ইরাকে বিমান হামলা শুরু যুক্তরাষ্ট্রের : অভিযানে ওবামার অনুমোদন

মাথাভাঙ্গা মনিটর: ইরাকে দুটি যুদ্ধবিমান দিয়ে হামলা শুরু করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। গতকালইরাকের জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের সদস্যদের ওপর এই হামলা চালানো হয়।মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। হামলায়হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে সীমিত আকারেহামলা চালানোর অনুমতি দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এছাড়াজঙ্গিদের অবরোধের মধ্যে থাকা ইয়াজিদি সমপ্রদায়ের কয়েক হাজার মানুষের জন্যএরই মধ্যে বিমান থেকে জরুরি সহায়তা ফেলা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

পেন্টাগনজানিয়েছে, ইরাকে কট্টর ইসলামপন্থি গোষ্ঠী আইসিসের বিরুদ্ধে তারা বিমানহামলা চালিয়েছে। পেন্টাগনের প্রেস সেক্রেটারি রিয়াল অ্যাডমিরাল জন কিরবিজানিয়েছেন, কুর্দিস্তানের নিকটবর্তী ইরাকের উত্তরাঞ্চলীয় শহর ইরবিলের কাছেআইসিস’র ভারি অস্ত্র লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি এফ-১৮ যুদ্ধবিমান থেকে২২৫ কেজি ওজনের লেজার গাইডেড বোমা নিক্ষেপ করা হয়। কুর্দি মিলিশিয়াপেশমার্গার যোদ্ধারা আইসিসের হাত থেকে ইরবিল শহর রক্ষার জন্য লড়াই করছে।কিরবি বলেন, আইসিএসের যোদ্ধারা ইরবিলের যে স্থানে কুর্দি যোদ্ধাদেরবিরুদ্ধে ওই ভারি অস্ত্র ব্যবহার করছিলেন তার খুব কাছেই মার্কিনকর্মকর্তাদের অবস্থান।

বৃহস্পতিবার প্রয়োজনে সীমিত বিমান আক্রমণচালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন বারাক ওবামা। নিজের নিরাপত্তা সংক্রান্তউপদেষ্টাদের সাথে আলোচনার পরে এই সিদ্ধান্ত নেন তিনি। পাশাপাশি কোনওপরিস্থিতিতেই ইরাকে মার্কিন সেনা ফিরবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি। এর আগেইপেন্টাগন জানিয়েছিল, সুন্নি জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক অ্যান্ডসিরিয়ার (আইসিস) হামলায় ইরাকের উত্তর-পশ্চিমে সিনজার পর্বতে আশ্রয় নেয়াইয়াজিদি সম্পদায়ের খ্রিস্টানদের জন্য বিমান থেকে ত্রাণসামগ্রী ফেলা হয়েছে।দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এই সমপ্র্দায়ের অধিকাংশ মানুষই হয় ক্ষুধা-তৃষ্ণায়, না হলে আইসিস’র অত্যাচারে মারা যেতে পারেন বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশকরেন। বিমান হামলার অনুমতি দিলেও বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, বিশ্বের সব সমস্যার সমাধান করা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু এইপরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র চোখ বুজে বসেও থাকতে পারে না। সিনজার পর্বতেখ্রিস্টানদের গণহত্যা আটকাতে ত্রাণের পাশাপাশি প্রয়োজনে বিমান আক্রমণওজরুরি বলে তিনি জানান।

সিরিয়ার বেশ কিছু অংশে প্রভাব বিস্তার করারপর চলতি বছরের মার্চ থেকে ইরাকের সুন্নি প্রধান অঞ্চলগুলোতে অভিযান শুরুকরে সুন্নি জঙ্গি গোষ্ঠী আইসিস। তাদের ঝড়ের বেগে আক্রমণে উত্তর-পশ্চিম ওপশ্চিম ইরাকের একের পর এক শহরের পতন হয়। সঙ্কটে পড়ে ইরাকের প্রধানমন্ত্রীনুরি আল-মালিকির নেতৃত্বাধীন সরকার। এর পরে নিজেদের দখল করা এলাকা ইসলামিকরাষ্ট্রের পরিচয় দিয়ে খিলাফতের ঘোষণা করে আইসিস। নিজেদের নেতা আবু বকরআল-বাগদাদিকে খলিফা বলেও ঘোষণা করে তারা। এর পরে বেশ কিছুদিন আইসিস’রঅগ্রগতির চেষ্টা লক্ষ করা যায়নি। এর মধ্যে অবশ্য ইরাকের শিয়া প্রধানসরকারের সেনা সংগঠিত হয়ে আইসিসকে পাল্টা আক্রমণ করে। কয়েকটি শহর ইরাকি সেনাপুনর্দখলও করেছিলো। কিন্তু তারপরও ইরাকের একটি বড় অংশ আইসিস’র নিয়ন্ত্রণেথেকে যায়।

আইসিস’র সাথে লড়াইয়ে ইরাকি সেনাকে সাহায্য করতেযুক্তরাষ্ট্র আগেই মার্কিন সামরিক বিশেষজ্ঞ ও সেনার প্রায় ৩শ জনের দলকেইরাকে পাঠিয়েছিলো। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মালিকির বারবার অনুরোধেও আকাশপথেআইসিস জঙ্গিদের উপরে আক্রমণ চালাতে অস্বীকার করেছিলো যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়েমালিকি সরকারের সাথে আমেরিকার সম্পর্কের অবনতিও হয়। এমনকী, মার্কিনসাহায্য না পেয়ে মালিকি, রাশিয়ার কাছ থেকে যুদ্ধবিমান কেনেন। এ বার সেইইরাকেই বিমান হামলার অনুমতি দিলেন ওবামা। এর পেছনে ইরাকের সংখ্যালঘুখ্রিস্টানদের সামপ্রতিক সঙ্কট দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে।