উপকূলীয় ইউপি নির্বাচনের তফসিল মধ্য ফেব্রুয়ারিতে

স্টাফ রিপোর্টার: ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের বিধিমালা প্রস্তুত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ নির্বাচনী আচরণবিধি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠকে বসছে তারা। এদিকে ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে উপকূলীয় এলাকার প্রায় ৭০০ ইউনিয়ন পরিষদে ভোটের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। প্রথমবারের মতো ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে দলীয়ভাবে ভোট হবে এবার। রোববার এ লক্ষ্যে প্রাক-প্রস্তুতি সমন্বয়সভা করেছেন ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা। দলীয়ভাবে ইউপি ভোট করতে নির্বাচন বিধিমালা সংশোধন অনুমোদনের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আজ মঙ্গলবার আচরণবিধি চূড়ান্ত করে পাঠানো হতে পারে। নির্বাচন বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশের পরই তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন আয়োজক সংস্থাটি। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে শর্ত বাদ দিয়ে ইউপি নির্বাচন বিধিমালা সংশোধন করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘মার্চের শেষে তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি চলছে। এ ক্ষেত্রে মধ্য ফেব্রুয়ারিতে তফসিল দিতে হবে আমাদের। বিধিমালা চূড়ান্ত হয়ে গেলে তফসিলের আগে তা গেজেট আকারে জারি করা হবে।’ দলভিত্তিক নির্বাচনে প্রথমবারের মতো স্বতন্ত্র প্রার্থিতায় ইউপির চেয়ারম্যান পদে ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষর রাখা হচ্ছে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি। ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, প্রথম পর্বে ২৮ মার্চের আগে উপকূলীয় উপজেলাগুলোর নির্বাচন-উপযোগী ইউপির নির্বাচন করতেই হবে। এজন্য ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে তফসিল করার প্রস্তুতি রাখা হবে। ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে তফসিল করতে জরুরিভাবে প্রস্তুতিমূলক সভাও করেছে ইসি। ইসির আইন শাখার উপসচিব মহসিনুল হক বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য বিধিমালা পাঠানো হয়েছে। আচরণবিধি যাবে ১৯ জানুয়ারির পর। দুটো বিধি জারি হলেই তফসিল করবে ইসি। ইসির উপসচিব সামসুল আলম জানান, হালনাগাদ ভোটার তালিকা নিয়ে দলীয়ভাবে প্রথমবারের মতো ইউপি নির্বাচন হতে যাচ্ছে। ভোটার তালিকার সিডি প্রস্তুত, সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রণয়ন, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেল প্রস্তুত, ইউপি নির্বাচন নির্দেশিকা প্রস্তুতসহ যাবতীয় কাজের কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। পৌরসভার অভিজ্ঞতার আলোকে স্থানীয়ভাবে দলভিত্তিক ভোট আয়োজনে সংশ্লিষ্ট দুর্বলতাগুলো এ সমন্বয় সভায় আলোচনা হয়েছে। সুন্দরভাবে ভোট করতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রাখতে বলা হয়েছে। মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা ও ইসি সচিবালয়ের কাজের সমন্বয় সঠিকভাবে করার বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টিও থাকবে, যাতে গতবারের ভুলগুলোর পুনরাবৃত্তি এবার না ঘটে। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ সূত্র জানিয়েছে, হালনাগাদে যোগ হওয়া ৪৪ লাখ ভোটার এবার ইউপিতে ভোট দেবেন। বিদ্যমান ভোটারসহ সব মিলিয়ে দেশের ১০ কোটিরও বেশি নাগরিক ভোটার হবেন ৩১ জানুয়ারি। এর মধ্যে ইউপিতে অন্তর্ভুক্তরাই চেয়ারম্যান ও সদস্যপদে ভোট দিতে পারবেন। এ লক্ষ্যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকার প্রস্তুতি রাখা হবে।
উপকূলীয় এলাকার তফসিল ১০-১৫ ফেব্রুয়ারি: নির্বাচন সমন্বয় শাখার কর্মকর্তারা জানান, ২০১১ সালে প্রথম ধাপে ২৯ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল ছয় দিনে ভোট হয়। দ্বিতীয় পর্বে ৩১ মে থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত ৩৬ দিনে হয় ভোট। পরবর্তী সময়ে বাকি ইউপি নির্বাচন মেয়াদোত্তীর্ণ বিবেচনায় করা হয় ডিসেম্বরের মধ্যে বিভিন্ন সময়। প্রথম ধাপে উপকূলীয় ১২ জেলার ৭২ উপজেলার ৫৯৬ ইউপির তফসিল দেয় তৎকালীন ইসি। দ্বিতীয় ধাপে দেশের বাকি ৫৭ জেলার (পাঁচ জেলার আংশিকসহ) ৩ হাজার ৮০০ ইউপির তফসিল ঘোষণা করা হয়। এ সময় মেয়াদোত্তীর্ণ না হওয়ায় এবং সীমানা-আইনি জটিলতায় কিছু ইউপির ভোট এ সময় করা যায়নি। এবারের ইউপি নির্বাচনের তফসিল বিষয়ে ইসির একজন উপসচিব বলেন, এবার প্রথম পর্বের তফসিল ১০ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এতে উপকূলীয় এলাকার প্রায় ৭০০ ইউপির ভোট মার্চের শেষ সপ্তাহে করা হবে। কমিশন সভায় উপস্থাপনের আগে সমন্বয় সভায় এ-সংক্রান্ত তথ্য নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিধিমালা জারির পরই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে উপজেলা পর্যায়ের নির্বাচন কর্মকর্তা ও সমমর্যাদার কর্মকর্তাদের নিয়োগ করা হবে কি না এবং কোথায়, কখন, কটি ইউপির ভোট হবে তা চূড়ান্ত করে তফসিল ঘোষণা করবে ইসি। মার্চে নির্বাচন-উপযোগী হচ্ছে ৫৩৪টি ইউপি আর মে মাসে ১৫০টি। দ্বিতীয় পর্বের ভোটের আগে এসব ইউপির নির্বাচন একসঙ্গে করার প্রস্তাবও দেবে ইসি সচিবালয়।