এসএসসি পরীক্ষা বাংলা দ্বিতীয়পত্রের প্রশ্নও ফেসবুকে!

স্টাফ রিপোর্টার: এসএসসির প্রথম পরীক্ষা ‘বাংলা প্রথমপত্রের’ প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার পর এবার দ্বিতীয় দিনের পরীক্ষার প্রশ্নও ফাঁস হয়েছে। গণমাধ্যমে এ তথ্য জানিয়ে বলা হয়েছে পরীক্ষা শুরুর আগে ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে বাংলা দ্বিতীয়পত্রের প্রশ্ন। আর ওই ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই অনুষ্ঠিত হয়েছে পরীক্ষা। এভাবে একের পর এক প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে। এদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলায় মোট ১২ হাজার ৫৬৮ পরীক্ষার্থীর মধ্যে গতকালও ৫৬ জন অনুপস্থিত ছিলো বলে জানা গেছে। বহিষ্কার কিংবা নকলের তেমন খবর মেলেনি।

গতকাল শনিবার বাংলা দ্বিতীয়পত্রের পরীক্ষা শুরু হয় সকাল ১০টায়, শেষ হয় দুপুর ১টায়। পরীক্ষা শুরুর পৌনে এক ঘণ্টা আগে প্রশ্ন ফাঁস হয়ে তা ফেসবুকে চলে আসে। প্রশ্নপত্রটি একটি গ্রুপে আপলোড হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য অনেক গ্রুপ ও পেজে মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে বাংলা দ্বিতীয়পত্রের প্রশ্ন ও উত্তর পাওয়া যাবে তা বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজে বিজ্ঞাপন আকারে দেয়া হয়েছিলো। কোথাও কোথাও বলা হয়েছে প্রশ্ন পেতে হলে এই গ্রুপটিকে লাইক দিন। যারা যারা ওই গ্রুপে লাইক দেয়, তাদেরকে ম্যাসেঞ্জারে প্রশ্ন ও উত্তর পাঠানো শুরু হয়। গতকাল শনিবার সকালে পরীক্ষা শুরুর আগে বাংলা দ্বিতীয়পত্রের নৈর্ব্যক্তিক (বহুনির্বাচনী) অভীক্ষার ‘খ’ সেটের উত্তরসহ প্রশ্নপত্র পাওয়া যায় ফেসবুকে। যার সঙ্গে অনুষ্ঠিত হওয়া প্রশ্নপত্রের হুবহু মিল পাওয়া গেছে। এছাড়া মেসেঞ্জারে সকাল ৯টা ১৬ মিনিটে ‘হিমুর ছায়া’ নামের একটি আইডি থেকেও উত্তরসহ প্রশ্ন ইমেজ আকারে পাঠানো হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার এসএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার ৩২ মিনিট আগে প্রশ্নপত্র ফেসবুকে পোস্ট করা হয়। একটি পরীক্ষা কেন্দ্রের কর্তব্যরত কতিপয় অসাধু শিক্ষক প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে পাঠিয়ে দিয়েছে ফাঁসকারী চক্রের কাছে এমন অভিযোগ রয়েছে। এসএসসি পরীক্ষা শুরুর আগে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছিলেন, প্রশ্নফাঁসের প্রমাণ পেলে পরীক্ষা বাতিল হবে। কিন্তু প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে কি-না তার প্রমাণ খোঁজেনি মন্ত্রণালয়। আর পরীক্ষা বাতিলের ঘটনাও ঘটেনি। আর প্রশ্ন ফাঁস রোধে পরীক্ষা শুরুর তিন ঘণ্টা আগে শিক্ষামন্ত্রণালয় ফেসবুক বন্ধের প্রস্তাব দিলেও যৌক্তিকতা বিবেচনা না হওয়ায় এতে রাজি হয়নি টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে গতকাল ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহেদুল খবীর চৌধুরী বলেন, আগে বিভিন্ন মাধ্যমে পাওয়া প্রশ্ন মিলিয়ে দেখেছি। মেলেনি। এ কারণে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে বলা যাবে না। যে লিংকগুলো থেকে প্রশ্নপত্র প্রকাশ করা হচ্ছে সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিটিআরসি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলা হয়েছে। তারা আমাদের জানিয়েছে, তারা এসব উত্স খোঁজার চেষ্টা করছেন।

বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্ন ফাঁসের গণমাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সোহরাব হোসাইন বলেছেন, লাখ লাখ সৎ মানুষের মধ্যে যদি একজনও অসৎ হন, তাহলে সবার সততাকে ওই একজনই প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারেন। এ কারণে শতভাগ নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি না, প্রশ্নফাঁস রোধ করা সম্ভব। ফলে এটি একটি অসহায় অবস্থা। যদি প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ হয়, তাহলে সেটা হবে সৌভাগ্যের ব্যাপার। প্রশ্ন ফাঁসকারীকে ধরিয়ে দিতে পারলে বিরাট অঙ্কের টাকা পুরস্কার দেয়ার পরিকল্পনার কথা জানান মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সোহরাব হোসাইন ।

গত বৃহস্পতিবার সারাদেশে একযোগে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় বসে ২০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। এসএসসিতে এবার অভিন্ন প্রশ্নপত্রে হচ্ছে সব বোর্ডের পরীক্ষা। গতকাল ঢাকা শিক্ষাবোর্ড থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলা দ্বিতীয়পত্রের পরীক্ষায় ৮৯ পরীক্ষার্থী বহিষ্কার হয়। এছাড়া অনুপস্থিত ছিলো ১০ হাজার ২১০ জন।