এমপিদের আবারও সতর্ক করলেন প্রধানমন্ত্রী

 

স্টাফ রিপোর্টার: আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকের পর সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে দলীয় সংসদ সদস্যদের আবারো সতর্ক করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনবিচ্ছিন্ন এমপিরা আগামী একাদশ জতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন না। সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে অনির্ধারিত আলোচনায় আগামী সংসদ নির্বাচন ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনা হয়। এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এমপিদের এই হুশিয়ারি দেন। পাশাপাশি আওয়ামী লীগকে অনুকরণ করে বিএনপি ভিশন-২০৩০ দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে একাধিক মন্ত্রীর সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।

সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৪ সালের নির্বাচনের মতো হবে না। এবার যারা এমপি আছেন আগামীতেও তারা সবাই দলের মনোনয়ন পাবেন এটা যদি কেউ মনে করেন সেটা ভুল হবে। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে হলে ভালোভাবে কাজ করতে হবে। জনগণের সাথে সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ ভালোভাবে তুলে ধরে ভোটারদের আকৃষ্ট করতে হবে। যারা নিজের নির্বাচনী এলাকায় যান না, জনগণের সাথে, দলের তৃণমূল নেতাকর্মীর সাথে সম্পর্ক, যোগাযোগ রাখেন না তারা দলের মনোনয়ন পাবেন না। মন্ত্রীদের সাথে এ বিষয়ে আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী এখন থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী সরকারের উন্নয়নকে জনগণের মাঝে ভালোভাবে তুলে ধরা এবং সংগঠনকে শক্তিশালী করে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করার নির্দেশ দেন। এর আগে গত ৭ মে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায়ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন তাদের কাউকে আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন দেয়া হবে না। নির্বাচনী এলাকায় কার কি অবস্থা, কতটুকু জনপ্রিয়তা আছে সেটা যাচাই করার জন্য তিনি জরিপ চালিয়ে তথ্য নিচ্ছেন এবং তালিকা তৈরি করছেন বলেও সংসদীয় দলের ওই বৈঠকে জানিয়েছিলেন।
সূত্র আরও জানায়, সোমবারের মন্ত্রিসভার বৈঠকে কথাপ্রসঙ্গে বিএনপি ঘোষিত ভিশন-২০৩০’র বিষয়টিও উঠে আসে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রিসভার অনেকেই বিএনপির এ ভিশন-২০৩০ আওয়ামী লীগের ভিশন-২০২১ ও ভিশন-২০৪১কে অনুকরণ করা হয়েছে বলেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর হাতে বিএবির ১৩৬ কোটি টাকার অনুদান হস্তান্তর: বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্যাংকস (বিএবি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে অনুদানের ১৩৬ কোটি ২০ লাখ টাকা তুলে দিয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় গণভবনে এক অনুষ্ঠানে বিএবির সদস্য দেশের বেসরকারি ৩৭টি ব্যাংকের চেয়ারম্যানরা প্রধানমন্ত্রীর হাতে এ চেক হস্তান্তর করেন। এ টাকার মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টে ৫৭ কোটি ৪৫ লাখ, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টে ৫০ কোটি ২৫ লাখ এবং সায়েমা ওয়াজেদ হোসেন পুতুলের সূচনা ফাউন্ডেশনে ২৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। বিএবির সভাপতি নজরুল ইসলাম মজুমদার জানান, হস্তান্তর করা ১৩৬ কোটি ২০ লাখ টাকার মধ্যে ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড ১৫ কোটি এবং ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড ছয় কোটি টাকা দিয়েছে। নয়টি ব্যাংক পাঁচ কোটি টাকা করে দিয়েছে ৪৫ কোটি টাকা আর অন্যান্য ব্যাংকগুলো চার কোটি করে টাকা দিয়েছে। এছাড়া নতুন কয়েকটি ব্যাংক ৫০ লাখ টাকা করে দিয়েছে জানিয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, নতুন ব্যাংকগুলো এখনো মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। তাই নতুন ব্যাংকগুলো ৫০ লাখ করে টাকা দিয়েছে। বিএবির সদস্য ৩৭টি ব্যাংক একত্রিত হয়ে এবারই গণভবনে এসেছে জানিয়ে সংগঠনটির এ সভাপতি বলেন, আমরা কোনো রাজনৈতিক কাজে সহায়তা করছি না। আমরা শিক্ষার কাজে সহায়তা করছি। আমরা মানবিক কাজে সহায়তা করছি।

সহায়তার চেক গ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই সবাই সহায়তা করুক। তাতে সকলে উপকৃত হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে প্রতি মাসে প্রায় এক হাজার ৮০০ শিক্ষার্থী, বয়স্ক এবং রোগীকে ৫০০ থেকে ২০০০ টাকা করে সহায়তা দেয়া হয়ে থাকে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।সায়েমা ওয়াজেদ হোসেন পুতুলের সূচনা ফাউন্ডেশন সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অটিজম ও প্রতিবন্ধকতা একটি বিরাট সমস্যা। প্রতিটি বিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞানী বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের দিয়ে একটি সেন্টার করার কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। সমাজে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর অবদানের কথা তুলে ধরতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকগুলো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। সোশ্যাল সেফটি নেটে এদের বিরাট অবদান রয়েছে।
পরে বেপজার আওতাধীন বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টে অনুদান দেয়। বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মুহম্মদ হাবিবুর রহমান খান সব বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দুই কোটি ৫৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা তুলে দেন। প্যাসিফিক জিন্স ৫০ লাখ টাকা এবং এভারগ্রিন গ্রুপ এক কোটি টাকা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টে দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অন্যদের মধ্যে স্মার্ট গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজ ২৫ লাখ টাকা, কুন তং অ্যাপারেল লিমিটেড ৫০ লাখ টাকা, এপিক গার্মেন্টস ২৫ লাখ টাকা, অনন্ত গ্রুপ ২৫ লাখ টাকা, কাতার মার্বেল কোম্পানি ২৫ লাখ টাকা এবং ইউনাইটেড পাউয়ার জেনারেশন ৫০ লাখ টাকা দিয়েছে। এছাড়া ত্রাণ তহবিলে এক কোটি করে টাকা দিয়েছে নিটোল-নিলয় গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, ঢাকা মটর্স, বেঙ্গল গ্রুপ এবং ক্রাউন সিমেন্ট গ্রুপ। আমান গ্রুপ, রিফ্যাব, অনোয়ার গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজ, বসুন্ধরা গ্রুপ, ইউনিক গ্রুপ এবং দেশ অ্যানার্জি লিমিটেড দুই কোটি করে টাকা দেয়। আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ দিয়েছে তিন কোটি টাকা। পরে প্রধানমন্ত্রী সবার সাথে নৈশভোজে অংশ নেন।