ইবি খুলতে বাধা অবরোধ!

ইবি প্রতিনিধি: দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ক্যাম্পাস খুলে আবার দ্বিতীয় দফায় বন্ধ হওয়ার পর ১৪ দিন পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে এলে ক্যাম্পাস খুলে দেয়া হবে। অন্যথায় হরতাল, অবরোধ যতোদিন চলবে ততোদিন পর্যন্ত ক্যাম্পাস বন্ধ থাকবে। এর আগে দীর্ঘ ৩৭ দিন বন্ধ থাকার পর গত ৮ জানুয়ারি কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসিক হল খুলে দেয়। পরদিন কর্তৃপক্ষ অনিবার্য কারণ দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে এবং শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়। তবে জানা গেছে, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ থাকলেও প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৩০ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসচাপায় এক ছাত্র নিহতের জের ধরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে। অনির্ধারিত ছুটি ২৪ দিন ও শীতকালীন ছুটি শেষে ৩৭ দিন পর গত ৮ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া হয়। একদিন আগে ৭ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আবাসিক হল খুলে দেয়া হয়। ৯ জানুয়ারি ২০ দলীয় জোটের ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধ সমর্থনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে মিছিল বের করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবির। মিছিলে পুলিশের সাথে শিবিরের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ওই দিন রাতে এক জরুরি সিন্ডিকেটের সভা ডেকে কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ থাকলেও প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছে।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি ও শিক্ষক-কর্মকর্তারা পুলিশ পাহারায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহনে করে ক্যাম্পাসে এসে অফিস করলেও কবে নাগাদ আবাসিক হল খুলে দেয়া হবে এবং ক্লাস পরীক্ষা চালু হবে এ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছে শিক্ষার্থীরা। দেখা দিয়েছে ভয়াবহ সেশনজট। জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের গুটি কয়েক বিভাগ বাদে অধিকাংশ বিভাগে দেড় থেকে দু বছরের সেশনজট বিরাজ করছে। কয়েকটি বিভাগে তিন থেকে চার বছরের সেশনজট রয়েছে। নীলফামারী থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেন, বাড়ি থেকে পড়াশোনার মোটেও হচ্ছে না। ক্লাস পরীক্ষা না হোক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি আবাসিক হলগুলো খুলে দিত তাহলেও তো আমরা অন্তত হলে থেকে লেখাপড়া করে সময় কাটাতে পারতাম।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিবেশ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আবাসিক হল খুলে দেয়া হবে না। ফলে ওই সময় পর্যন্ত ক্লাস পরীক্ষা হওয়ারও কোনো সম্ভাবনা নেই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা বলেন, হরতাল-অবরোধের কারণে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ শহর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে বাস চলাচল না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা ক্যাম্পাসে আসতে পারেন না। একই কারণে ক্লাস পরীক্ষা নেয়াও সম্ভব হয় না। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, যদি ক্লাস পরীক্ষাই না হয় তাহলে আবাসিক হল খুলে দিয়ে লাভ কী?

উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকার বলেন, অবস্থানগত কারণ ও বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিবহন নির্ভরশীল হওয়ায় হরতাল-অবরোধ চলাকালে ক্লাস পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয় না। ইতোমধ্যে ক্যাম্পাস খুলে দিয়ে একটি ঘটনা ঘটে গেছে। আমরা চাই না একই ঘটনার আবার পুনরাবৃত্তি হোক। বর্তমান অবস্থায় ক্যাম্পাস খুলে দিলে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিঘ্ন ঘটবে। তাই দেশের চলমান রাজনীতিতে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে না আসা পর্যন্ত ক্লাস পরীক্ষা ও আবাসিক হল বন্ধ থাকবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া মাত্র হল খুলে দেয়া হবে এবং পরদিন থেকে ক্লাস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।