এক সপ্তাহ ধরে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত : ৭ দিনের আল্টিমেটাম

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: দামুড়হুদার লোকনাথপুর সহশিক্ষা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে পার্শবর্তী কাদিপুর ও গোবিন্দপুর গ্রামের অভিভাবকগণ। দু গ্রামের প্রায় দেড় শতাধিক অভিভাবক ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপবৃত্তি প্রদানে অনিয়ম, রেজাল্টশিট পরিবর্তন, যৌন হয়রানি, ম্যানেজিং কমিটিতে তাদের কোনো প্রতিনিধি না রাখাসহ নানা অভিযোগ তুলে গত রোববার থেকে ওই দু গ্রামের প্রায় শতাধিক ছাত্র/ছাত্রীকে বিদ্যালয়ে যাওয়া থেকে বিরত রাখার পাশাপাশি প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন। প্রতিবাদ সমাবেশে উদ্বেগ প্রকাশ করে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ৭ দিনের আল্টিমেটাম ঘোষণা করেছেন ক্ষুব্ধ অভিভাবকগণ। গতকাল শুক্রবার বিকেলে কাদিপুর বটতলায় ওই প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার লোকনাথপুরের পার্শবর্তী দুটি গ্রাম। একটির নাম কাদিপুর এবং অপরটির নাম গোবিন্দপুর। ওই দু গ্রামের প্রায় দেড় শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী লোকনাথপুর সহশিক্ষা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে। সম্প্রতি ওই দু গ্রামের অভিভাবকগণ লোকনাথপুর সহশিক্ষা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে তাদের ছেলেময়েদের বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দেন এবং গতকাল শুক্রবার বিকেলে কাদিপুর বটতলায় এক প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। দু গ্রামের প্রায় ৫ শতাধিক গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে সাবেক ইউপি সদস্য ইউনুচ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন ওয়ার্ড আ.লীগ সভাপতি আশাদুল ইসলাম, সাবেক মেম্বার সাইদুর রহমান, ওহিদুজ্জামান, জামাত আলী, ইউনুচ আলী, মজিবার রহমান, শাজাহান আলী, লাল মোহাম্মদ লাল্টু, দেলোয়ার হোসেন, রিপন প্রমুখ।
বক্তারা লোকনাথপুর সহশিক্ষা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে বলেন, ওই বিদ্যালয়ে আমাদের দু গ্রাম থেকে প্রায় দেড় শতাধিক ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া করে অথচ তাদেরকে হিস্যানুযায়ী উপবৃত্তি থেকে কৌশলে বঞ্চিত করা হয়। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটিতে ওই দু গ্রামের কোনো অভিভাবককে সদস্য রাখা হয় না। মেয়েরা রাস্তায় যৌন হয়রানির শিকার হলেও তার কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না। ভর্তি ফিসে অনিয়ম করা হয়। আমাদের ছেলেমেয়েরা পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করলেও ওই ফল রাতারাতি পরিবর্তন করে দেয়া হয়। সর্বপরি ওই দু গ্রামের ছাত্রছাত্ররীরা দীর্ঘদিন ধরে নানা বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে। অভিযোগ খতিয়ে দেখলে অবশ্যই এর সত্যতা মিলবে বলে বক্তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বক্তারা আরো বলেন, এসব বিষয় নিয়ে আমরা বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের কাছে জানানোর পরও তারা কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। ফলে আমরা অনেকটা বাধ্য হয়েই আমাদের ছেলে-মেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠানো থেকে বিরত রেখেছি। আমরা চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য ও দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। আশা করি তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন এবং ৭ দিনের মধ্যে আমাদের ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ায় যে বিঘ্নের সৃষ্টি হচ্ছে তা নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখবেন। সেই সাথে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির অপসারণও দাবি করেন বক্তারা।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি জিল্লুর রহমান খোকন বলেন, তারা যে সমস্ত অভিযোগ তুলেছেন তা সঠিক নয়। ওই দু গ্রামের কোনো অভিভাবকই আমার কাছে উত্থাপিত বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ দেননি। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহাবুদ্দিন শাহীন ওই দু গ্রামের অভিভাবকদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ওই দু গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীরা না এলে না আসুক। তাতে আমাদের কোনো ক্ষতি নেই। তবে তিনি পরীক্ষার ফলাফল পরিবর্তনের বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন ভূলত্রুটি হতেই পারে। এ দিকে ছাত্রছাত্রীদের লেখাপাড়ায় অনিশ্চয়তার বিষয়টি নিয়ে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এলাকার সচেতন অভিভাবকমহল।