এমপিরা স্কুল কলেজের সভাপতি থাকতে পারবেন না : হাইকোর্ট

 

স্টাফ রিপোর্টার: দেশের বেসরকারি স্কুল ও কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি পদে থাকতে পারবেন না জাতীয় সংসদের সদস্যরা (এমপি)। এমপিদের নিয়োগ সংক্রান্ত প্রবিধানমালার ৫(২) ধারা অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে হাইকোর্ট এ বিধানকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে অভিহিত করেছে। এই বিধিমালার আলোকে সংসদ সদস্যরা যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণে ইচ্ছুক তা লিখিতভাবে বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অভিহিত করতেন। এমপিদের এই অভিপ্রায় পত্রই চূড়ান্ত মনোনয়ন বলে গণ্য হত।

এ ছাড়া হাইকোর্ট বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ ধরনের গভর্নিং বডি বা ক্ষেত্রমতে ম্যানেজিং কমিটি গঠন সংক্রান্ত প্রবিধানমালার ৫০ ধারা অবৈধ ঘোষণা করেছেন। ওই ধারার ক্ষমতাবলে শিক্ষা বোর্ড এবং সরকারের অনুমতি নিয়ে অনির্বাচিত লোকদের দিয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করা হতো। এ কারণে হাইকোর্ট ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের জন্য গঠিত বিশেষ কমিটি অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছে। এর ফলে বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপির নেতৃত্বাধীন কমিটিও বাতিল হয়ে গেলো। আদালত ভিকারুননিসার বিশেষ কমিটি বাতিল করে অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য একটি অ্যাডহক কমিটি গঠনের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। ওই অ্যাডহক কমিটিকে ৬ মাসের মধ্যে উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্বাচন সম্পন্ন করারও নির্দেশ দেয়া হয়।

রিটের শুনানিতে আইনজীবী ইউনূস আলী আকন্দ যুক্তি দিয়েছিলেন, সংসদ সদস্যদের কাজ হচ্ছে আইন প্রণয়ন করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খবরদারি করা নয়। কিন্তু তারা তাদের নির্বাচনী এলাকার চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিনা ভোটে গভর্নিং বডির সভাপতি পদে নিয়োজিত হচ্ছেন। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিজেদের মনোনীত ব্যক্তিদেরকে নিয়োগ দেয়ার জন্য ডিও লেটার দিতেন। নিয়োগ বাণিজ্য থেকে শুরু করে ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তির ক্ষেত্রেও তারা অন্যায় হস্তক্ষেপ করেন। তিনি এমপিদের নিয়োগ সংক্রান্ত ৫ (২) ও ৫০ ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে দাবি করেন। তার এই যুক্তি হাইকোর্ট গ্রহণ করে গতকাল বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের ডিভিশন বেঞ্চ এই রায় দেন।

রায়ের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) ইশরাত জাহান দাবি করেছেন, হাইকোর্টের রায়ের ফলে নতুন করে কোনো সংসদ সদস্য বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সভাপতি হতে পারবেন না। এখন যারা আছেন তারা মেয়াদ শেষ করতে পারবেন। তবে চাইলে নির্বাচনের মাধ্যমে তারা সভাপতি হতে পারবেন। তার এই অভিমত নিয়ে আইন বিশেষজ্ঞদের দ্বিমত রয়েছে। তারা বলেছেন, ৫ (২) ধারা অনুযায়ী এমপিরা নিয়োগপ্রাপ্ত হন। যেহেতু এই ধারা অবৈধ ঘোষিত হয়েছে ফলে তাদের নিয়োগও অবৈধ।

ইউনূস আলী আকন্দ দাবি করেছেন, হাইকোর্টের রায়ের ফলে সংসদ সদস্যরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতি পদে আর থাকতে পারবেন না। এদিকে ডিএজি ইশরাত জানিয়েছেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে সরকার আপিল করবে। বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা-২০০৯ এর এই দুটি ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করেছিলেন আইনজীবী ইউনূস আলী আকন্দ। আবেদনে বলা হয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধ্যাদেশ, ১৯৬১ এর ৩৯ (২) ধারায় আইন তৈরি করার ক্ষমতা বোর্ডকে প্রদান করা হয়েছে। তবে কি ধরনের আইন তৈরি করতে হবে তা ওই ধারায় ৬ষ্ঠ দফায় উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু এই দফায় বিশেষ কমিটি বা সংসদ সদস্যরা গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান হবেন এরূপ কোনো ক্ষমতা বোর্ডকে দেওয়া হয়নি। ফলে প্রবিধানমালার ৫ ও ৫০ ধারা উক্ত অধ্যাদেশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ ছাড়া এসব ধারা সংবিধানের প্রস্তাবনা ও ৭, ২৬, ২৭, ২৮, ৩১, ৫৯, ৬০ ও ৬৫ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

এই আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট গত ১৩ এপিল রুল জারি করে। রুলে ৫ ও ৫০ ধারা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে গতকাল হাইকোর্ট এই রায় দেয়। আবেদনের পক্ষে আবেদনকারী নিজে এবং রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ইশরাত জাহান শুনানি করেন।

ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজে ২০০৮ সালের পর থেকে আর কোনো কমিটি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়নি। ২০১০ সাল থেকে চার দফায় অ্যাডহক ও দুই দফায় বিশেষ কমিটি গঠনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হয়েছে। অবশ্য তা ছিলো আইনের লঙ্ঘন। কেননা আইনে বলা হয়েছে অ্যাডহক কমিটির মেয়াদ হবে ৬ মাস। কিন্তু কমিটি ২ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছে। কমিটির বিরুদ্ধে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে।