ঈদের পর ২০ দলের আন্দোলন :ক্ষমতাসীন দলেরও পাল্টা প্রস্তুতি

 

 

স্টাফ রিপোর্টার: ঈদেরপর বিরোধীদল বিএনপির আন্দোলন মোকাবেলায় ছক কষছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীনমহল ইতোমধ্যে সহিংসতা দমনের নামে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটকে মোকাবেলায়প্রশাসনিক পদক্ষেপের বিষয়ে পরিকল্পনা প্রায় চূড়ান্ত করেছে। এই পরিকল্পনারঅংশ হিসেবে সরকারের তরফ থেকে বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত পুরনোমামলা সক্রিয় করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিএনপিকে বিভ্রান্ত করতেসরকার ভিন্ন উপায়ও গ্রহণ করতে পারে।

আর রাজপথে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেরসাংগঠনিক পদক্ষেপ কী হবে- তা শরিকদের মতামত নিয়ে চূড়ান্ত করা হবে। সরকারিদলের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির কর্মসূচি ঠেকাতেরাজপথে সক্রিয় থাকবে দলীয় নেতাকর্মীরা। পাশাপাশি বিএনপির আন্দোলন প্রতিহতকরতে তারা ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের দু অংশের নির্বাচনের বিষয়টিও মাথায়রেখেছেন। পরিস্থিতি বুঝে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে বিএনপিকে আন্দোলনেবিভ্রান্ত করার চেষ্টা হতে পারে। আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতিনির্ধারকদেরসঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনেরদাবিতে ঈদের পর আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদাজিয়া। এতে আবারও রাজপথ উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। গতবুধবার ঢাকামহানগর বিএনপির ইফতার মাহফিলে দলটির চেয়ারপারসন বলেন, আর চুপ করে বসে থাকাযায় না। আন্দোলনে কোনো ধরনের বাধা দেয়ার চেষ্টা করা হলে পাল্টা আঘাত করাহবে। জানা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে বাধা এলে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিঘোষণা করা হতে পারে। তবে বিএনপির লক্ষ্য শুরুতে অর্থাৎ এখনই আক্রমণে নাযাওয়া।ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, আজ সকালেতারা তাদের রাজনৈতিক মিত্র ১৪ দলের শরিক সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গেগুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করবেন। এ বৈঠকে ঈদের পর বিএনপির আন্দোলনের হুমকির বিষয়েআলোচনা করা হবে। এ সময় বিএনপির আন্দোলন মোকাবেলায় শরিক সংগঠনগুলোর মতামতজানতে চাওয়া হবে। পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ নিজ দলীয় ফোরামে আলোচনা করেচূড়ান্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেবে।
নেতাদের মতে, বিরোধী দলকে মোকাবেলায়রাজপথে তাদের সাংগঠনিক কর্মসূচি থাকবে। পাশাপাশি ঢাকায় যাতে কোনোভাবেআন্দোলন দানা বাঁধতে না পারে- সেজন্য বিভক্ত ডিসিসির দুই অংশের নির্বাচনঅনুষ্ঠানের বিষয়টিও নতুন করে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এ কারণে ডিসিসিতেরাজনৈতিক প্রশাসক নিয়োগের উদ্যোগ থেকে সরে এসেছে সরকার। ডিসিসির নির্বাচনেরহুজুগ তুলে আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করতে এ কৌশল নেয়া হতে পারে।
বিএনপিরআন্দোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউলআলম হানিফ এমপি যুগান্তরকে বলেন, যে কোনো গণতান্ত্রিক এবং শান্তিপূর্ণকর্মসূচিতে তাদের বাধা নেই। তবে যদি কর্মসূচির নামে জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুরকরা হয় তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা দমন করবে। তিনি বলেন, এরাআন্দোলন করে ক্ষমতায় যেতে চায়। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ আর তাদের ক্ষমতায়দেখতে চায় না। তাই বিএনপির কর্মসূচি সফল হবে না।
ঈদের পর বিএনপিরআন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণার বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওস্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আন্দোলনের নামে গাড়ি পোড়ালে তারারামকৃষ্ণ মিশনে বসে থাকবেন না। ঈদের পরও তাদের উন্নয়ন কাজ চলবে। নাসিম আরওবলেন, তারা বিরোধী দলে থাকতে আন্দোলন করেছেন। তখন সরকার পড়েনি। নির্বাচিতসরকারের বিরুদ্ধে যত আন্দোলনই হোক, লাভ নেই। তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিতহয়ে ক্ষমতায় এসেছেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে সরকারের প্রভাবশালীমন্ত্রী ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেটকামরুল ইসলাম বলেন, আন্দোলনের নামে জনদুর্ভোগ ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করলেবিএনপির অবস্থা খারাপ হবে। হুশিয়ার করে দিয়ে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক পন্থায়রাজনৈতিক ও নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচিতে সরকারের বাধা দেয়ার কোনো পরিকল্পনানেই। তবে ২০১৩ সালের মতো নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে অবস্থা খারাপহবে। এবার জনগণই তাদের শায়েস্তা করবে।
সরকারের নীতিনির্ধারকরাজানিয়েছেন, নির্বাচনের আগের পরিস্থিতিতে দেশ ফিরে যাক ক্ষমতাসীনরা আরকোনওভাবেই তা চান না। তাই আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপি ও তার মিত্রদের সহিংসহয়ে উঠতে দেয়া হবে না। তারা যাতে নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে দেশকেঅস্থিতিশীল অবস্থার দিকে ঠেলে দিতে না পারে সে বিষয়টি তারা বিবেচনায়রেখেছেন।
আর তাই বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ঘোষণা আসারপরপরই সরকারের নীতিনির্ধারক মহল তৎপর হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে তারা আইনমন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, র‌্যাব, পুলিশসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোরউর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। নির্বাচনের আগেবিএনপি-জামায়াত এবং তারও আগে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেদায়েরকৃত মামলাগুলোর সর্বশেষ অবস্থার খোঁজখবর নেয়া হয়েছে।