উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় নৌকায় ভোট দেয়ার আগামআহ্বান

 

 

স্টাফ রিপোর্টার: আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নৌকায় ভোট দিয়ে আপনারা মাতৃভাষা পেয়েছেন। নৌকায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছেন। নৌকায় ভোট দিয়ে দেশের উন্নয়ন হয়েছে। কাজেই আমি আশা করি, ২০১৯ সালে যে নির্বাচন হবে, তাতেও আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন। মাগুরায় গতকাল মঙ্গলবার বিকালে মুক্তিযোদ্ধা আছাদুজ্জামান স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, মাগুরার ভোট ডাকাতির কথা দেশের মানুষ কোনোদিন ভুলবে না। যারা ভোট ডাকাতি করেছে, তাদের ভোট দেবেন না। যারা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, তাদের ভোট দেবেন না। বাংলার মাটিতে যারা গণহত্যা চালিয়েছে, মা-বোনের ইজ্জত লুটেছে, যারা হত্যা, খুন ও সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করেছে- তাদের স্থান বাংলার মাটিতে হবে না। তাদের ভোট দেবেন না। সেই (বিএনপি-জামায়াত) অপশক্তি আবার ক্ষমতায় এলে দেশ ধ্বংস হবে। বক্তব্যের শুরুতে তিনি মাগুরার সন্তান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান এবং শততম টেস্টে বাংলাদেশের জয়ে ক্রিকেটারদের অভিনন্দন জানান। শেখ হাসিনা বলেন, যেখানে আপনাদের সূর্য সন্তান এবং ক্রিকেটবিশ্বের বিস্ময় সাকিব আল হাসানের জন্ম হয়েছে, সেই মাগুরার জনগণকে প্রথমে আমি অভিনন্দন জানাই।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৪ সালের মাগুরা উপনির্বাচনে বিএনপি ভোট ডাকাতি করেছিলো। সেদিনের কথা মাগুরাবাসী ভোলেনি। সেদিন আমাকে পার্টি অফিসে থাকতে দেয়া হয়নি। সাবেক সংসদ সদস্য আছাদুজ্জামান সাহেবের বাড়িতে ছিলাম। ওই ভোট ডাকাতির প্রতিবাদে সারাদেশে আমরা তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিলাম। খালেদা জিয়া পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ শুরু করে। বিএনপির আমলে ১৮ কৃষককে গুলি করে হত্যা করা হয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে কৃষকদের উন্নয়নে কাজ করেছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ২০০১ সালে ভারত ও আমেরিকার কাছে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলো বিএনপি-জামায়াত জোট। আমেরিকা ও ভারতের র’র সহযোগিতায় সেদিন আওয়ামী লীগকে হারানো হয়েছিলো। ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিএনপি ক্ষমতায় গিয়েছিলো। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত সারা দেশে নির্যাতন চালিয়েছিলো। কৃষকের হালের গরু কেড়ে নেয়া হয়েছিলো। ক্ষেতের ফসল নষ্ট, পুকুরের মাছ লুট, ফলের গাছ কেটে দেয়া হয়েছিলো। আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মীকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিলো। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলেই দেশে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, লুটপাট, মানি লন্ডারিং হয়। মানি লন্ডারিংয়ের দায়ে খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমানের বিচার হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৩ সালে সারা দেশে মানুষ হত্যা করেছে বিএনপি-জামায়াত। ২০১৪ সালে ভোট বর্জনের নামে সারা দেশের ৫৮৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় পুড়িয়েছে। বিদ্যুত কেন্দ্র পুড়িয়েছে, পরিবহন শ্রমিকদের পুড়িয়ে হত্যা করেছে। রেল, লঞ্চ, ভূমি অফিস পুড়িয়েছে। কোরআন শরিফও রেহাই পায়নি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের দুখি মানুষের মুখে হাসি ফোটায়। আমরা বছরের প্রথম দিন ছেলেমেয়েদের হাতে নতুন বই তুলে দিচ্ছি। এক কোটির বেশি ছেলেমেয়ের জন্য মায়ের হাসি বৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। সারাদেশে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার করা হয়েছে। ছেলেমেয়ের আয়ের জন্য আউটসোর্সিং ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিএনপির আমলে মোবাইলফোন ছিলো সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের বাইরে। আওয়ামী লীগ মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে দিয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিকে গরিব মানুষ বিনামূল্যে ৩০ প্রকার ওষুধ পাচ্ছে। সারাদেশে ১ কোটি ৭৩ লাখ শিক্ষার্থী বৃত্তি পাচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধিশালী করা। মাগুরাবাসীর জন্য উপহার এনেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি খালি হাতে আসিনি। আপনাদের জন্য উপহার এনেছি। ১৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন ঘোষণা ও আরও ৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করছি। মাগুরাবাসী রেললাইন দেখতে চান। রেললাইন যাতে হয় সেই ব্যবস্থা করা হবে।

অভিভাবক, শিক্ষক, ওলামা-মাশায়েখদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের কাছে আমার একটা দাবি আছে। সেটা হলো- আপনার ছেলেমেয়ে যেন সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হয়। আপনারা ছেলেমেয়েদের সাথে কথা বলুন। তারা কী চায়। তারা যেন বিপথে না যায়। বেকারদের জন্য কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন দিচ্ছে। সেখান থেকে লোন নিয়ে তারা স্বাবলম্বী হতে পারবে। একটি বাড়ি একটি খামার দারিদ্র্য বিমোচনে কাজ করছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছেলেমেয়েরা অনুপস্থিত থাকলে তাদের খোঁজখবর নিন। তারা কেন অনুপস্থিত রয়েছে। তিনি ছাত্রছাত্রীদের মনোযোগ সহকারে পড়াশোনা করতে বলেন।

শেখ হাসিনা স্বজন হারানোর স্মৃতি তুলে ধরে বলেন, বারবার আমাকে হত্যার চষ্টো করা হয়েছে। আপনাদের ভালোবাসায় বেঁচে আছি। আমি মৃত্যু ভয় পাই না। আল্লাহ ছাড়া আমি কাউকে ভয় করি না। কারও কাছে মাথানত করি না। বাবার আদর্শ বুকে নিয়ে দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে নিজেকে উৎসর্গ করেছি। প্রয়োজন হলে আপনাদের জন্য বাবার মতো বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দেব। সুখি-সমৃদ্ধিশালী দেশ গঠনে কাজ করে যাচ্ছি। আপনাদের দোয়া ও সহযোগিতা চাই। এর আগে বিকাল ৩টা ২০ মিনিটের দিকে জনসভা মঞ্চে হাজির হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ১৯টি উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন ও ৯টি উন্নয়ন কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তানজেল হোসেন খান জনসভায় সভাপতিত্ব করেন। জনসভায় আরও বক্তব্য দেন- শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাড. পিযুষ কান্তি ভট্টাচার্য, যুগ্ম সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ, আবদুর রহমান, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী অ্যাড. বীরেন শিকদার, বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল ওয়াহাব, দলের সদস্য এসএম কামাল হোসেন ও পারভীন জামান কল্পনা, আওয়ামী মহিলা লীগের সভাপতি শাফিয়া খাতুন, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার, সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি নির্মল চ্যাটার্জি, যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা আনোয়ার হোসেন, ছাত্রলীগের সভাপতি এসএম জাকির হোসেন, মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুন্সী রেজাউল হক, রুস্তম আলী, গোলাম মাওলা, অ্যাড. শরিফুল ইসলাম, সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আবু নাসের বাবলু প্রমুখ। এছাড়া যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদকসহ বিভিন্ন স্তরের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।