একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু ৯ মে : প্রথম মনোনীতদের তালিকা ৫ জুন ভর্তি শুরু ২০ জুন

সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলক অনলাইনে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার: মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে চলতি শিক্ষাবর্ষের একাদশ শ্রেণির ভর্তির জন্য আবেদন প্রক্রিয়া। অনলাইন ও এসএমএসের মাধ্যমে আবেদন করা যাবে ২৬ মে পর্যন্ত। ভর্তি শুরু ২০ জুন থেকে। শিক্ষামন্ত্রণালয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ গতকাল ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির নীতিমালা প্রকাশ করে। নীতিমালায় বলা হয়েছে, ভর্তির জন্য কোনো পরীক্ষা নেয়া হবে না। এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে তিন ধাপে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের মেধা তালিকা প্রকাশ করা হবে। প্রথম নির্বাচিত তালিকা প্রকাশ হবে ৫ই জুন। এছাড়া দ্বিতীয় পর্যায়ের ফল ১৩ জুন ও তৃতীয় পর্যায়ের ফল ১৮ জুন প্রকাশ করা হবে। ক্লাস শুরু হবে ১ জুলাই থেকে। নতুন নীতিমালায় ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার এমপিওভুক্ত কলেজগুলো সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা নিতে পারবে। আর নন-এমপিও কলেজ নিতে পারবে নয় হাজার টাকা। তবে ইংরেজি মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা নিতে পারবে। ঢাকার বাইরে উপজেলা ও মফস্বল এলাকায় ভর্তি ফি এক হাজার, জেলা শহরের পৌর এলাকায় দুই হাজার ও অন্যান্য মেট্রোপলিটন এলাকায় ৩ হাজার টাকার বেশি নেয়া যাবে না।

বিগত কয়েক বছরের মতো এবারো নীতিমালায় বলা হয়েছে, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলকভাবে অনলাইনে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে হবে। অনলাইনের (www.xiclassadmission.gov.bd) পাশাপাশি টেলিটক মোবাইল থেকে এসএমএস করেও একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন করা যাবে। অনলাইনে ১৫০ টাকা ফি জমা দিয়ে সর্বনিম্ন ৫টি এবং সর্বোচ্চ ১০ কলেজে পছন্দক্রমের ভিত্তিতে আবেদন করা যাবে। অনলাইনে কিভাবে আবেদন করা যাবে সে বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড নির্দেশনা জারি করবে। আর এসএমএসের মাধ্যমে আবেদন করতে প্রতি কলেজের জন্য ১২০ টাকা ফি দিয়ে সর্বোচ্চ ১০ কলেজে আবেদন করা যাবে। একজন শিক্ষার্থী যত কলেজে আবেদন করবে তার মধ্য থেকে শিক্ষার্থীর মেধা ও পছন্দক্রমের ভিত্তিতে একটি মাত্র কলেজে তার অবস্থান নির্ধারণ করা হবে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, যারা ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করেছে, তাদেরও এই সময়ের মধ্যে আবেদন করতে হবে। ২৭ থেকে ২৯ মে শিক্ষার্থীদের আবেদন যাচাই-বাছাই ও আপত্তি নিষ্পত্তি করা হবে। পুনঃনিরীক্ষণে যাদের ফল পরিবর্তন হবে তারা ৩০ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত আবেদন করতে পারবে। ৫ জুন প্রথম পর্যায়ে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ করা হবে। প্রথম তালিকায় থাকা শিক্ষার্থীদের ৬ থেকে ৮ জুন সিলেকশন নিশ্চিত (যে কলেজের তালিকায় নাম আসবে ওই কলেজেই যে শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন, তা এসএমএসে নিশ্চিত করা করতে হবে। এরপর মাইগ্রেশনের আবেদন (অপশন প্রদান) এবং নতুন আবেদন করা যাবে ৯ থেকে ১০ জুন পর্যন্ত। ১৩ মে দ্বিতীয় পর্যায়ে এবং ১৮ই মে তৃতীয় পর্যায়ের ভর্তি ফল প্রকাশ করা হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ের তালিকায় থাকা শিক্ষার্থীরা ১৪ থেকে ১৫ জুন সিলেকশন নিশ্চিত করবে এবং মাইগ্রেশন আবেদন (অপশন প্রদান) ও নতুন আবেদন করতে হবে ১৬ থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত। তৃতীয় পর্যায়ে তালিকায় থাকা শিক্ষার্থীদের ১৯ জুন সিলেকশন নিশ্চিত করবে। ২০ থেকে ২২ জুন এবং ২৮ থেকে ২৯ জুন দুই দফায় শিক্ষার্থী ভর্তি শেষে আগামী ১ জুলাই ক্লাস শুরু হবে।

ভর্তির নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, এ বছর উত্তীর্ণরা ছাড়াও ২০১৫ ও ২০১৬ সালে মাধ্যমিক পাস করা শিক্ষার্থীরা একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন করতে পারবেন। বিভাগীয় সদরের কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কলেজের ৮৯ শতাংশ আসন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। অবশিষ্ট ১১ শতাংশ আসনের মধ্যে ৩ শতাংশ সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় সদরের বাইরের এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য, ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা এবং ২ শতাংশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এর অধীনস্থ দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী এবং স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্দের সদস্যদের সন্তানদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। এছাড়া এবার থেকে প্রবাসীদের সন্তান এবং বিকেএসপির শিক্ষার্থীদের জন্য শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ কোটা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

বাছাই হবে যেভাবে: বিজ্ঞান শাখা থেকে উত্তীর্ণরা যেকোনো বিভাগে ভর্তি হতে পারবে। মানবিক শাখা থেকে উত্তীর্ণরা মানবিকের পাশাপাশি ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ভর্তি হতে পারবে। ব্যবসায় শিক্ষার শিক্ষার্থীরা ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগে ভর্তি হতে পারবে। জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সর্বমোট প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মেধাক্রম নির্ধারণ করা হবে। বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির ক্ষেত্রে সমান জিপিএ প্রাপ্তদের মেধাক্রম সাধারণ গণিত, উচ্চতর গণিত অথবা জীববিজ্ঞানে প্রাপ্ত জিপিএ বিবেচনায় আনা হবে। আর মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে সমান জিপিএ প্রাপ্তদের ভর্তির ক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে ইংরেজি, গণিত ও বাংলায় অর্জিত গ্রেড পয়েন্ট বিবেচনা করা হবে। এক বিভাগের প্রার্থী অন্য বিভাগে ভর্তির ক্ষেত্রে মোট গ্রেড পয়েন্ট একই হলে পর্যায়ক্রমে ইংরেজি, গণিত ও বাংলা বিষয়ে অর্জিত পয়েন্ট বিবেচনায় নেয়া হবে। যেকোনো কলেজ কর্তৃপক্ষ তার ভর্তির ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণ করতে পারবে এবং তা ওয়েবসাইট বা নোটিশ বোর্ডে টানিয়ে দিতে হবে।

ভর্তি ফি: মফস্বল/পৌর (উপজেলা) এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেশনচার্জসহ সর্বসাকুল্যে এক হাজার টাকা, পৌর (জেলা সদর) এলাকায় ২ হাজার টাকা এবং ঢাকা ছাড়া অন্য মেট্রোপলিটন এলাকায় ৩ হাজার টাকার বেশি ফি নেয়া যাবে না। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থী ভর্তিতে ৫ হাজার টাকার বেশি নিতে পারবে না। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় আংশিক এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও এমপিওবর্হিভূত শিক্ষকদের বেতনভাতা দেয়ার জন্য ভর্তির সময় মাসিক বেতন, সেশনচার্জ ও উন্নয়ন ফি বাবদ বাংলা মাধ্যমে ৩ হাজার টাকা এবং ইংরেজি মাধ্যমে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। নীতিমালা অনুযায়ী, উন্নয়ন খাতে কোনো প্রতিষ্ঠান ৩ হাজার টাকার বেশি নিতে পারবে না। দরিদ্র, মেধাবী ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ভর্তিতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ফি যতদূর সম্ভব মওকুফ করতে বলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কোনো শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অনুমোদিত ফির বেশি নেয়া যাবে না উল্লেখ করে নীতিমালায় বলা হয়েছে, অতিরিক্ত ফি নিলে পাঠদানের অনুমতি, একাডেমিক স্বীকৃতি বাতিলসহ এমপিও বাতিল করে ওই প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।