ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন আজ

আলম আশরাফ: কবির ভাষায়, ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত। আজ শনিবার ঋতুরাজ ফাগুনের প্রথম দিন। ফুল ফোটার পুলকিত এই দিনে বন-বনান্তে, কাননে কাননে পারি-জাতের রঙের কোলাহলে ভরে উঠবে চারদিক। প্রকৃতি জানান দিলো, বসন্ত জাগ্রত দ্বারে। কি মনে, কি বনে শিহরণ সর্বত্র। এসেছে ফুলের সৌরভে রঙিন হওয়ার দিন। ফাগুনের আবাহনে শীতের শুষ্ক দিন শেষ হয়ে এসেছে। প্রাণ ফিরে পাচ্ছে বিবর্ণ প্রকৃতি, জেগে উঠছে রূপ-লাবণ্যে। বিপুল ঐশ্বর্যের অধিকারী ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করে নেয়ার দিন। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, আজি দখিন-দুয়ার খোলা/এসো হে, এসো হে, এসো হে আমার বসন্ত এসো…। বসন্ত জাগিয়ে তোলে ভালোবাসার বোধ, দেয় মিলনের বার্তা। এমন লগ্নে প্রিয়জনের কাছে দেহ মন সঁপে দিতে ইচ্ছা জাগে। কালজয়ী কণ্ঠশিল্পী আব্বাস উদ্দীনের আবেগী কণ্ঠের ভাষায়, সুখ বসন্ত দিলো রে দেখা, আর তো যৈবন যায় না রাখা গো। বসন্ত বাতাস ভাটি বাংলার বাউল আবদুল করিমকেও জাগিয়ে তোলে। উতলা বাউল তাই গেয়ে ওঠেন, বসন্ত বাতাসে সই গো/বসন্ত বাতাসে/বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে। ভাবে বসন্ত এলে মন আনচান করে। পুরনো বেদনা, হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি ভালোবেসে আবার তার পেছনে ছুটতে ইচ্ছা করে। শিল্পী খালিদ হাসান মিলুর আবেগপ্রফুল্ল কণ্ঠে গেয়ে ওঠে- জীবনে বসন্ত এসেছে, ফুলে ফুলে ভরে গেছে মৌ ও বান্ধবী অনামিকা আজ তোমাকে প্রয়োজন।
প্রকৃতির চিরাচরিত স্বভাব অনুযায়ী বন-বনান্তে কাননে কাননে পারিজাতের রঙের কোলাহলে ভরে উঠেছে চারদিক। কচিপাতায় আলোর নাচনের মতোই বাঙালির মনেও লেগেছে রঙের দোলা। হৃদয় হয়েছে উচাটন। পাতার আড়ালে আবডালে লুকিয়ে থাকা বসন্তের দূত কোকিলের মধুর কুহুকুহু ডাক, ব্যাকুল করে তুলবে অনেক বিরহী অন্তর। কবি তাই বলেছেন ‘সে কি আমায় নেবে চিনে/এই নব ফাল্গুনের দিনে…। তবে বসন্তের সমীরণ বলছে এ ঋতু সব সময়ই বাঙালির মিলনের বার্তা বহন করে। কারণ বসন্তেই ভাষা আন্দোলনের মধ্যদিয়ে বাঙালির স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়েছিলো। বসন্তেই বাঙালি মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছিলো। বসন্তেই বাঙালি গণ-অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে তাদের প্রাণের নেতা বঙ্গবন্ধুকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্ত করেছিলেন। আবার এ বসন্তেই তরুণ প্রজন্মের আন্দোলনের মধ্যদিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায় ঘোষিত হয়। আর শহরের নাগরিক জীবনে বসন্তের আগমণবার্তা নিয়ে আসে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি…’ ও একুশের বইমেলা। এদিনেই অসংখ্য রমনী বাসন্তী রংয়ে নিজেদের রাঙিয়ে শহর-প্রাম, রাজপথ, পার্ক, বইমেলা, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বরসহ পুরো নগরী সুশোভিত করে তোলে। বসন্তের পূর্ণতার এ দোলা ছড়িয়ে পড়ুক বাংলাদেশের সর্বত্র এবং সারা পৃথিবীর সকল বাঙালির ঘরে ঘরে। কোকিলের কুহুতান, দখিনা হাওয়া, ঝরা পাতার শুকনো নুপুরের নিক্কন, প্রকৃতির মিলন, সব এ বসন্তেই। তাই বসন্ত মানে পূর্ণতা। বসন্ত মানে নতুন প্রাণের কলরব। বসন্ত মানে একে অপরের হাত ধরে হাঁটা। মিলনের ঋতু বসন্তই মনকে সাজায় বাসন্তী রঙে, মানুষকে করে আনমনা।
বসন্তের এ সময়ে শীতের জীর্ণতা সরিয়ে ফুলে ফুলে সেজে ওঠে প্রকৃতি। গাছে গাছে নতুন পাতা, স্নিগ্ধ সবুজ কচি পাতার ধীরগতিতে বাতাসের সাথে বয়ে চলা জানান দেয় নতুন কিছুর। শীতে খোলসে ঢুকে থাকা বন-বনানী অলৌকিক স্পর্শে জেগে ওঠে। পলাশ, শিমুল গাছে লাগে আগুন রঙের খেলা। প্রকৃতিতে চলে মধুর বসন্তে সাজসাজ রব। আর এ সাজে মন রাঙিয়ে গুন গুন করে অনেকেই গেয়ে উঠবেন ‘মনেতে ফাগুন এলো…’। বসন্ত তারুণ্যের ঋতু বলেই সবার মনে বেজে ওঠে, কবির ওই বাণী ‘বসন্ত ছুঁয়েছে আমাকে। ঘুমন্ত মন তাই জেগেছে, পহেলা ফাল্গুন আনন্দের দিনে’। ১৮ বছর আগে বঙ্গাব্দ ১৪০১ সাল থেকে প্রথম ‘বসন্ত উৎসব’ উদযাপন করার রীতি চালু হয়। সেই থেকে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ বসন্ত উৎসব আয়োজন করে আসছে। বসন্তের নাচ, গান ও কবিতার পাশাপাশি ফুলের প্রীতি বন্ধনী ও বসন্ত কথনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্নস্থানে বসন্ত বরণের অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়ে থাকে। চুয়াডাঙ্গাতে বসন্তবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ছে।