উচ্চশিক্ষায় নৈরাজ্য বন্ধে অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল

 

স্টাফ রিপোর্টার: সরকারি ও বেসরকারি সব ধরনের মেডিকেল, প্রকৌশলী, কৃষি, ব্যবসায় ও আইনসহ সব ধরনের উচ্চশিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতে অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল হচ্ছে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বীকৃতি নিতে হবে এই কাউন্সিল থেকে। উচ্চশিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করা এবং শিক্ষা কার্যক্রম যাচাই করে স্বীকৃতি দেয়া হবে কাউন্সিলের মূল দায়িত্ব। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিটি বিভাগ, কোর্স বা প্রোগ্রাম (ডিসিপ্লিন) যাচাই করবে কাউন্সিল। ইতিমধ্যে অ্যাক্রডিটেশন কাউন্সিল আইন অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ। দেশে ৩৭টি পাবলিক ও ৯৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এরমধ্যে সিংহভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ন্যূনতম শর্ত না মেনেই সার্টিফিকেট বাণিজ্যের অভিযোগও রয়েছে অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। এছাড়া প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও বিশ্বমানের শিক্ষা দিতে পারছে না। বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় তো দূরের কথা এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায়ও বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। এই পরিস্থিতিতে উচ্চশিক্ষার নৈরাজ্য বন্ধ এবং মান নিশ্চিতে অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল করছে সরকার। আইন অনুযায়ী গঠিত অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এক বছরের জন্য ‘কনফিডেন্স’ সনদ দেবে। এই সনদ নিয়ে ‘অ্যাক্রিডিটেশন’ সনদের জন্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো কাউন্সিলের কাছে আবেদন করবে। অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর আবেদন যাচাই-বাছাই করে পাঁচ বছরের জন্য অ্যাক্রিডিটেশন সনদ দেবে। কনফিডেন্স বা অ্যাক্রিডিটেশন সনদ ছাড়া কোনো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞপ্তি বা প্রসপেক্টাসে প্রতিষ্ঠানটি ‘অ্যাক্রিডিটেশনপ্রাপ্ত’ লিখতে পারবে না। অ্যাক্রিডিটেশন সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে সবার দেখার জন্য ওই সনদ অনলাইনে উন্মুক্ত রাখতে হবে। এই কাউন্সিল যৌক্তিক কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা এর অধীন কোনো ডিগ্রি প্রোগ্রামের অ্যাক্রিডিটেশন ও কনফিডেন্স সনদ বাতিল করতে পারবে। কাউন্সিল কাজের জন্য সরকারের কাছে জবাবদিহি করবে।

এতে বলা হয়েছে, অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল উচ্চশিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত, একাডেমিক প্রোগ্রাম ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভিস্বীকৃতি এবং এই আইনের আলোকে প্রয়োজনীয় বিধি ও প্রবিধিমালা প্রস্তুত করবে। মেডিকেল, প্রকৌশলী, কৃষি, ব্যবসায়, আইনসহ প্রত্যেক ডিসিপ্লিনের জন্য আলাদা অ্যাক্রিডিটেশন কমিটি গঠন করবে। এই কমিটির গঠন ও কার্যাবলি বিধি দ্বারা পরিচালিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের মধ্য থেকে অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিলে চার বছর মেয়াদে একজনকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি। আর স্বীকৃত যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পদমর্যাদার তিনজন শিক্ষক এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার নিচে নয় এমন একজনকে কাউন্সিলের পূর্ণকালীন সদস্য নিয়োগ দেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের একজন পূর্ণকালীন সদস্য এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাসোসিয়েশন মনোনীত একজন প্রতিনিধি কাউন্সিলের অবৈতনিক সদস্য নিযুক্ত হবেন। এছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাসোসিয়েশন মনোনীত একজন, বাংলাদেশের বাইরের স্বীকৃত ‘কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স ও অ্যাক্রিডিটেশন সংস্থার’ একজন বিশেষজ্ঞ এবং ‘পেশাগত’ সংস্থার একজন প্রতিনিধিকেও এই কাউন্সিলের সদস্য করা হবে। প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, পূর্ণকালীন ও অবৈতনিক সদস্যদের মেয়াদ হবে চার বছর। চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলের সদস্যরা দুই বারের অধিক নিয়োগ পাবেন না। আইন অনুযায়ী, অ্যাক্রিডিটেশন সনদপ্রাপ্ত কোনো প্রতিষ্ঠান অ্যাক্রিডিটেশন সনদের শর্ত লঙ্ঘন করলে এই সনদ প্রত্যাহার করতে পারবে কাউন্সিল। এছাড়া অ্যাক্রিডিটেশন সনদপ্রাপ্ত কোনো প্রতিষ্ঠান দোষী প্রমাণিত হলে প্রস্তাবিত আইনে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, দেশের উচ্চশিক্ষা বিশ্বমানের করতে অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই কাউন্সিল আইনের মাধ্যমে নিরপেক্ষ, বিদ্বান ও পণ্ডিত ব্যক্তিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করবে। তারা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার মান যাচাই, তদারক ও উন্নয়নে কাজ করবেন। তিনি বলেন, প্রথমে আমরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে এ ধরনের কাউন্সিলের ধারণা নিয়ে এসেছিলাম। পরে চিন্তা বদলেছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এর আওতায় আসবে। এতে বোঝা যাবে, কোন বিশ্ববিদ্যালয় ভালো, কোনটা কোন বিষয়ে ভালো।