ইরাকের সুন্নি বিদ্রোহীরা আরো একটি শহর দখলে নিয়েছে

 

 

স্টাফ রিপোর্টার: ইরাকের সুন্নি বিদ্রোহীরা দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় আনবার প্রদেশের আরওএকটি শহর দখল করে নিয়েছে। এ নিয়ে গত দু দিনে তারা আনবারের চতুর্থ শহরদখলে নিলো। এদিকে ইরাক পরিস্থিতিতে সেখানকার বাংলাদেশিদের উদ্বিগ্ন না হওয়ার পরামর্শদিয়েছে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়। প্রয়োজন হলে সেখানকার বিপদে পড়াবাংলাদেশিরা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ইরানে আশ্রয় নিতে পারবেন বলে জানিয়েছেনপ্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। গতকাল রোববার সকালে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ‘মাইগ্রেশন ক্রাইসিস অবজারভেশন কমিটি’র বৈঠক শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও আন্তর্জাতিকঅভিবাসন সংস্থার (আইওএম) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকশেষে মন্ত্রী বলেন, ‘ইরানের বাংলাদেশ দূতাবাসের সাথে কথা হয়েছে। তাদেরপ্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে, যাতে বিপদে পড়লে বাংলাদেশিরা সেখানে আশ্রয়নিতে পারেন।’ প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের পূর্ণপ্রস্তুতি রয়েছে। প্রয়োজন হলেই লিবিয়ার মতো ইরাক থেকেও আমরা বাংলাদেশিশ্রমিকদের দেশে ফিরিয়ে আনবো।’

বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব খোন্দকারশওকত হোসেন দুপুরে বলেন, ‘বাগদাদ, নাজাফসহ মূল শহরগুলোতে কোনোসমস্যা নেই। মসুল ও তিরকিতে পরিস্থিতি খারাপ। তবে ইরাকে দু পক্ষের মধ্যেযুদ্ধ হচ্ছে। বাংলাদেশিরা কারও লক্ষ্য নয়। কাজেই বাংলাদেশিদের উদ্বিগ্নহওয়ার কিছু নেই। তবুও আমরা ইরানের বাংলাদেশ দূতাবাসের সাথে কথা বলেছি।পরিস্থিতি খারাপ হলে বাংলাদেশিরা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে সেখানে যেতে পারবেন।এরপর প্রয়োজন হলে আমরা সেখান থেকে তাদের ফিরিয়ে আনবো।’ কর্মকর্তারা বলেছেন, রোববার জর্ডান সীমান্ত থেকে ৯০মাইল দূরে অবস্থিত রুতবা শহরটির ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয় সুন্নিবিদ্রোহীদের জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক এস্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড লেভান্ট (আইএসআইএস)। এর আগে বিদ্রোহীরা সিরিয়া সীমান্তবর্তী একটি এবংপশ্চিমাঞ্চলীয় আরও দুটি শহর দখল করে নেয়।

ইরাক সরকার বলেছে, উত্তরাঞ্চলীয় তিকরিত শহরে সেনাবাহিনী বিমান হামলা চালিয়েছে। এতে অন্তত ৪০জন জঙ্গি নিহত হয়েছে। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছেন, যারা মারা গেছেতারা স্থানীয় সাধারণ বাসিন্দা।বিদ্রোহীদের একজন মুখপাত্র বলেছেন, সুন্নি-অধ্যুষিত আনবার প্রদেশের পুরোটা দখল করাই এখন তাদেরলক্ষ্য। বাগদাদ ও জর্ডানের মাঝখানে রুতবা শহরটির অবস্থান। সামরিক কৌশলগতকারণে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ জায়গা।এর আগে গত শনিবার বিদ্রোহীরা আনবার প্রদেশের ইউফ্রেটিস নদীরতীরবর্তী রাওয়া ও আনাহ শহর দখলে নেয়ার ঘোষণা দেয়। একই দিন ইরাকেরসরকারি কর্মকর্তারা স্বীকার করেন, তুমুল লড়াইয়ের পর ওই প্রদেশের ক্বায়িমশহর দখল করে বিদ্রোহীরা।

বিদ্রোহীরা বলেছে, দখলকৃত চারটি শহর থেকেমোতায়েন করা সরকারি বাহিনীর সদস্যরা পালিয়ে গেছেন। সেখানকার সব সামরিকস্থাপনা বিদ্রোহীদের দখলে রয়েছে।সামরিক বিশ্লেষকেরা বলেছেন, সীমান্তবর্তী শহরগুলো বিদ্রোহীদের দখলে যাওয়ায় তাদের পক্ষে অস্ত্র ওসরঞ্জাম আনা নেয়ার পথ সুগম হবে। এতে তাদের শক্তি বহু গুণ বেড়ে যাবে।আশপাশের শহরে তাদের তত্পরতা সম্প্রসারিত হবে।

ইবরিল শহরে অবস্থানরত বিবিসির সাংবাদিক জিম ম্যুর বলেছেন, বিদ্রোহীরা মনে করছে ইউফ্রেটিস নদীর তীরবর্তী পুরো এলাকা বড় ধরনের সংঘর্ষছাড়াই তাদের দখলে চলে আসবে। কারণ, এসব অঞ্চলে বসবাসরত সুন্নি আদিবাসীরাতাদের পক্ষে রয়েছে।
গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ফালুজা ও রামাদি শহরের অধিকাংশ এলাকা বিদ্রোহীদের দখলে রয়েছে।আইএসআইএসেরএকজন মুখপাত্র বলেছেন, তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য বাগদাদ। এ লক্ষ্যপূরণে তারা এখন পশ্চিম সীমান্ত ও ফালুজার মধ্যবর্তী পুরো এলাকারনিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছেন।