ইসলামবিরোধী প্রচারণার কারণেই খুন কথিত পীরসহ ৬ জন উগ্র ধর্মীয় জঙ্গিরাই খুনি

স্টাফ রিপোর্টার: আলোচিত সিক্স মার্ডারের ঘটনায় দুই ক্লু নিয়ে মাঠে নেমেছেন গোয়েন্দারা। ধর্মীয় মতাদর্শের জের ধরে নৃশংস এ ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। একই সাথে ব্যক্তিগত বিরোধ ও সম্পত্তির কারণে কেউ এ খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে  কি-না তা-ও খুঁজে দেখছেন তারা। নিহতদের পরিবারের সদস্যরাও বলছেন একই কথা। ধারণা করা হচ্ছে, ঘাতকরা সবাই কোনো একটি উগ্রপন্থি দলের সদস্য। তারা মুরিদ সেজে ওই বাসায় ঢুকে নির্মমভাবে ইমাম মাহদীর কথিত সেনাপতি লুৎফর রহমান ফারুক ও তার ছেলে সরোয়ার ইসলাম ফারুক ওরফে মনিরসহ ৬ জনকে গলা কেটে খুন করে।

ইসলাম ও শরিয়তবিরোধী প্রচারণার কারণেই খুন হয়েছেন ইমাম মাহদির প্রধান সেনাপতি দাবিদার হিজবুল মাহদীর প্রেসিডেন্ট লুৎফর রহমান ফারুক ও তার সহযোগীরা। ধর্মীয় উগ্রপন্থিচক্র এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়ে থাকতে পারে বলে গোয়েন্দাদের সন্দেহ। দীর্ঘদিন আগেই চক্রটি লুৎফর রহমান ফারুক ও তার অনুসারীদের হত্যার পরিকল্পনা আঁটে। অবশেষে সময় বুঝে তারা পরিকল্পিত এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়। প্রাথমিক তদন্তে এমনটি ধারণা করছেন গোয়েন্দারা।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেছেন, ঘাতকরা সবাই প্রশিক্ষিত। পশু জবাইয়ের সময় যেমন পশ্চিম দিকে মাথা হেলানো থাকে ঘাতকরা তেমনভাবেই একে একে সবাইকে জবাই করে খুন করে। লাশ উদ্ধারের সময় পুলিশ প্রত্যেকটি মৃতদেহের মাথাগুলো তারা পশ্চিম দিকে হেলানো দেখতে পান। এছাড়া খুনে পর ঘাতকরা রক্তাক্ত ছুরি তাদের সাথেই নিয়ে যায়। হত্যার ঘটনাটিকে ‘ক্লুলেস’ করতে মুছে দিয়ে যায় হাতের ছাপসহ বিভিন্ন চিহ্ন। এ থেকেই গোয়েন্দাদের ধারণা, ধর্মীয় উগ্রপন্থি প্রশিক্ষিত চক্র লোমহর্ষক এ ছয় খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে যারাই এ খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে তারা ‘ধূর্ত’ প্রকৃতির বলে ধারণা করছেন গোয়েন্দারা।

গত শনিবার সন্ধ্যায় লোমহর্ষক ওই খুনের ঘটনার পর গভীররাতে ওয়ারি থানায় মামলা করেছেন নিহতের ছোট ছেলে আবদুল্লাহ-আল ফারুক। রোববার চাঞ্চল্যকর ওই ছয় খুনের মামলার তদন্তভার দেয়া হয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে। রোববার রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ওই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ওয়ারি থানা পুলিশ।

কে এই ফারুক: লুৎফর রহমান ফারুকের বাড়ি টাঙ্গাইলের ভুয়াপুরের চরবরুরি গ্রামে। তার পিতার নাম হোসেন আলী জোয়ার্দার। ওই ঘটনায় নিহত তার বড় ছেলে সরোয়ারুল ইসলাম ফারুক ওরফে মনির সিটি ব্যাংকের সদরঘাট শাখায় কর্মরত ছিলেন।

জানা গেছে, ২০০৪ সালে লুৎফর রহমান ফারুক নিজেকে ইমাম মাহদির প্রধান সেনাপতি ঘোষণা দেন। এরপর তিনি শরিয়তের নিয়মানুযায়ী নামাজ আদায়ের বিরোধিতা করে নানামুখি অপপ্রচারে লিপ্ত হন। গড়ে তোলেন হিজবুল মাহদি নামে তথাকথিত ইসলামী সংগঠন। এর জের ধরে তার নিজের এলাকায় টাঙ্গাইল জেলার ভুয়াপুরের লোকজন তাকে পিটিয়ে সপরিবারে এলাকা ছাড়া করে। পরে সপরিবারে তিনি ঢাকার ওয়ারি এলাকার গোপীবাগে আস্তানা গাড়েন। কথিত ইমাম মাহদির প্রধান সেনাপতি দাবিদার লুৎফর রহমান ফারুক দিনে দু ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতেন। নামাজের মধ্যে তিনি সেজদা দিতেন না। ইসলাম ধর্ম অনুসারে নামাজ আদায়ও করতেন না। তার অনুসারীরাও তাকে অনুসরণ করতেন। ইসলাম বিদ্বেষী বেশ কিছু বইও তিনি প্রকাশ করেন। এর মধ্যে ইমাম মাহদি, দাজ্জাল, ইয়াজুজ-মাজুজ ও শরিয়তে মাহদির কথা নামক বই উল্লেখযোগ্য। তবে এ বাসার ভাড়া মাসে ২৪ হাজার টাকা এবং লক্ষাধিক টাকা খরচের প্রকৃত উৎসও রহস্যজনক।