এসএসসি ফরমপূরণে বোর্ড নির্ধারিত ফি’র বেশি টাকা আদায় করলেই শাস্তি

চুয়াডাঙ্গা জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সভায় জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসাইন

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় স্বাস্থ্য ও শিক্ষাবিভাগসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তর ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের নানা অসঙ্গতি, অনিয়ম ও কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসাইন। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সভায় জেলা প্রশাসক বিভিন্ন দপ্তরের সেবা ও উন্নয়নমূলক কাজের চুলচেরা বিশ্লেষণ করেন।

আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার ফরমপূরণ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসাইন বলেন, ফরম পূরণে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী টাকা আদায় করতে হবে। বেশি টাকা নেয়া হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা শিক্ষা কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করে ফরমপূরণে টাকা আদায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। কোচিং বা বাড়তি ক্লাসের দোহায় দিয়ে কোনো টাকা আদায় করা যাবে না। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, যেসব শিক্ষকরা পাঁচ থেকে সাতবছর পর্যন্ত পড়িয়ে শিক্ষার্থীদেরকে যোগ্য করতে পারেনি। তাদের হাতে কী এমন ম্যাজিক আছে যে- মাত্র দু মাসের কোচিঙে ছাত্রছাত্রীদেরকে যোগ্য করে তুলবেন? বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে নির্বাচনী পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণদের কাছ থেকে অতিরিক্ত এক হাজার টাকা কোচিং ফি হিসেবে আদায়ের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে জেলা প্রশাসক ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কিশোরী মোহন সরকারের কাছে কৈফিয়ত চান। জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার অজুহাতে যেসব বিদ্যালয়ে সেন্টার নেই সেখানেও ঠিকমতো ক্লাস করানো হচ্ছে না। শিক্ষকরা খেয়ালখুশি মতো আসছেন, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতো চলাচল করছেন। এসব চর্চা বন্ধ করতে হবে।

জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ হামিম হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম বেনজীর, সিভিল সার্জন ডা. আজিজুল ইসলাম ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মল্লিক সাঈদ মাহবুব উপস্থিত ছিলেন।

অন্যান্যের মধ্যে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কেএম মামুন উজ্জামান, আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান ও জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল হাফিজ, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ, গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী অমিত কুমার দেব, ওজোপডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হাসান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হরিবুলা সরকার, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপপরিচালক রেজাউল করিম, জেলা শিক্ষা অফিসার রুহুল আমীন ও জেলা তথ্য অফিসার মশিউর রহমানসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

স্বাস্থ্যবিভাগের অনিয়ম প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক বলেন, অফিস আওয়ারে সকাল আটটা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত কোনো রিপ্রেজেনটেটিভ সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে প্রবেশ করতে পারবেন না। কর্মরত চিকিৎসকরা সকাল ৮টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত সরকারি নির্ধারিত অফিস টাইম মেনে চলতে হবে। জনবল কম থাকলেও যারা আছেন তাদের নিয়মিত অফিস করতে হবে। বর্তমান সিভিল সার্জন আগের সিভিল সার্জনের মতো ফ্রি স্টাইলে চলছেন। সিভিল সার্জন কর্মস্থলে না থাকলে প্রশাসন কীভাবে চালাবেন। অন্যরাও অনিয়ম করবে এটাই সাভাবিক। সুনির্দিষ্ট চিকিৎসকের নাম উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, যেসব চিকিৎসক সার্জন না হয়েও অপারেশন করছেন, তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে।

এদিকে শীতকালকে সামনে রেখে সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। বিশেষ করে এ সময়ে কেউ যেন কাঁচা খেজুরের রস না খায়। সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কাঁচা রস খেয়ে নিপা ভাইরাস আক্রান্ত হলে মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। চুয়াডাঙ্গা দর্শনার কেরু চিনিকলকে বাঁচাতে আখ মাড়াই করে গুঁড় তৈরি করা যাবে না।

আলমডাঙ্গা উপজেলার গোকুলখালী বাজারে অবস্থিত ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে অবিলম্বে পুলিশ ক্যাম্প প্রত্যাহার করে সুবিধাজনক অবস্থানে নিয়ে যেতে হবে। যেসব বিদ্যালয়ে পুলিশক্যাম্প দখল করে রেখেছেন তা দখলমুক্ত করতে হবে।

সভায় জানানো হয়, চলতি মরসুমে টেস্ট রিলিফ ও কাবিখা প্রকল্পের ৫০ শতাংশ টাকা দিয়ে যে সকল স্থানে বিদ্যুত ব্যবস্থা নেই সেখানে সোলার প্যানেল ও বায়োগ্যাস প্রকল্প চালু বাধ্যতামূলক করেছে সরকার।

সদর উপজেলার বেগমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষিকাকে অবৈধভাবে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার শ্মশানপাড়ায় অবস্থিত মতিয়ার রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডেপুটেশনে আনা হয়েছে। অবিলম্বে এ ডেপুটেশনের অর্ডার বাতিলের জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়।

সভা শেষে জেলা প্রশাসক জেলা পর্যায়ের সকল সরকারি দপ্তরের প্রধানদের উদ্দেশে বলেন, কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া জেলা পর্যায়ের এ ধরনের সভায় অনুপস্থিত থাকা যাবে না। দাপ্তরিক কাজে কেউ জেলার বাইরে অবস্থান করলে তার পক্ষে যোগ্য প্রতিনিধি পাঠাতে হবে। যিনি দাপ্তরিক সব বিষয়ে তথ্য দিতে পারেন।

এছাড়া অবিলম্বে বাকি থাকা সকল অবৈধ স্থাপনা অবিলম্বে উচ্ছেদ করা হবে। গ্রাহকদেরকে ভূমিকর, পৌর কর, বিদ্যুত, টেলিফোন ও পানির বিল নিয়মিত পরিশোধ করতে হবে। সরকারি যেসব দপ্তরে তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়নি, সেসব প্রতিষ্ঠানে অবিলম্বে তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত করতে হবে। মাল্টিমিডিয়ায় ক্লাস নিশ্চিত করতে হবে।