ইসির সংলাপে যাবে বিএনপি, চলছে প্রস্তুতি

 

স্টাফ রিপোর্টার: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আগামী মাসে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংলাপে যোগ দিবে বিএনপি। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এ সময় বেশ কিছু প্রস্তাব দিবে দলটি। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন যাতে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে পারে, সেই জন্য একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রয়োজনীতার কথা তুলে ধরবে তারা। ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকে এরই মধ্যে জানানো হয়েছে, আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশের নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম, পর্যবেক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মধ্য জুলাই থেকে সংলাপ শুরু করবে নির্বাচন কমিশন। এই সংলাপ চলবে চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত। সংলাপে সীমানা পুনঃনির্ধারণ, আইন সংস্কার, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নতুন নিবন্ধন, ভোটকেন্দ্র ইসির সক্ষমতা বাড়ানো ও সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি নিয়ে আলোচনা হবে।

বিএনপি সূত্রমতে, ইসির সঙ্গে সংলাপে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। সংলাপে বিএনপি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সংলাপের জন্য এরই মধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে দলটি। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিএনপি ইসিকে একটি প্রস্তাবনা দিবে। এই প্রস্তাবনা তৈরির কাজ করছেন দলের নীতি-নির্ধারণী ফোরাম এবং এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ কয়েকজন নেতার পাশাপাশি এ ঘরানার কয়েকজন বুদ্ধিজীবী।

বিএনপি সূত্রমতে, সংলাপে নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করতে গণপ্রতিনিধিত্ব আইনের (আরপিও) পাঁচটি ধারা সংশোধনের প্রস্তাব করবে বিএনপি। এছাড়া নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করতে কমিশনের নিজস্ব সচিবালয় গঠন, কমিশনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিতকরণ, কমিশনের আর্থিক স্বাধীনতা, দলীয় মনোভাবাপন্ন নির্বাচনী কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে তাদের অপসারণ, নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণার পর থেকে নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ পর্যন্ত সরকারের স্বরাষ্ট্র, অর্থ, তথ্য, জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার, শিক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা, পররাষ্ট্র, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখা, নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ প্রভৃতি বিষয় থাকবে প্রস্তাবনায়। পাশাপাশি ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও নতুন ভোটার তালিকা নিবন্ধীকরণযোগ্য সব নাগরিক, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, কারাবন্দি ও নানা মামলায় যুক্ত ব্যক্তিদের ও নেতা-কর্মীদের ভোটার করার বিষয়ে প্রস্তাব থাকবে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন সময়ে প্রতিরক্ষা বাহিনী মোতায়েন ও তাদের ম্যাজিস্টেরিয়াল ক্ষমতা প্রদানের দাবী জানানো হবে। প্রস্তাবনায় নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার নূ্যনতম তিন বছরের পূর্বে নির্বাচনী পর্যবেক্ষক সংস্থাকে দেশের প্রচলিত আইন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্বারা নিবন্ধিত হতে হবে। রাজনৈতিক দলের প্রকাশ্যে আনুগত্যপোষণকারী কোনো প্রতিষ্ঠানকে পর্যবেক্ষক করা যাবে না। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার নূ্যনপক্ষে একমাস আগে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা বা ব্যক্তিকে তালিকাভুক্ত করা, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার ৭ দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের তালিকাভুক্ত জাতীয় ও স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থার নাম ও পরিচয় এবং তাঁদের মনোনীত পর্যবেক্ষকদের নাম ও তালিকা প্রকাশ করতে হবে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে নির্বাচন অনুষ্ঠানের নূ্যনপক্ষে ৭ দিন আগে আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিদেশি পর্যবেক্ষক সংস্থা এবং বিদেশি রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়োজিত পর্যবেক্ষকদের নাম ও তালিকা প্রকাশ করতে হবে।

নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ইসির সংলাপে যোগ দেবে বিএনপি। সেখানে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা কিছু বলা দরকার, তা বলা হবে। এ ব্যাপারে একটি প্রস্তাবনা দেয়া হবে। নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করার বিষয়ে আগেই বিএনপি মতামত দিয়েছে। তার সঙ্গে হয়তো আরও কিছু যোগ হবে। এছাড়া ইভিএম-এর বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়ায় এ বিষয়ে আলোচনার আর প্রয়োজন হবে না।