ইমাম ও পীরপন্থিদের বায়াছ চরম উত্তেজনা : প্রশাসনের হস্তক্ষেপ

চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের খাসপাড়ায় মহানবী (স.) নূরের তৈরি না মাটির তৈরি এ নিয়ে মতবিরোধ

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের তিতুদহ খাসপাড়ায় এক পীরের উক্তিতে ইমামের আপস্তিতে দু পক্ষের মধ্যে আয়োজিত বায়াসে অপ্রীতিকর ঘটনার শঙ্কা দেখা দিলেও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত হয়েছে। ওয়াজ মাহফিলের কথা বলে অনুমোদনের পর মহানবী হযরত মোহাম্মাদ (সা.) মাটির নাকি নূরের তৈরি তা নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হলে উত্তেজনা দানা বাধে। বিষয়টি নিয়ে গত ককেদিন ধরেই বিরোধ চলে আসছিলো। গতকাল রোববার সকাল ১০টায় আনুষ্ঠানিক বায়াসের মাধ্যমে প্রকাশ্যে রূপ নিলে সমালোচনারও ঝড় ওঠে। দু পক্ষই ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত দিয়ে কথা না বলার আহ্বান জানিয়ে এক পক্ষ অপর পক্ষকে হুঁশিয়ারও করে।

Nazrul pic (5)

জানা গেছে, তিতুদহ ইউনিয়নের খাসপাড়া গ্রামের সাধারণ মুসল্লিরা ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, কুমিল্লার চাঁদপুর তেতৈয়া গ্রামের মহিবুলের ছেলে নিজেকে পীর বলে দাবি করেন। তিনি খাসপাড়া গ্রামে মাঝে মাঝেই আসেন। এ গ্রামে বেশকিছু ভক্ত অনুরাগীও পেয়েছেন। পীর বলে পরিচয়দাতা শাহ আলম দেড় মাস আগে ভক্ত হযরত আলীর বাড়িতে রাতে ওরসে উপস্থিত হন। গ্রামবাসী অভিযোগ করে বলেছেন, সেখানে তিনি নবী নুরের তৈরি বলে ভক্তদের জানান। এ সময় পার্শ্ববর্তী মসজিদের ইমাম আমিনুল ইসলাম নবী মাটির তৈরি বলে পীরের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে তর্ক শুরু হয়। পীর শাহ আলম বলে বসেন, যে ইমাম নবী মাটির তৈরি বলবে তার পেছনে নামাজ পড়া যাবে না। এ কথায় গ্রামের মুসল্লিদের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দেয়। উভয়পক্ষের মধ্যে বিরোধ দানা বাধে। আনুষ্ঠানিকভাবে আল-কোরআন ও হাদিস উপস্থাপনের মাধ্যমে মহানবীর সৃষ্টি নিয়ে বায়াসের প্রস্তুতি নেয় উভয়পক্ষ। বিষয়টি অনেকটা গোপন রেখে ৪-৫ দিন আগে ইমামসহ মুসল্লিদের পক্ষে মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি গিয়াস উদ্দীন এবং পীরের পক্ষে তিতুদহ ইউনিয়ন জাকেরপাটির সভাপতি ছোবাহান ওয়াজ মাহফিলের নামে প্রশাসনের নিকট থেকে অনুমতি নেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। বিল্লাল হোসেনের সভাপতিত্বে গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে খাসপাড়ার পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদ মাঠে বায়াস অনুষ্ঠান শুরু হয়। ইমামের যুক্তির পক্ষে বাইসে অংশ নেন খুলনা থেকে আগত আহলে ওয়াল সুন্নাতের (ওলামে দেওবান) মুফতি গোলাম রহমান, আব্দুল হামিদ, গোলামুর রহমান, মোস্তফা কামাল কাছেমি, জুনায়েদসহ বেশ কিছু আলেম। পীর শাহ আলমের পক্ষে অংশ নেন খুলনা ও চুয়াডাঙ্গা থেকে আগত আহালে সুন্নাত ওয়াল জামাত ও বিশ্ব জাকের মঞ্জিল দরবার শরিফের মুফতি আলাউদ্দীন জিহাদি, আলহাজ মাও. হারুন অর রশিদ নুরি, মাসুম বিল্লাহ, মুফতি মাও. আব্দুস সালামসহ বেশ কয়েকজন। উভয়পক্ষ যখন নিজেদের মধ্যকার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে থাকেন তখন উপস্থিত ভক্তদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয় এবং পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকে। উত্তেজনা যখন অপ্রীতিকর পরিস্থিতির দিকে গড়াতে শুরু করে তখনই তথা ১২টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর এসিল্যান্ড নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বদিউজ্জামান, সদর থানার অফিসার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী, সদর থানার ওসি (তদন্ত) কামরুজ্জামান সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে হাজির হন বায়সের আয়োজনে। আয়োজন দ্রুত বাতিল কলে পরিস্থিতি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়।

এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পক্ষের নিকট এ ধরনের অনুষ্ঠানের অনুমতিপত্র দেখতে চাইলে তারা তা দেখাতে ব্যর্থ হয়। এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ লিয়াকত আলী, বলেন ধর্মীয় বিষয়ে বিতর্ক অনুষ্ঠোনের কোনো অনুমতি দেয়া হয়নি। ওয়াজ মাহফিলের জন্য অনুমতি দেয়া হয়েছে। গ্রামবাসী অভিযোগ করে বলেন, পৈত্রিকভাবে পীরত্ব পেয়েছে বলে দাবিদার কথিত পীর শাহ আলমের আরো কিছু মন্তব্য আপত্তিকর হওয়ায় তার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ ব্যাপারে পীর শাহ আলমের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ পীরত্ব বংশানুক্রমে আমি পেয়েছি। আমি কাদরিয়া তরিকাপন্থি পীর।

মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) নিয়ে বিতর্কের আয়োজনে সাধারণ মুসল্লিদের মধ্যে আয়োজকদের সমালোচনার মধ্যে পড়তে হয়। উভয়পক্ষই একে অপরপক্ষকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত না করার জন্য হুঁশিয়ার উচ্চারণ করে।