একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু ২৬ মে অনলাইন ও এসএমএস আবেদন করতে হবে

 

স্টাফ রিপোর্টার: এসএসসির ফল পাওয়ার পর এবার কলেজে ভর্তির জন্য অপেক্ষা শিক্ষার্থীদের। কলেজে ভর্তির খোঁজখবর নেয়া শুরু করেছে শিক্ষার্থী ও তার অভিভাবকরা। ভালো কলেজগুলোতেই ভর্তির জন্য তাদের দৌড়ঝাপ। উদ্বেগ আছে ভালো কলেজে ভর্তি নিয়ে। ভালো কলেজের সংখ্যা না বাড়ায় একরকম শঙ্কা নিয়েই তাদের ভর্তি যুদ্ধে অংশ নিতে হচ্ছে।

পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর দিন গতকাল বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ ১০টি কলেজের জন্য অনলাইনে ও মোবাইল এসএমএসে আবেদনের সুযোগ রেখে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির নীতিমালা প্রকাশ করেছে, যাতে মাধ্যমিকের ফলের ভিত্তিতে ভর্তির নিয়ম অব্যাহত রাখা হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী, দেশের সরকারি-বেসরকারি কলেজগুলোতে ২৬ মে থেকে একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম শুরু এবং ১০ জুলাই ক্লাস শুরু হবে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, মাধ্যমিকে এবারের উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সাথে ২০১৪ ও ২০১৫ সালের উত্তীর্ণরাও একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারবেন। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলকভাবে অনলাইনে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে হবে। টেলিটক মোবাইল থেকে এসএমএস করেও আবেদন করা যাবে।

২৬ মে থেকে ৯ জুন পর্যন্ত অনলাইন ও টেলিটক মোবাইল থেকে এসএমএস করে আবেদন করা যাবে। যারা ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করেছেন তাদেরকেও এই সময়ের মধ্যে আবেদন করতে হবে। ১৬ জুন একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য মনোনীত শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। বিলম্ব ফি ছাড়া ১৮ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ভর্তি হওয়া যাবে।

আর বিলম্ব ফি দিয়ে ১০ থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত ভর্তি হতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। একাদশের ক্লাস শুরু হবে ১০ জুলাই। কলেজগুলোকে সংশ্লিষ্ট বোর্ডে ৭ থেকে ১৮ আগস্টের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন ফি এবং ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট বোর্ডে জমা দিতে হবে ২২ আগস্ট থেকে ৩১ আগস্টের মধ্যে।

অনলাইনে ১৫০ টাকা ফি জমা দিয়ে সর্বোচ্চ ১০টি কলেজে আবেদন করা যাবে। গত বছর অনলাইনে একাধিকবার আবেদনের সুযোগ থাকলেও এবার একবারই আবেদন করা যাবে। তবে এসএমএসের মাধ্যমে আবেদন করতে প্রতি কলেজের জন্য ১২০ টাকা ফি দিতে হবে শিক্ষার্থীদের।

অনলাইনে কীভাবে আবেদন করা যাবে সে বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড নির্দেশনা জারি করবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো কলেজ চাইলে তাদের প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তিতে ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণ করতে পারবে। স্কুল ও কলেজ সংযুক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিজ প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাবে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, বিভাগীয় সদরের কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কলেজের ৮৯ শতাংশ আসন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। অবশিষ্ট ১১ শতাংশ আসনের মধ্যে ৩ শতাংশ সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় সদরের বাইরের এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য, ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা এবং ২ শতাংশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এর অধীনস্ত দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী এবং স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের সন্তানদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে।

এছাড়া এবার থেকে প্রবাসীদের সন্তান এবং বিকেএসপির শিক্ষার্থীদের জন্য শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ করে কোটা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিজ্ঞান শাখা থেকে উত্তীর্ণরা যে কোনো বিভাগে ভর্তি হতে পারবে। মানবিক শাখা থেকে উত্তীর্ণরা মানবিকের পাশাপাশি ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ভর্তি হতে পারবে। ব্যবসায় শিক্ষায় শিক্ষার্থীরা ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগে ভর্তি হতে পারবে।

জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সর্বমোট প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মেধাক্রম নির্ধারণ করা হবে। বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির ক্ষেত্রে সমান জিপিএ প্রাপ্তদের মেধাক্রম সাধারণ গণিত, উচ্চতর গণিত অথবা জীববিজ্ঞানে প্রাপ্ত জিপিএ বিবেচনায় আনা হবে। আর মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে সমান জিপিএ প্রাপ্তদের ভর্তির ক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে ইংরেজি, গণিত ও বাংলায় অর্জিত গ্রেড পয়েন্ট বিবেচনা করা হবে।

এক বিভাগের প্রার্থী অন্য বিভাগে ভর্তির ক্ষেত্রে মোট গ্রেড পয়েন্ট একই হলে পর্যায়ক্রমে ইংরেজি, গণিত ও বাংলা বিষয়ে অর্জিত পয়েন্ট বিবেচনায় আনতে হবে। বিদেশের প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের কোনো কলেজে ভর্তি হতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে সনদের মান নির্ধারণ করে নিতে হবে।

ভর্তি ফি: মফস্বল/পৌর (উপজেলা) এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেশনচার্জসহ সর্বসাকুল্যে এক হাজার টাকা, পৌর (জেলা সদর) এলাকায় দুই হাজার টাকা এবং ঢাকা ছাড়া অন্য মেট্রোপলিটন এলাকায় তিন হাজার টাকার বেশি ফি নেয়া যাবে না। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থী ভর্তিতে পাঁচ হাজার টাকার বেশি নিতে পারবে না।

ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় আংশিক এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উন্নয়ন ও এমপিও বহির্ভূত শিক্ষকদের বেতনভাতা দেয়ার জন্য ভর্তির সময় মাসিক বেতন, সেশন চার্জ ও উন্নয়ন ফি বাবদ বাংলা মাধ্যমে নয় হাজার টাকা এবং ইংরেজি মাধ্যমে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। নীতিমালা অনুযায়ী, উন্নয়ন খাতে কোনো প্রতিষ্ঠান তিন হাজার টাকার বেশি নিতে পারবে না। দরিদ্র মেধাবী ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ভর্তিতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ফি যতোদূর সম্ভব মওকুফ করতে বলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কোনো শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অনুমোদিত ফির বেশি নেয়া যাবে না উল্লেখ করে নীতিমালায় বলা হয়েছে, অতিরিক্ত ফি নিলে পাঠদানের অনুমতি, অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি বাতিলসহ এমপিও বাতিল করে ওই প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ভালো কলেজ সংকট: ভালো ফলাফলের পরও একাদশ শ্রেণিতে ভালো কলেজে ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। তবে শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, ভর্তি নিয়ে আসন সঙ্কট হবে না। ভর্তির জন্য আমাদের প্রচুর আসন আছে। ভর্তি হতে চাইলে একজন শিক্ষার্থীও সুযোগবঞ্চিত থাকবে না। তবে বড় কলেজে ভর্তির সংকট ছিল, থাকবে।

প্রসঙ্গত, চলতি বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট জিপিএ-৫ ধারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৯ হাজার ৭৬১ জন। জিপিএ-৫-এর চেয়ে কম কিন্তু জিপিএ-৪ কিংবা তার চেয়ে বেশি পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ লাখ ৯ হাজার ৯৫১ জন। মূলত এই দুই ক্যাটাগরির শিক্ষার্থীর লক্ষ্য থাকে নামকরা বা ভালো কোনো কলেজে ভর্তি হওয়া; কিন্তু রাজধানী ও বিভাগীয় শহরগুলোসহ সারাদেশে জেলা পর্যায়ে ভালো কলেজের সংখ্যা তুলনামূলক কম। তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৩ হাজার ৭৫৭টি। যার মধ্যে মানসম্মত কলেজের সংখ্যা দুই শতাধিক। এসব কলেজে আসন সংখ্যা ৬০-৭০ হাজারের মতো। তাই এসব কলেজে ভর্তির সুযোগ না পেলেও আসন সংকটের কারণে বঞ্চিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।