ইয়েমেনে সৌদি বিমান হামলা শুরু

মাথাভাঙ্গা মনিটর: ইয়েমেনের সশস্ত্র শিয়া বিদ্রোহী গোষ্ঠী হৌথিদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা শুরু করেছে সৌদি আরব ও এর মিত্র দেশগুলো। উপসাগরীয় কয়েকটিসহ মোট ১০টি দেশ ইয়েমেনের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদিকে সমর্থন দিতে এ অভিযান শুরু করেছে। প্রথম দিনের বিমান হামলায় কয়েকজন হৌথি কমান্ডারসহ ১৮ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে নিহতদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশুসহ বেসামরিক নাগরিক বলে দাবি হৌথিদের। এদিকে ইয়েমেনে সৌদি আরবের নেতৃত্বে সামরিক হস্তক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেছে ইরান। তারা একে ‘আমেরিকার মদদপুষ্ট বিপজ্জনক পদক্ষেপ’ বলে বর্ণনা করেছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ অবিলম্বে হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

সৌদি আরবের নেতৃত্বে ইয়েমেনের হৌথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় সময় বুধবার প্রথম হামলা চালায় উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর জোট জিসিসি। আমেরিকায় নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত আদেল আল-জুবায়ের জানান, বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় ইয়েমেনের রাজধানী সানায় প্রথম বিমান হামলা চালানো হয়। আদেল আল-জুবায়ের বলেন, ‘ইয়েমেনের বৈধ সরকারকে সমর্থন দিতে সরকারের পক্ষে এবং দেশ দখলে উন্মত্ত হৌথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে এই অভিযান।

ইয়েমেনের সেনাবাহিনী বলেছে, হৌথি নিয়ন্ত্রিত সানার বিভিন্ন অবস্থানে বিমান হামলার ঘটনা ঘটেছে। জানুয়ারি থেকে বিদ্রোহীদের দখলে থাকা প্রেসিডেন্ট ভবনেও হামলা হয়েছে। বাদ যায়নি সানা বিমানবন্দরও। প্রেসিডেন্ট হাদির নিজ শহর এডেনের দক্ষিণে আল আনাদ বিমানবন্দরেও বুধবার বিমান হামলা চালিয়েছে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট। আমেরিকা এই সামরিক পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে এই বিশেষ অভিযানে সরাসরি অংশ নেয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন। বৃহস্পতিবার ব্রিটেনও সৌদি আরবের নেতৃত্বে ইয়েমেনে এই হামলাকে স্বাগত জানালেও রাজনৈতিক সমাধানের ওপরই জোর দিয়েছে। এই হামলায় সৌদি আরবের সাথে অংশ নিচ্ছে উপসাগরীয় দেশ কুয়েত, কাতার, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। এছাড়া পাকিস্তান, মিসর, জর্ডান, মরক্কো ও সুদান এই পাঁচটি দেশ উপসাগরীয় সামরিক জোটের হামলায় অংশগ্রহণের ইচ্ছা পোষণ করেছে। বৃহস্পতিবার জর্ডান নিজেদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে।

প্রথম দিনের এসব হামলায় অন্তত ১৮ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত তিনজন হৌথি সেনা কমান্ডার বলে জানা গেছে। এছাড়া আরো ২৪ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে হৌথি-চালিত সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এক বিবৃতিতে হৌথিরা স্বীকার করেছে, সানায় তাদের সেনাঘাঁটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে সৌদি আরব। পাল্টা হামলায় তারা বিমানবিধ্বংসী মিসাইল ছুড়েছে বলে দাবি করেছে। এ ধরনের সামরিক অভিযানের মধ্য দিয়ে ইয়েমেনে যুদ্ধ ঘোষণা করা হলো বলেও মন্তব্য করেছেন হৌথির পুলিশ বিভাগের এক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল-বোখাইতি।

এদিকে পারস্য অঞ্চলের প্রভাবশালী দেশ ইরান ইয়েমেনে শিয়া হৌথিগোষ্ঠীর ওপর সৌদি নেতৃত্বাধীন হামলাকে ‘আমেরিকার মদদপুষ্ট বিপজ্জনক পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করে এর কঠোর নিন্দা জানিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারজিয়া আফখাম বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেন, এসব হামলা ইয়েমেনের পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলবে এবং দেশটির সঙ্কটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের সম্ভাবনাগুলোকে বিনষ্ট করবে। ইয়েমেনে সৌদি আগ্রাসনের ফলে এই অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রতা ছড়িয়ে পড়বে বলেও আফখাম হুশিয়ার করেন। এদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ ইয়েমেনে দ্রুত সামরিক আগ্রাসন বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। তিনি ইয়েমেনে সৌদি সামরিক অভিযানকে ইয়েমেনের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, ইয়েমেনের বিরুদ্ধে এই সামরিক অভিযান কেবল রক্তই ঝরাবে। ইরান ইয়েমেনের সংকট নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা চালাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ইয়েমেনে আল-কায়েদা ও আইএসের মতো সন্ত্রাসীদের হয়ে না খেলতে আঞ্চলিক ও পশ্চিমা সরকারগুলোকেও সতর্ক করে দেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এদিকে সবশেষ খবর অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট মানসুর হাদির অনুগত সেনারা বৃহস্পতিবার এডেনের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পুনরায় নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। নিরাপত্তা সূত্রে বলা হয়েছে, বিমানবন্দর দখলের একদিন পর সরকারপন্থী বাহিনী সেখান থেকে শিয়া হৌথি বিদ্রোহীদের হটিয়ে তা পুনরায় নিয়ন্ত্রণে নেয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি ছবিতে প্রেসিডেন্ট হাদি অনুগত বেশকিছু মিলিশিয়াকে বিমানবন্দরের বাইরে অবস্থান করতে দেখা গেছে। তবে তাদের পরনে কোনো সামরিক পোশাক ছিল না। এর আগে বুধবার এডেনে হৌথিদের হামলা শুরুর পর প্রেসিডেন্ট প্যালেস ছেড়ে ‘নিরাপদ স্থানে’ চলে যান হাদি। তিনি এখন কোথায় আছেন, তা জানা যায়নি।