উচ্চ মাধ্যমিকের মেধা হোঁচট খায় ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায়

 

স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ব্যাপক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হওয়ার পর প্রাইমারি, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ পরীক্ষায় চারটি ইউনিটের কোনোটিতেই ১৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি। শিক্ষাবিদরা বলছেন, উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো ফলাফল করলেও বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রী উচ্চ শিক্ষার জন্য যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। এজন্য আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা কিছুটা হলেও দায়ী। অবশ্য কোনো কোনো শিক্ষাবিদ বলেছেন, ভর্তি পরীক্ষা একজন শিক্ষার্থীর যোগ্যতার মাপকাঠি নয়। ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করা হয় শিক্ষার্থীদের বাদ দেয়ার জন্য। সেটিই বছর বছর ধরে চলে আসছে। কিন্তু এবার ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে এক বিপর্যয়কর অবস্থা তৈরি হয়েছে।

ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক বেগম আখতার কামাল চমকপ্রদ তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, এবারের পরীক্ষায় মফস্বলের ছাত্রছাত্রীরা কিছুটা ভালো করলেও রাজধানীর নামিদামি কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা খুব খারাপ ফল করেছে। অনেকে বাংলা এবং ইংরেজি বিষয়ে ২৫ এর মধ্যে পাস মার্ক আটও পায়নি। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের সাধারণ জ্ঞানেরও অভাব রয়েছে। ক্লাসে মন না দিয়ে অনেকে প্রাইভেট ও নোট পড়ার দিকে ঝুঁকেছে। বেগম আখতার কামাল আরো বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তনের সময়ও আমাদেরকে খেয়াল রাখতে হবে যাতে হুট করে কিছু করা না হয়। এজন্য সময় দিতে হবে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক, খ, গ, ঘ – এ চারটি ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এবার ক ইউনিটে ১ হাজার ৭৪৫টি আসন সংখ্যার বিপরীতে অংশগ্রহণকারী ভর্তিচ্ছুর সংখ্যা ছিলো ৮৩ হাজার ৫৮২ জন। এর মধ্যে পাস করেছে মাত্র ১১ হাজার ৩৩০ জন। পাসের হার ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ। অপরদিকে খ ইউনিটে অংশগ্রহণকারী ভর্তিচ্ছুর সংখ্যা ৩৩ হাজার ২৫৫ জন। পাসের সংখ্যা ৩ হাজার ৮০০ জন। পাসের হার ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এ ইউনিটে আসন সংখ্যা ২ হাজার ৩৩৩ জন। গ ইউনিটে অংশগ্রহণকারী ভর্তিচ্ছুর সংখ্যা ৪২ হাজার ১২৪ জন। পাসের সংখ্যা মাত্র ২ হাজার ২২১ জন। পাসের হার ৫ দশমিক ৫২ শতাংশ। এ ইউনিটে আসন সংখ্যা ১২৫০টি। আর ঘ ইউনিটে অংশগ্রহণকারী ভর্তিচ্ছুর সংখ্যা ৮৩ হাজার ৫৮২ জন। পাসের সংখ্যা ১১ হাজার ৩৩০ জন। সম্মিলিত পাসের হার ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ (বিজ্ঞানে ৯ দশমিক ২৯, মানবিকে ১৯ দশমিক ৩৪, ব্যবসা প্রশাসনে ৬ দশমিক ০৫ শতাংশ)। এ ইউনিটে আসন সংখ্যা ১ হাজার ৫৪০টি।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর মফিজুর রহমান বলেন, শিক্ষার বিষয়টি একটি সমন্বিত বিষয়। এটি আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি। উচ্চশিক্ষার আলোকে প্রাইমারি এবং মাধ্যমিক শিক্ষার দিকে আমাদের নজর দিতে হবে। গত এক দশক ধরে এ কথাগুলো উচ্চারিত হয়ে আসছে। তিনি বলেন, উচ্চশিক্ষার জন্য একজন শিক্ষার্থীর যেভাবে প্রস্তুতি নেয়ার কথা সেভাবে হচ্ছে না। যে কারণে শিক্ষার্থীরা তাল মেলাতে পারছে না। প্রশ্নপত্রের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রশ্নপত্র সহজ কিংবা কঠিন সে আলোচনায় না গিয়ে বলা যায় ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র উচ্চশিক্ষার মানের আলোকে তৈরি করা হয়।

তবে দুজন শিক্ষাবিদ কোনোভাবেই শিক্ষার্থীদের মানের অবনতি হয়েছে এমন বিষয়টি স্বীকার করতে রাজি নন। তারা বলেন, পাস-ফেল এ মানদণ্ড দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিচার করা ঠিক নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ভর্তি পরীক্ষার পাস-ফেল দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থার মান নির্ণয় করা যাবে না। সবাই ভর্তি পরীক্ষায় পাস করলেও সবাইকে ভর্তির সুযোগ দেয়া যায় না। কেননা বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন সংখ্যা নির্ধারিত থাকে। বরং ভর্তি পরীক্ষায় পাস করে ভর্তির সুযোগ না পেলে শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সাঈদ ফেরদৌস বলেন, ভর্তি পরীক্ষা অন্য যেকোনো পরীক্ষা থেকে আলাদা। এই পরীক্ষার উদ্দেশ্যই থাকে শিক্ষার্থীদের বাদ দেয়া। অমানবিক হলেও এটি সত্যি কথা। ভর্তি পরীক্ষায় পাস-ফেলের সংখ্যা দিয়ে শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না।