারে অভিযানও চালিয়েছেন। সে অভিযান এখনও অব্যাহত আছে। জনি নজরদারিতে থাকার কথাও বলা হয়েছে। ঐশী আদালতে যে স্বীকারোক্তি দিয়েছে তাতে জনি তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। বাড্ডার আফতাব নগরে স্টেপ আপ নামে তার একটি নাচের স্কুল আছে। তারা একসাথে ইয়াবা সেবন করতো। আর জনির মাধ্যমে রকি নামে আরেক জনের সাথে তার পরিচয় হয়। রকি রেন্ট-এ কারের ব্যবসা করে বাড্ডায়।

জানা গেছে, রকি ও জনির চলাফেরা বাড্ডা এলাকায় ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের সাথে। অবৈধ কারবার-মাদকের চালানের বাণিজ্যের যোগসাজসের তথ্যও পাওয়া গেছে। জনির চেয়ে রকি আরও বেশি প্রভাবশালী। রকির হাত অনেক লম্বা। ঐশীর বাবা-মা খুন হওয়ার পর রকিই জনিকে আশ্রয় দেয় এবং পালানোর পথও করে দিয়েছিলো। কিন্তু শেষমেশ জনি পালাতে পারেনি। ঐশীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী তার বাবা-মাকে খুন করতে তাকে শতভাগ উৎসাহ দিয়েছে জনি। বাবা-মায়ের কড়াকড়িতে বন্দিত্ব দশায় ঐশী আত্মহত্যা করবে বলে জনিকে জানায়। কিন্তু জনি তাকে বলেছে, তুমি আত্মহত্যা করবে কেন- তোমার বাবা-মায়েরই বেঁচে থাকার অধিকার নেই। এ হত্যাকাণ্ডে জনি যে নাটের গুরু সেটা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে স্পষ্ট হয়েছে। বাবা-মাকে খুনের পরদিন সকাল থেকে ঢাকায় ঘোরাঘুরিকালে জনি ও রকির সাথে ঐশীর দেখা হয়েছে। তখন বিভিন্ন রকম পরামর্শ হয়। এমনকি খুনের আগে জনি হুইস্কি সরবরাহ করে। পরেও তার সাথে পরামর্শ হয়। সবমিলে জনির সম্পৃক্ততা প্রমাণ হলেও সে থেকে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) কার্যালয় লাগোয়া রাজধানীর ২, চামেলীবাগের চামেলী ম্যানশনের ৬ তলার ৫/বি নম্বর ফ্ল্যাট থেকে ১৬ আগস্ট পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ১৪ আগস্ট তাদের খুন করে মেয়ে ঐশী পালিয়ে যায়। ১৭ আগস্ট নিজেই পুলিশের কাছে ধরা দেয়। গোয়েন্দা পুলিশ তাকে নিয়ে অভিযানে নেমে তাদের বাসার মেয়ে সুমি ও বন্ধু মিজানুর রহমান রনিকে গ্রেফতার করে। রিমাণ্ড শেষে ঐশী ও সুমি দোষ স্বীকার করে আদালতে খুনের দায় স্বীকার করায় তাদের কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠনো হয়। রনিকে আবারও রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ঐশী প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় সমাজ সেবা অধিদফতরের প্রবেশন কর্মকর্তা ছিদ্দিকুর রহমান আদালতে জেলহাজতে প্রেরণের আবেদন করলে বৃহস্পতিবার বিচারক আনোয়ার ছাদাত ঐশীকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।