এমপিওভুক্তির জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দাবি

স্টাফ রিপোর্টার: শিক্ষাক্ষেত্রে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন সরকার ও বিরোধী দলের এমপিরা। গতকাল ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এ দাবি জানান। প্রথমে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং পরে ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন সরকারি দলের হুইপ শাহাব উদ্দিন, অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন, হাবিবুর রহমান মোল্লা, বজলুল হক হারুন, মকবুল হোসেন, মীর শওকত আলী বাদশা, মোজাম্মেল হক, এমএ আউয়াল, আবদুল মতিন, বেগম মাহজাবিন খালেদ, শওকত হাছানুর রহমান রিমন, গাজী আমজাদ হোসেন মিলন, ডা. এনামুর রহমান, অ্যাডভোকেট নাভানা আখতার ও মোহাম্মদ আবদুল্লাহ এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা ও নূর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরী।

পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন গণতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ  ছিলো। এ নির্বাচন নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এ নির্বাচন দিয়ে গণতন্ত্রের সুষ্ঠু ভিত তৈরি হয়েছে। নির্বাচন বানচালের জন্য বিএনপি-জামায়াত অনেক সন্ত্রাস করেছে। অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তারা নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি। তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন না হলে দেশে গণতন্ত্র থাকতো না, দেশ মুখ থুবড়ে পড়তো। বিএনপি-জামায়াত মনে করেছিলো জনগণ তাদের সাথে আছে। কিন্তু জনগণ তাদের সন্ত্রাসী কমর্কাণ্ড প্রত্যাখ্যান করেছে। এর মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের মানুষ প্রমাণ করেছে তারা এদেশের ধ্বংসাত্মক রাজনীতির স্থান দেবে না। তিনি বলেন, আমাদের দেশে মাদক বিরাট সমস্যা। এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। মাদক তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। মাদক ধরা পড়ছে, কিন্তু ব্যবসায়ীরা ধরা পড়ছে না। ব্যবসায়ীরা ধরা না পড়লে এ সমস্যার সমাধানও হবে না। শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, শিক্ষার মান ধরে রাখা যাচ্ছে না। শিক্ষার হার বাড়ছে, বিনামূল্যে বই দেয়া হচ্ছে, শিক্ষা অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে, কিন্তু শিক্ষার মান বাড়ছে না। এরজন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলেতে হবে। ভালো শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। কারণ একজন শিক্ষক নিয়োগ দিলে ৩০ বছর তিনি থাকেন। তাই শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে যত্নবান হতে হবে। আর বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি বন্ধ রেখে শিক্ষাখাতের অগ্রযাত্রা ধরে রাখা যাবে না। এজন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, পৃথিবীর তিনটি বৃহত্তম নদী বাংলাদেশের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তবে আঞ্চলিক সহযোগিতা ছাড়া নদীর পানি ব্যবস্থাপনা সম্ভব না। আমরা চেষ্টা করছি ভারত নেপাল ও চীনের সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে পানি ব্যবস্থার উন্নয়ন করা। নদীর নাব্যতা সৃষ্টি করা। নদী দূষণ বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছি। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কঠোর সমালোচনা করে সরকারি দলের মৃণাল কান্তি দাস বলেন, বাজেট বাস্তবায়ন, অর্থনীতির অগ্রগতি, সুশাসন, স্থিতিশীলতা, শান্তি ও গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। কিন্তু রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রধান অন্তরায় গুলশান-২ নম্বরে অবস্থিত নাইট ক্লাবের মালিক বেগম খালেদা জিয়া। তিনি (খালেদা) স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের শত্রু। তিনি মানবতা, শান্তি, উন্নয়ন, প্রগতি, সভ্যতা ও  দেশের জনগণের শত্রু। খালেদা  জিয়াকে পেট্রোল বোমা ফ্যাক্টরির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, উনি (খালেদা) হত্যা, সন্ত্রাস, জ্বালাও-পোড়াও, অগ্নিসংযোগ ও নৈরাজ্যের মাস্টার মাইন্ড। পেট্রোলবোমা  কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক খালেদা জিয়া। জঙ্গিবাদের প্রজনন কেন্দ্র,  আইএসআই’র এজেন্ট এবং আন্তর্জাতিক সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের পৃষ্ঠপোষক। তাকে মুক্ত দুনিয়ায় অবাধ বিচরণ করতে দেয়ার অর্থ দাঁড়ায় লোকালয় বা বসতি ঘরে কালনাগিনী বিষাক্ত গোখরা সাপ পোষা বৈ আর কিছুই হতে পারে না। বিষাক্ত কালনাগিনীকে বিশ্বাস করা যায়, তবে খালেদাকে বিশ্বাস করা যায় না। তার দল ও জোটকেও না। আওয়ামী লীগের মীর শওকত আলী বাদশা এমপিওভুক্তিতে বরাদ্দ না রাখার সমালোচনা করে বলেন, এ সংসদের ৩৪৯ জন সদস্য এমপিওভুক্তি অব্যাহত রাখার পক্ষে। তারা পর্যাপ্ত বরাদ্দেরও দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু অর্থমন্ত্রী বিষয়টি কেন গুরুত্ব দিচ্ছেন না বুঝি না। এ বিষয়ে বাজেটে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দেয়া হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি সুন্দরবন ও মংলা বন্দরের উন্নয়নের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর নিহত মুক্তিযুদ্ধকালীন সেক্টর কমান্ডার ও কে ফোর্সের প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) খালেদা মোশাররফের কন্যা সংসদ সদস্য বেগম মাহজাবিন খালেদ বলেন, বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার মাধ্যমে এদেশে হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্রের রাজনীতি চালু করেন খুনি জিয়াউর রহমান। সেই কারাগারে জাতীয় চার নেতার হত্যার সঙ্গে জড়িত এবং জিয়াউর রহমানের নির্দেশেই ৭ই নবেম্বর আমার বাবা খালেদ মোশাররফ, এটিএম হায়দারসহ অসংখ্য সামরিক অফিসারকে হত্যা করা হয়। তিনি বিদেশে বসে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।